এক নারীকে মারধরের অভিযোগের সত্যতা থাকা সত্ত্বেও থানায় মামলা গ্রহণ না করায় কুড়িগ্রামের চিলমারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) ব্যাখ্যা তলব করেছে আদালত। ফৌজদারি কার্যবিধি এবং পুলিশ প্রবিধান লঙ্ঘনের দায়ে কেন তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না, তা লিখিতভাবে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে।
আজ বুধবার (১২ অক্টোবর) কুড়িগ্রামের চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের (চিলমারী আমলী আদালত) জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মজনু মিয়া এ আদেশ দেন।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, মোছা. নুরনেছা বেগম (৫০) আদালতে হাজির হয়ে মো. রাজু মিয়া (২৪) সহ ছয়জনের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ১৪৩, ৪৪৮, ৩২৩, ৩২৬, ৩০৭, ৩৭৯, ৩৮০, ৩৫৪, ৫০৬ (২), ১১৪ এবং ৩৪ ধারায় নালিশি অভিযোগ দায়ের করেন।
আদালতে নালিশকারী বলেন, চিলমারী থানায় অভিযোগ দায়ের করতে গেলে ওসি মামলা রেকর্ড না করে আদালতে দায়েরের পরামর্শ দেন।
আদালত নথি পর্যালোচনা করে এবং কৌঁসুলির বক্তব্য শুনে সার্বিক বিবেচনায় নালিশি অভিযোগটি এজাহার হিসেবে গ্রহণ করতে চিলমারী থানার ওসিকে নির্দেশ দেন। সেই সাথে অভিযোগ বিষয়ে নিয়মিত মামলা রুজু করে আইনানুগ পদক্ষেপ গ্রহণ করার নির্দেশ দেন বিচারক।
আদালতের আদেশে বলা হয়, ফৌজদারি কার্যবিধি এবং পুলিশ প্রবিধান (পিআরবি) অনুযায়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আমলযোগ্য অপরাধের অভিযোগ রেকর্ড করতে বাধ্য। আমলযোগ্য অপরাধের সংবাদ পাওয়ার সাথে সাথে ওসি সত্য বা মিথ্যা যাচাই না করেই এবং মেডিকেল সনদের জন্য অপেক্ষা না করেই নির্ধারিত বইয়ে তা লিপিবদ্ধ করবেন।
সংবাদ সন্দেহজনক মনে হলে আমলে গ্রহণের যোগ্য ম্যাজিস্ট্রেটকে রিপোর্ট দিয়ে জানাতে হবে, নিজে ঘটনাস্থলে যেতে হবে বা সরকার নির্ধারিত পদবির নিচে নয় এমন কাউকে দায়িত্ব দিয়ে পাঠাবেন যাচাই করতে।
তদন্ত করতে না চাইলে নির্ধারিত আইন অনুযায়ী তার কারণ রিপোর্টে ম্যাজিস্ট্রেটকে জানাতে হবে এবং সংবাদদাতাকেও নির্ধারিত নিয়মে অবগত করতে হবে।
ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে তদন্ত না করার কারণ সন্তোষজনক মনে না হলে তিনি তদন্তের নির্দেশ দিতে পারেন এবং নিজে কিংবা অধীনস্ত কোন ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে অনুসন্ধান করাতে পারেন।
আদালতে উপস্থিত নালিশকারীকে পরীক্ষাকালে আদালত দেখতে পান, তাঁর অভিযোগের সত্যতা রয়েছে। নালিশকারীর মাথায় আঘাতজনিত সেলাইয়ের চিহ্ন রয়েছে। ফলে প্রাথমিকভাবে তাঁর অভিযোগ সত্য মর্মে প্রতীয়মান হয়। এছাড়াও বাদী অভিযোগ সমর্থনে হাসপাতালের ছাড়পত্র এবং মাথায় আঘাতের স্থির চিত্র আদালতে দাখিল করেন।
অথচ উপর্যুক্ত ক্ষেত্রে নালিশকারীকে আদালত প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, থানায় এসব প্রমাণ উপস্থাপন করার পরও মামলা নেয়নি ওসি।
আইনের সুস্পষ্ট বিধান থাকা সত্ত্বেও একজন বিচারপ্রার্থী নাগরিককে দায়িত্বের আবহেলা করে থানা হতে ফেরত পাঠানো আইনের প্রতি চরম অবজ্ঞা, দায়িত্বহীনতা প্রতীয়মান হওয়ায় আদালত চিলমারী থানার ওসির বিরুদ্ধে কেন ফৌজদারি কার্যবিধি এবং পুলিশ প্রবিধান লঙ্ঘনের দায়ে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না তা আগামী ১৯ অক্টোবরের মধ্যে লিখিতভাবে ব্যাখ্যা দিতে বলেছেন।