গাড়ী চালানোর সময় ফেসবুকার ও টিকটকার কর্তৃক চালককে বেপরোয়া ও দ্রুতগতিতে গাড়ি চালানোর জন্য উৎসাহ প্রদান এবং উদ্বুদ্ধকরণ থেকে বিরত থাকতে এবং দৃশ্য ভিডিও ধারণ নিষিদ্ধ করতে ১৬টি বাস কোম্পানিকে লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়েছে।
জনস্বার্থে গত বৃহস্পতিবার (৬ অক্টোবর) ৯ জন আইনজীবী এ নোটিশ প্রেরণ করেন। নোটিশ প্রেরণকারী আইনজীবীরা হলেন- সুপ্রিম কোর্টের অ্যাডভোকেট এস. এম. জাবিরুল হক কাজল, মো. মেহেদী হাসান, মো. হুমায়ূন কবির সরকার, আদলু সাইন, মুশফিকুর রহমান সেতু, আবু তাহের রনি এবং ঢাকা জজ কোর্টের অ্যাডভোকেট এইচ. এম. রাশিদুল ইসলাম রাশেদ, মো. ওবায়দুল্লাহ কাজী ও মো. মিলন হোসেন।
নোটিশ গ্রহীতা ১৬ বাস কোম্পানি হলো- হানিফ এন্টারপ্রাইজ, শ্যামলী এন. আর. ট্রাভেলার্স, গ্রীন লাইন পরিবহন, এস. আর. ট্রাভেলস (প্রা.) লি., এনা ট্রান্সপোর্ট (প্রা.) লি., নাবিল পরিবহন, বাবলু এন্টারপ্রাইজ, সোহাগ পরিবহন (প্রা.) লি., সেন্টমার্টিন পরিবহন, সৌদিয়া পরিবহন, ইউনিক সার্ভিস, গোল্ডেন লাইন পরিবহন, দেশ ট্রাভেলস, টি আর ট্রাভেলস, সাকুরা পরিবহন (প্রা.) লিমিটেড এবং ইমাদ এন্টারপ্রাইজ।
নোটিশ প্রেরণকারীদের মধ্যে অন্যতম আইনজীবী মো. মেহেদী হাসান ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকম-কে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
নোটিশে বলা হয়, বাংলাদেশের চলমান সড়ক ও মহাসড়কে উপর্যুক্ত প্রতিষ্ঠানসমূহের বাস সহ বিভিন্ন ধরণের পরিবহনসমূহ যাত্রী সেবায় নিয়োজিত থেকে দেশের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলছে।
সম্প্রতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে- ঢাকা থেকে দূরপাল্লার যাত্রীবাহী পরিবহন সেবায় চলমান বাসসমুহে কিছু চালক বেপরোয়াভাবে দ্রুতগতিতে গাড়ী চালানোর কারনে বিভিন্ন সময়ে অনেক দুর্ঘটনা ঘটেছে। এমনকি এসব দুর্ঘটনায় অনেক যাত্রী পঙ্গু হওয়া সহ নিহত পর্যন্ত হয়েছে এবং পরিবহনসমূহেরও অপূরণীয় ক্ষতি সাধিত হয়েছে।
উল্লেখ্য যে, গাড়ী চালকদের বেপরয়াভাবে গাড়ী চালানোর পিছনে একটি স্বার্থান্বেষী মহল গাড়ী চালকদের বিভিন্ন সময়ে প্ররোচিত ও উৎসাহিত করে চলেছে এবং মহাসড়কে বাস দিয়ে বাউলিবাজীতে মেতে উঠেছে। এই স্বার্থান্বেষী মহলের অধিকাংশ ফেসবুক ও টিকটক ব্যবহার করেন এবং এইসব ব্যক্তি ফেসবুক টিকটক ছাড়াও অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়াতে একাউন্ট/চ্যানেল খুলে চালকদের দ্রুত গাড়ী চালানোর উৎসাহ প্রদান সহ দৃশ্য ভিডিও ধারণ করে ফেসবুকের গ্রুপ ও পেজে এবং টিকটকসহ অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়াতে প্রকাশের মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করছে।
যেহেতু ফেসবুকার ও টিকটকাররা নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য বাস চালকদের মধ্যে এক অসুস্থ প্রতিযোগীতার পরিবেশ তৈরি করে চলেছে এবং চালকরা গাড়ী চালানোর সময় ফেসবুকার ও টিকটকাররা চালকের পাশে বসে বেপরোয়াভাবে দ্রুতগতিতে গাড়ী চালানোসহ বাস চালকদের উসকে দিয়ে বারবার হর্ন বাজানো, ওভারটেকিং, বাউলি দেওয়া, ওটি দেওয়া, ডিপার লাইট দেওয়া, হার্ড ব্রেকিং করাসহ বিভিন্নভাবে উৎসাহিত ও উদ্বুদ্ধ করে চলছে যা ফেসবুকের বিভিন্ন গ্রুপ, পেজ ইউটিউব ও টিকটকের ভিডিও ছবি থেকে সুস্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয়।
চলতি বছরের গত ১৬ সেপ্টেম্বর রাতের একটি ভয়াবহ দুর্ঘটনার ভিডিও থেকে পরিলক্ষিত হয়, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে কুমিল্লার দাউদকান্দি এলাকায় হানিফ পরিবহনের একজন চালক রাতে যাত্রীবাহী গাড়ী চালনা করছিলেন এবং চালকের পাশে থেকে কিছু ফেসবুকার ও টিকটকার চালককে বেপরোয়াভাবে দ্রুতগতিতে চলানোর উৎসাহ করতে থাকলে চালক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সামনে চলমান ট্রাকটিকে বাউলি/ওভারটেকিং করতে গিওয়ে পিছন থেকে ট্রাকটিকে ধাক্কা দেয় এবং ট্রাকটি তৎক্ষণাৎ উলটে যায়। হানিফ পরিবহনের পিছনে থাকা ইমাদ পরিবহনের বাস চালককেও ফেসবুকার ও টিকটকাররা বেপরোয়াভাবে দ্রুতগতিতে গাড়ী চালাতে উৎসাহিত করছিল বলে ভিডিওতে স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয়।
সড়ক ও মহাসড়কে দ্রুতগতিতে বেপরোয়াভাবে গাড়ী চালানো এবং ফেসবুকার ও টিকটকার কর্তৃক চালকদের ওভারটেকিং, বাউলিং, ডিপার লাইট দেওয়াসহ ওটি দিয়ে উদ্বুদ্ধ ও উৎসাহিত করা হচ্ছে যা সড়ক পরিবহন আইন, ২০১৮ সহ প্রচলিত আইন বিরোধী বটে।
এছাড়াও নোটিশে দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণ ও বাস পরিবহন সমূহের ক্ষয়-ক্ষতি রোধকল্পে ৩টি মতামত প্রদান করা হয়। মতামতসমূহ নিম্নরূপ-
১. গাড়ীর গতিসীমা সর্বোচ্চ ৮০ কিলোমিটার প্রতি ঘন্টায় রাখার জন্য প্রতিটি বাসে ডিজিটাল স্পিড মিটার/অ্যাপস স্থাপন করা।
২. চালকের পাশে ইঞ্জিন কাভারের উপরে কোন যাত্রীসহ ফেসবুকার ও টিকটকার যেন ভিডিও ধারণ করতে না পারে এবং বসতে না পারে। সেই সাথে চালককে গাড়ী চালানোর সময় প্ররোচিত করতে না পারে সেই মর্মে সহজে পর্যবেক্ষণের জন্য ক্লোজ সার্কিট (সিসি) ক্যামেরা স্থাপন করা।
৩. যাত্রীদের জীবন, মাল ও সম্পদের নিরাপত্তার স্বার্থে টিকিট ও নির্দিষ্ট কাউন্টার ব্যতীত যাত্রী উঠানামা নিষিদ্ধ করা।
নোটিশ পাওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে বর্ণিত মতামতসমূহ পালন করতে প্রতিটি পরিবহনের চালকদের প্রতি গাড়ী চালানোর ক্ষেত্রে অধিকতর সতর্কতা ও সচেতনতা মূলক বিজ্ঞপ্তি জারি করার জন্য বলা হয়। অন্যথায় ভবিষ্যতে যেকোন অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনার জন্য দেশের প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে, যার সম্পূর্ণ দায়ভার নোটিশগ্রহীতাদের ওপর বর্তাবে।