এ, এন, এম, ইব্রাহিম খান : সব ভালবাসার মধ্যে সীমাবদ্ধতা থাকলেও সন্তানের প্রতি বাবা-মায়ের ভালোবাসায় কোনো সীমাবদ্ধতা নেই। জীবন দিয়েও সন্তানদের সুখী করতে চান বাবা-মা। শিশুর বয়স বেড়ে ওঠার পর বাবা-মার দায়িত্ব হয়ে পড়ে তাদের সন্তানকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করে তোলা। মা তার সন্তানের লেখাপড়ার অভ্যন্তরীণ সর্বদিকে দৃষ্টি রাখেন, আর বাবা তার শিক্ষার ব্যয় নির্বাহের জন্য অর্থ সংস্থানে ব্যস্ত হয়ে ওঠেন। এতে তাদের যদি কিছু অসুবিধা হয়েও থাকে তা তারা সন্তানের মুখ পানে চেয়ে হাসিমুখে বরণ করে নেন। সন্তান বিপদগামী হয়ে পড়ছে কি-না, আদব-কায়দার বরখেলাপ করে কি-না, এ সকল দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখেন।
সন্তানের নিকট বাবা-মার চাওয়া-পাওয়া একটাই যা হলো, সু-সন্তান হয়ে তাদের মুখ উজ্জ্বল করা। যদি কোন সন্তান সুশিক্ষিত হয়ে সমাজে প্রতিষ্ঠা লাভ করতে সক্ষম হয় এবং সুনাম অর্জন করতে পারে তাহলে বাবা-মার আনন্দের সীমা থাকে না। সকল বাবা-মাই চান তার সন্তান শিক্ষিত, আদর্শবান ও চরিত্রবান হয়ে সমাজে দশজনের মুখে প্রশংসিত হোক।
সুতরাং এমন পরম হিতৈষীর জন্যে সন্তানদেরও করণীয় রয়েছে। তাদের সেবাযত্নের বিন্দুমাত্র ত্রুটি করতে নেই। বাবা-মা যেন নিজেদের উপেক্ষিত বলে মনে না করতে পারেন তার প্রতি বিশেষ লক্ষ্য রাখতে হবে। যাদের অকৃত্রিম স্নেহ ও ভালবাসায় আমাদের জীবন সার্থক হয়েছে বৃদ্ধ বয়সে যখন তারা অক্ষম হয়ে পড়েন তখন তাদের প্রতি দৃষ্টি রাখা আমাদের সকলের কর্তব্য।
কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, বর্তমানে বাবা-মাকে সন্তানের কাছ থেকে ভরণপোষণ পাওয়ার জন্য আদালতে যেতে হয়। কিছুদিন আগেও আমাদের দেশে পিতামাতার ভরণপোষনের বিষয়ে পৃথক করে আলোচনা করার প্রয়োজন দেখা দেয়নি, কারণ আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য অনুযায়ী বৃদ্ধ পিতামাতাকে সর্বদা দেখাশুনা করার স্বাভাবিক নিয়ম প্রতিটি পরিবারে পরিলক্ষিত হতো।
কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে পারিবারিক কাঠামো বদলে যাছে। যার অনেকগুলো কারণের মধ্যে ভূমি সংকট, বাসস্থান সংকট, জীবিকার তাগিদে পরিবারের সদস্যদের নগরমুখী কিংবা ভিন্ন শহরে অবস্থান প্রভৃতি অন্যতম। পরিবর্তিত জীবনযাত্রায় মানুষের মানসিক মূল্যবোধ এবং চিন্তার পরিসর সংকুচিত হচ্ছে। তাই যৌথ পরিবারের ধারণা আজকের দিনে এক অবাস্তব কল্পনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বর্তমানে পরিবার বলতে একক পরিবার, মা-বাবা আর তাদের এক জোড়া সন্তান। সাধারণত দেখা যায়, যৌবন প্রাপ্তির পর সন্তান-সন্ততিরা এক নিজস্ব মনোজগত সৃষ্টি করে নেয়।
পিতামাতার ভরণপোষণ আইন ২০১৩
সন্তান কর্তৃক পিতা-মাতার ভরণ-পোষণ নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে পিতা-মাতার ভরণপোষণ বাধ্যতামূলক করে পিতা-মাতার ভরণপোষণ আইন, ২০১৩ জাতীয় সংসদে পাশ হয়। এ আইনে প্রত্যকে সন্তানের জন্য তার পিতা-মাতার ভরণপোষণ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে এবং ভরণপোষণের ব্যবস্থা না করলে জরমিানা ও শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে।
পিতা-মাতার ভরণ-পোষণ আইন একটি জনকল্যানকর আইন। এ আইনের প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, যেহেতু সন্তান কর্তৃক পিতা-মাতার ভরণ-পোষন নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে বিধান করা সমীচীন ও প্রযোজনীয় সেহেতু আইনটি প্রনযন করা হলো। অর্থাৎ কোন সন্তান যদি কোন পিতা-মাতার ভরণ-পোষণ না করে তাহলে তারা ভরণপোষণের জন্য এ আইনের অধীনে লিখিত অভিযোগের মাধ্যমে তাদের অধিকার আদায় করতে পারবেন। এ আইনে ভরণ-পোষণ অর্থ- খাওয়া-দাওয়া, বস্ত্র, চিকিৎসা, বসবাসের সুযোগ সুবিধা এবং সঙ্গ প্রদানকে বুঝানো হয়েছে এবং সন্তান বলতে পুত্র কন্যা উভয়কে বুঝানো হয়েছে। এ আইনের ৩ ধারায় বলা হয়েছেঃ
(১) প্রত্যেক সন্তানকে তাহার পিতা-মাতার ভরণ-পোষণ নিশ্চিত করিতে হইবে।
(২) কোন পিতা-মাতার একাধিক সন্তান থাকিলে সেই ক্ষেত্রে সন্তানগন নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা করিয়া তাহাদের পিতা-মাতার ভরণ-পোষণ নিশ্চিত করিবে।
(৩) এই ধারার অধীন পিতা-মাতার ভরণ-পোষণ নিশ্চিত করিবার ক্ষেত্রে প্রত্যেক সন্তানকে পিতা-মাতার একইসঙ্গে একই স্থানে বসবাস নিশ্চিত করিতে হইবে।
(৪) কোন সন্তান তাহার পিতা-মাতাকে বা উভয়কে তাহাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে কোন বৃদ্ধ নিবাস কিঙবা অন্য কোথাও একত্রে কিংবা আলাদা বসবাস করিতে বাধ্য করিবে না।
(৫) প্রত্যেক সন্তান তাহার পিতা-মাতার স্বাস্থ্য সম্পর্কে নিয়মিত খোঁজ খবর রাখিবে, প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা ও পরিচর্যা করিবে।
(৬) পিতা বা মাতা কিংবা উভয়, সন্তান হইতে পৃথকভাবে বসবাস করিলে, সেইক্ষেত্রে প্রত্যেক সন্তানেকে নিয়মিতভাবে তাহাদের সহিত সাক্ষাত করিতে হইবে।
(৭) কোন পিতা বা মাতা সন্তানদের সহিত বসবাস না করিয়া পৃথকভাবে বসবাস করিলে, সেইক্ষেত্রে উক্ত পিতা বা মাতার প্রত্যেক সন্তান তাহার আয়-রোজগার হইতে যুক্তিসঙ্গত পরিমান অর্থ পিতা-মাতা উভয়কে নিয়মিত প্রদান করিবে।
এ আইনের ৪নং ধারায় পিতার অবর্তমানে দাদা-দাদীকে এবং মাতার অবর্তমানে নানা-নানীকে ভরণ-পোষন করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। আইনে পিতা-মাতার ভরণপোষন না করার জন্য এবং ধারা ৩ এর লঙ্ঘনকে আমলযোগ্য অপরাধ বলে গন্য করা হয় এবং ৫ নং ধারায় শাস্তি হিসাবে সর্বোচ্চ ১(এক) লক্ষ টাকা অর্থদন্ড বা অনাদয়ে ৩(তিন) মাসের কারাদন্ডের বিধান রাখা হয়েছে।
২০১৩ সালের ১ জুলাই চীনে ‘এলডারলি রাইটস ল“ বা প্রবীণ অধিকার আইন নামে এরকম একটি আইন পাস করা হয় যার মূলকথা, সন্তানদের অবশ্যই বৃদ্ধ বাবা-মার দেখাশুনা করতে হবে। আমাদের কাছের দেশ সিঙ্গাপুরে ১৯৯৬ সালের ১ জুন থেকে ‘মেইনটেইন্যান্স অব প্যারেন্ট এ্যাক্ট“ কার্যকর হয়। এ আইনে অসমর্থ পিতা-মাতার সুরক্ষা ও ভরণ-পোষন এর জন্য সন্তানদের প্রতি নির্দেশনা রয়েছে। আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারতেও ‘মেইনটেইন্যান্স এন্ড ওয়েলফেয়ার অব প্যারেন্ট এন্ড সিনিয়র সিটিজেন এ্যাক্ট “ ২০০৭ সালে প্রণীত হয়। এ আইনেও পিতা-মাতার ভরণ-পোষণ ও সুরক্ষার নিশ্চয়তা দেয়া হয়েছে।
প্রশ্ন হলো আমাদের প্রিয় এ বাংলাদেশের সকল ধর্মাবলম্বী মানুষ নিজ নিজ ধর্ম পালনে অত্যন্ত আন্তরিক সেখানে আইন করে পিতা-মাতার ভরণ-পোষণ নিশ্চিত করতে হয় কথাটা ভাবতেও কেমন কষ্ট হয়। যে পিতা-মাতা সন্তান জন্মদান ও লালন-পালন করে বড় করে তোলে সে পিতা-মাতা বৃদ্ধ বয়সে সন্তানের হাতে অবহেলিত হবে তা কোনভাবেই কাম্য নয়। এতদস্বত্বেও বর্তমান সময়ের বাস্তাবতার প্রেক্ষিতে এ আইন অত্যন্ত যুগান্তকারী বটে।
পিতা–মাতার প্রতি দায়িত্ব- ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি
ইসলামে পিতামাতার প্রতি যে সম্মান, মর্যাদা ও গুরুত্ব দেয়া হয়েছে পৃথিবীর আর কোথাও তা হয়নি। ইসলামে মহান সৃষ্টিকর্তা ও পালনকর্তা আল্লাহর পরই পিতা-মাতাকে স্থান দেয়া হয়েছে। মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে ঘোষণা করেন,
“আপনার প্রতিপালক নির্দেশ দিচ্ছেন, তোমরা কেবল তাঁরই ইবাদত করবে এবং পিতা–মাতার সাথে সদ্ব্যবহার করবে। তোমাদের কাছে যদি তাদের কোনো একজন অথবা উভয়ই বৃদ্ধাবস্থায় পৌঁছে তাহলে তুমি তাদের উহ্ পর্যন্ত বলবে না, তাদের ধমক দেবে না। বরং তাদের সাথে বিশেষ মর্যাদাসহকারে সম্মানজনক কথা বলবে। বিনয় ও নম্রতার বাহু তাদের জন্য সম্প্রসারিত করবে। আর এ দোয়া করতে থাকবে: “হে প্রভু, এদের প্রতি রহমত বর্ষণ করুন, যেমন করে তারা স্নেহ–মমতাসহকারে শৈশবে আমাকে লালন–পালন করেছেন” (সূরা বনি ইসরাঈল: ২৩ ও ২৪)।
কুরআনে অসংখ্যবার বলা হয়েছে, আল্লাহর সাথে শিরক না করতে এবং তার পরপরই বলা হয়েছে মা-বাবার সাথে সদ্ব্যবহার করতে। আল্লাহ সুবহানা তায়ালা আরো বলেছেন, “আমি মানুষকে নিজেদের পিতামাতার সাথে উত্তম ব্যবহার করার নির্দেশ দিয়েছি” (সূরা আনকাবুত: ৮)।
“আমি মানুষকে পিতা–মাতার সাথে সদ্ব্যবহার করার নির্দেশ দিয়েছি। তার মা কষ্ট ও দুর্বলতার ওপর দুর্বলতা সহ্য করে তাকে নিজের পেটে বহন করেছে। আর তাকে একাধারে দুই বছর দুধ পান করিয়েছে। অতএব আমার প্রতি কৃতজ্ঞ থাক এবং পিতা–মাতার প্রতিও। আমারই কাছে তোমাদের ফিরে আসতে হবে।” (সূরা লুকমান : ১৪)।
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস রা: থেকে বর্ণিত; তিনি বলেন, ‘এক ব্যক্তি আল্লাহর নবী সা:-এর সামনে এসে বলল, আমি আপনার কাছে হিজরত ও জিহাদ করার বাইয়াত গ্রহণ করতে চাই এবং আল্লাহ তায়ালার কাছে সওয়াবের আশা রাখি। তিনি বললেন: তোমার পিতা-মাতার কেউ কি জীবিত আছেন? সে বলল, হ্যাঁ, বরং উভয়ই জীবিত আছেন। তিনি বলেন: তারপরও তুমি আল্লাহর কাছে প্রতিদান আশা করো? সে বলল, হ্যাঁ। তিনি বললেন: তোমার পিতা-মাতার কাছে ফিরে যাও, তাদের সাথে সদ্ব্যবহার করো। (বুখারি ও মুসলিম)
হজরত আবু হুরাইরা রা: থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সা:-এর কাছে বলল, ইয়া রাসূলুল্লাহ, আমার কাছে সদ্ব্যবহার পাওয়ার সর্বাপেক্ষা অধিক অধিকারী কে? তিনি বললেন: তোমার মাতা। সে বলল, তারপর কে? তিনি বললেন: তোমার মাতা। সে বলল, তারপর কে? তিনি বললেন: তোমার মাতা। সে বলল, তারপর কে? তিনি বললেন, তোমার পিতা। (বুখারি ও মুসলিম)
মহানবী সা: বলেছেন, ‘তারাই (পিতা-মাতা) তোমার জান্নাত, তারাই তোমার জাহান্নাম’ অর্থাৎ তাদের সাথে সদ্ব্যবহার করার ফলে আল্লাহ জান্নাত দান করবেন। আর তাদের প্রতি দুর্ব্যবহার করার ফলে অনেকে অন্যান্য সৎ কাজ সত্ত্বেও জাহান্নামি হয়ে যাবে।
রাসূলুল্লাহ সা: আরও বলেছেন, ‘পিতার সন্তুষ্টিতে আল্লাহর সন্তুষ্টি এবং পিতার অসন্তুষ্টিতে আল্লাহর অসন্তুষ্টি। এবং ‘মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেশত।’ (তিরমিযি)
হজরত আবু হুরায়রা থেকে বর্ণিত, নবী করিম সা: বলেছেন, ‘এ ব্যক্তির নাক ধুলায় মলিন হোক যে তার পিতা-মাতা উভয়কে অথবা একজনকে বৃদ্ধাবস্থায় পেয়েও তাদের সেবা করে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারল না।’ (মুসলিম)
রাসূল (সা.) বলেছেন, “যে ব্যাক্তি তার বয়স এবং জীবিকা বাড়াতে চায় সে যেন তার মাতা-পিতার সাথে সৌজন্যমূলক ব্যবহার ও তাদের সাথে সদ্ব্যবহার করে।” (আততারগীব ওয়াততারহীব)
রাসূল (সা.) বলেছেন, “সে ব্যাক্তি অপমানিত হোক, আবার সে অপমানিত হোক এবং আবার সে অপমানিত হোক। সাহাবাগণ জিজ্ঞেস করলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ ! কে, সে ব্যাক্তি? তিনি উত্তর দিলেন, যে ব্যাক্তি তার মাতা-পিতাকে বৃদ্ধাবস্হায় পেলো অথবা তাদের কোন একজনকে পেলো-তারপরও (তাদের খেদমত করে) বেহেশ্তে প্রবেশ করতে পারে নি।” (মুসলিম)
হযরত ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন যে, রাসূল (সা.) বলেছেন: “যে নেক সন্তান মাতা-পিতার প্রতি একবার ভালোবাসার দৃষ্টিতে তাকাবে আল্লাহ তা’আলা প্রতিদানে তাকে একটি মকবুল হজ্বের সওয়াব দান করবেন। সাহাবাগণ জিজ্ঞেস করলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ, কেউ যদি দয়া ও ভালোবাসার সাথে একদিনে একশতবার দেখে? তিনি বললেন, জ্বী, হ্যা, কেউ যদি একশতবার এরূপ করে তবু ও। আল্লাহ তোমাদের ধারণা থেকে অনেক প্রশস্ত এবং সংকীর্ণতা থেকে পবিত্র। ” (মুসলিম)
হযরত আবদুল্লাহ বিন মাসউদ বলেছেন, একদা মহানবী (সা.) কে জিজ্ঞেস করলাম: কোন আমল আল্লাহর নিকট অধিক প্রিয়? তিনি বললেন, সময় মত নামায পড়া। আমি আবার জিজ্ঞেস করলাম, এর পর কোন কাজ আল্লাহর নিকট অধিক প্রিয়? তিনি বললেন, মাতা-পিতার সাথে সদ্ব্যবহার করা। আমি আবার জিজ্ঞেস করলাম, এর পর কি? তিনি বললেন, আল্লাহর পথে জিহাদ করা।” (বুখারী, মুসলিম)
পবিত্র কোরআন এবং হাদিসের উদৃতি থেকে এটা পরিস্কার যে, পিতা-মাতার সেবা করাকে ইসলামে আল্লাহর ইবাদতের পর এবং জিহাদের ওপরে স্থান দেয়া হয়েছে।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম ইরশাদ করেন: ৫০ হাজার বছরের দূরত্বে জান্নাতের ঘ্রাণ পাওয়া যায়। কিন্তু অবাধ্য (সন্তান) এ ঘ্রাণও পাবে না।
উপসংহার
পিতা-মাতার প্রতি সন্তানদের দায়িত্ববান করা এবং দায়িত্ব পালন না করলে শাস্তির বিধান ইত্যাদি আইনের ব্যাপার কিন্তু এ ক্ষেত্রে আইনের চেয়ে ধর্মীয় অনুভূতি এবং হৃদয়ের একান্ত আবেগ অনুভূতিটাই বেশি ভূমিকা রাখতে পারে। সন্তানের প্রধান কর্তব্য হওয়া উচিত মাতা-পিতার সকল রকম সুখের দিকে লক্ষ্য রাখা। পিতা-মাতার শারীরিক মানসিক সকল সুখ স্বাচ্ছন্দ্যের দিকে সন্তানের দৃষ্টি দিতে হবে। মাতা-পিতার ভরণপোষণের দায়িত্বটিকে কোনোভাবেই বোঝা না ভেবে এটাকে জীবনের একটি প্রধান দায়িত্ব বিবেচনা করতে হবে।
মা-বাবা যখন বৃদ্ধ বয়সে পৌঁছেন তখন তারা কর্মজীবন থেকে অবসর জীবনে পৌঁছে যান। অনেকেই তখন সন্তানের ওপর নির্ভরশীল হন। এই অবস্থায় তাদের সব রকমের সুখ স্বাচ্ছন্দের ব্যবস্থা করা সন্তানের কর্তব্য। নিজের জীবনে অভাব অভিযোগ সমস্যা সঙ্কট যতোই থাকুক না কেন তারপরেও পিতা-মাতার সুখ স্বাচ্ছন্দ্যের বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। তাদের স্বাস্থ্যের দিকে দৃষ্টি রাখতে হবে। অনেক বাবা-মা নিজে অশিক্ষিত হলেও সন্তানদের উচ্চশিক্ষিত করেন অনেক ত্যাগ তিতিক্ষার বিনিময়ে।
কর্মজীবনে উচ্চপদে অধিষ্ঠিত হওয়ার পর অনেক সন্তান অশিক্ষিত বাবা-মাকে স্বীকার করতে লজ্জা পান, তাদের পরিচয় দিতে বিব্রত বোধ করেন। তাদের মতো নরাধম আর কেউ হতে পারে না। আসুন আমরা সবাই আইনের কারণে নয় বাবা-মায়ের অশেষ অবদানের কথা প্রতিমূহূর্তে স্মরণ করি, তাদের প্রতি যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করি, জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত তাদের সেবা যত্নে নিজেদেরকে সর্বোতভাবে উৎসর্গ করি।
আজকের বৃদ্ধ পিতা বা মাতাই একদিন তাঁদের সমস্ত শক্তি সামর্থ দিয়ে সন্তানের চাহিদা মেটাতে নিজেদেরকে উৎসর্গ করেছিলেন। সুতরাং বার্ধক্যে উপনীত হয়ে তাঁরা যখন সকল কর্ম ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেন তখন স্বাভাবিক ভাবেই তাঁদের মধ্যে একটা হতাশা কজ করে। এ সময় একটু সহানুভুতি, মমত্ববোধ হয়তো তাঁদেরকে কিছুটা হলেও প্রশান্তি দিতে পারে।
বাস্তবতার নিরীখে অসহায় সন্তানহীন বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের জন্য দেশের প্রতিটি উপজেলায় বৃদ্ধাশ্রম প্রয়োজন সেটা যেমন সত্য, সে সাথে এটাও বেদনাদায়ক যে, সন্তান-সন্ততি সব থাকার পরও একদিন যে মা-বাবা নিজেদের সবকিছু দিয়ে সন্তান মানুষ করেছেন সে সন্তান যখন মা-বাবাকে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠায়, তার মত দুর্ভাগা আর কে হতে পারে! বৃদ্ধ মা-বাবাকে বোঝা নয় বরং সৃষ্টিকর্তার পরম আর্শিবাদ মনে করতে হবে। বৃদ্ধ মা-বাবাকে নিজের সাথে রাখলেও কেউ যেন গর্ব করে এই কথটা না বলে যে, “আমার মা-বাবা আমার সাথে থাকেন” বরং এটা বলা উচিত যে, “আমি আমার মা-বাবার সাথে থাকি “।
মহান আল্লাহ্ সুবহানা তায়ালা পিতা-মাতার প্রতি আমাদরে হৃদয়ে মমতা এবং ভালবাসা বৃদ্ধি করে দিন। আমীন।
লেখক: অ্যাডভোকেট, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট এবং জীবন সদস্য, চট্টগ্রাম সমিতি ঢাকা। ই-মেইল: ibrahimkhan1965@yahoo.com