ফেনী জেলার ছাগলনাইয়া থানার ওসি এমএম মোরশেদ ও উপপরিদর্শক (এসআই) আলমগীর হোসেনের বিরুদ্ধে অভিযোগের শেষ নেই। তাদের দাপটে অস্থির এখানকার বাসিন্দারা। টাকা খেয়ে মামলা না নেওয়া, মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়াসহ বিস্তর অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। হয়রানির ভয়ে ভুক্তভোগী অনেকে মুখ খুলতে চান না। তবে এ নিয়ে সরব হয়েছেন স্থানীয় এক ব্যবসায়ী ও এক গৃহবধূ।
এনায়েত উল্যাহ নামে পৌরসভার বাঁশপাড়ার মিয়াজীবাড়ির ওই ব্যবসায়ীর অভিযোগ, জমিজমা নিয়ে বিরোধে প্রতিপক্ষের লোকজন সম্প্রতি তার ১০ কক্ষের টিনের ভাড়াঘর আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়। এ নিয়ে ছাগলনাইয়া থানায় অভিযোগও করেন তিনি। কিন্তু পুলিশ মামলা নেয়নি। এরই মধ্যে আগের ওসি বদলি হয়ে অন্যত্র চলে যান। চলতি মাসের ৪ তারিখে নতুন ওসি এমএম মোরশেদ থানায় যোগদান করেন। তাকে জানালে তিনিও মামলা নিতে গড়িমসি করেন। বাধ্য হয়ে তার মা হাছিনা বেগম ফেনীর আমলি আদালতে একটি পিটিশন মামলা করেন।
এনায়েত উল্যাহ জানান, আদালতে মামলা হওয়ার খবরে প্রতিবেশীর আত্মীয় হুমায়ুনের নেতৃত্বে একদল সন্ত্রাসী ৪ জানুয়ারি রাতে তার বাড়িতে হামলা চালায়। বিষয়টি পুলিশকে জানালেও তারা সাড়া দেয়নি। উপায় না দেখে তিনি ফেনীর পুলিশ সুপারকে জানান। পরে ছাগলনাইয়া থানার ওসি (তদন্ত) জিলানী ও এসআই আলমগীর কয়েকজন কনস্টেবল নিয়ে তার বাড়িতে আসেন। পরদিন ওসি মোরশেদ থানায় যোগদান করে সকালেই এসআই আলমগীরকে নিয়ে তার বাড়ি পরিদর্শন করে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন এবং তাকে থানায় যেতে বলেন।
এনায়েত উল্যাহর দাবি- এসআই আলমগীরের ফোন পেয়ে পরদিন থানায় যান তিনি। এ সময় এসআই বলেন, আদালতের পিটিশন মামলাটি এফআইআর করতে হলে পুলিশ সুপার, ওসিসহ সবাইকে টাকা দিতে হবে। এ জন্য দুই লাখ ১০ হাজার টাকা লাগবে। বাধ্য হয়ে তিনি দাবিকৃত টাকা পরিশোধ করেন। কিন্তু আজ পর্যন্ত মামলাটি এফআইআরভুক্ত করা হয়নি। ১০ দিন ধরে থানায় ধরনা দিয়েও মামলা নথিভুক্ত করতে না পেরে তিনি টাকা ফেরত চান। এতেও সাড়া দেননি ওসি ও এসআই। সশরীরে গিয়ে ব্যর্থ হয়ে রাতদিন ওসি ও এসআইকে ফোন দিয়ে টাকা ফেরত চান তিনি। এসআই আলমগীরকে ফোন দিলে তিনি ওসির সঙ্গে কথা বলতে বলেন। আবার ওসির সঙ্গে কথা বলে টাকা চাইলে তিনি অকথ্য ভাষায় গালাগাল করে ফোন কেটে দেন। বেশি বাড়াবাড়ি করলে তার এসএসসি পরীক্ষার্থী ছোট ভাইসহ পরিবারের সবাইকে মিথ্যা মামলা দিয়ে ফাঁসানোরও হুমকি দেন ওসি। এ ঘটনায় মানবাধিকার কমিশনসহ বিভিন্ন স্থানে অভিযোগ করেন তিনি।
ব্যবসায়ী এনায়েতের আরও অভিযোগ- গত ১১ জানুয়ারি ওসি মোরশেদ তার পরিবারের সবাইকে থানায় ডেকে নিয়ে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করে বিবাদীদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই মর্মে লিখিত নিয়ে থানা থেকে বের করে দেন। কান্নাজড়িত কণ্ঠে এই প্রতিবেদককে তিনি বলেন, আইনের আশ্রয় নিতে গিয়ে নিজেই এখন আইনের মারপ্যাঁচে আটকে গেছেন।
ওসি মোরশেদ ও এসআই আলমগীরের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা অভিযোগ অস্বীকার করেন। টাকা নিয়ে হুমকি দেওয়ার বিষয়ে এসআই আলমগীরের কাছে জানতে চাইলে তিনি ওসির সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন। ওসির কাছে জানতে চাইলে তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, এনায়েত কাকে টাকা দিয়েছেন, তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন।
অভিযোগ প্রসঙ্গে ফেনী জেলা পুলিশ সুপার জাহাঙ্গীর আলম সরকারের কাছে বারবার ফোন দিলেও তিনি ফোন ধরেননি। মোবাইলে এসএমএস দিলেও তিনি সাড়া দেননি।
অপর অভিযোগ উপজেলার রাধানগর ইউনিয়নের নাছিরা দীঘির দুই সন্তানের জননী রুমা আক্তারের। গত ১১ জানুয়ারি যৌতুকের জন্য স্বামীর নির্যাতনের শিকার হয়ে থানায় অভিযোগ দেন রুমা। ওসি মোরশেদের নির্দেশে এসআই আলমগীর পৌরসভার থানাপাড়ার আঁখি ভবনের ভাড়া বাসা থেকে রুমার স্বামী আজিজুল হক বাবুলকে আটক করে থানায় নিয়ে আসেন। রুমার মা নুরের চশমা বাবুলের বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়ে মামলা নথিভুক্ত করতে বলেন। এ সময় তাকে এসআই আলমগীর জানান, মামলা নথিভুক্ত করতে হলে পুলিশকে ২০ হাজার টাকা দিতে হবে। অনেক কষ্টে সেই টাকা জোগাড় করে সেদিনই তারা এসআই আলমগীরের হাতে তুলে দেন। কিন্তু পুলিশ মামলা না নিয়ে বাবুলকে পরদিন হাজত থেকে ছেড়ে দেয়।
নির্যাতিত রুমা কান্নায় ভেঙে পড়ে গণমাধ্যমকে বলেন, স্বামী প্রতিনিয়ত তার কাছে যৌতুক দাবি করে। চাহিদামতো টাকা না পেয়ে গরম লোহার ছেঁকাসহ নানাভাবে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করে আসছে বাবুল। অথচ আইনের আশ্রয়ে গিয়ে এর কোনো প্রতিকার পাননি। রুমা বলেন, থানা থেকে ছাড়া পেয়ে বাবুল তাকে ও তার একমাত্র ভাই সোহাগকে প্রয়োজনে লাখ টাকা খরচ করে হলেও মেরে ফেলার হুমকি দেয়।
টাকা নিয়েও মামলা না নিয়ে আসামিকে ছেড়ে দেওয়ার বিষয়ে এসআই আলমগীর গণমাধ্যমকে বলেন, ‘বিষয়টি ওসি স্যার জানেন।’ বরাবরের মতোই অভিযোগ অস্বীকার করেন ওসি মোরশেদ। তার সাফ জবাব- ‘রুমা ও তার পরিবার মিথ্যা বলেছে।’ সূত্র : সমকাল