মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী : কক্সবাজার জেলায় মাদক মামলার প্রচুর আধিক্য রয়েছে। এজন্য কক্সবাজার বিচার বিভাগে বিচারাধীন মাদক মামলাগুলো দ্রুততম সময়ে নিষ্পত্তি করার জন্য অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ মর্যাদার একজন বিচারক নিয়োগ দিয়ে একটি ট্রাইব্যুনাল গঠন করার জন্য সরকারের নীতিনির্ধারণী মহলে প্রস্তাব প্রেরণ করা হয়েছে। এ প্রস্তাব সরকারের উর্ধতন মহলে চূড়ান্ত প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এ বছরের মধ্যে এ প্রস্তাব অনুমোদন হয়ে কক্সবাজার বিচার বিভাগে মাদক মামলা নিষ্পত্তিতে পৃথক ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হবে।
আজ শনিবার (১১ মার্চ) কক্সবাজার বিচার বিভাগীয় সম্মেলনে সভাপতির স্বাগত বক্তব্যে কক্সবাজারের সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল এ তথ্য প্রকাশ করেন।
কক্সবাজার জেলা জজ আদালতের কনফারেন্স কক্ষে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল আরো বলেন, একটি পৃথক ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে শুধুমাত্র মাদক মামলাগুলো নিষ্পত্তি হলে মাদক কারবারীরা সহজে আইনের আওতায় আসবে এবং আইনি প্রক্রিয়ায় কিছুটা হলেও মাদক পাচার রোধ করা যাবে।
সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল বলেন, কক্সবাজার বিচার বিভাগের জন্য আরো অতিরিক্ত ৪ জন যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ এর পদ সৃষ্টি করে সেগুলো কার্যকর করার জন্য প্রস্তাব প্রেরণ করা হয়েছে। তারমধ্যে ১ জন যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ কক্সবাজারের চকরিয়া চৌকি আদালতের জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে। এ প্রস্তাবও সরকারের নীতিনির্ধারণী মহলে ইতিবাচকভাবে প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এ প্রস্তাব অনুমোদন হলে কক্সবাজারে আগের ২ জন যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ সহ মোট ৬ জন যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ আদালত কাজ করবে। তখন প্রায় ৯০ হাজার মামলার ভারে জর্জরিত কক্সবাজার বিচার বিভাগের বিচারাধীন মামলাগুলো দ্রুততম সময়ের মধ্যে নিষ্পত্তি হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
বিজ্ঞ বিচারক মোহাম্মদ ইসমাইল আরো বলেন, কক্সবাজার জেলায় বিশাল বিশাল মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। বেশ ক’টি অর্থনৈতিক জোন স্থাপন করা হচ্ছে। এজন্য জমির ক্ষতিপূরণ বাবদ ৫০ হাজার কোটি টাকার উপরে সরকারের ব্যয় হচ্ছে। এখানকার জমির মূল্যও অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। তাই মামলা, মোকদ্দমাও বেড়েছে। এজন্য আইনশৃংখলা পরিস্থিতিরও অস্থিতিশীল হচ্ছে। আবার প্রায় ১২ লক্ষ রোহিঙ্গা শরণার্থীর ভারে কক্সবাজার জর্জরিত। রোহিঙ্গাদের অপরাধও দিন দিন বাড়ছে। তাই এককভাবে কারো উপর দায় না চাপিয়ে রাষ্ট্রের সকল সংস্থা, বেসরকারি সংস্থা, আইনজীবীসহ সংশ্লিষ্ট সকলের সমন্বিত প্রচেষ্টায় সুশাসন প্রতিষ্ঠা ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার জন্য তিনি আহবান জানান। তিনি ক্রিমিনাল ও সিভিল জাস্টিস সিস্টেম আরো উন্নত ও সমৃদ্ধ করতে সবার আন্তরিক সহযোগিতা কামনা করেন।
কক্সবাজার জেলা লিগ্যাল এইড অফিসার ও সিনিয়র সহকারী জজ সাজ্জাতুন নেছা ও সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আসাদ উদ্দিন মোঃ আসিফ এর যৌথ সঞ্চালনায় সম্মেলেনে বিচারকদের মধ্যে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল -১ এর বিচারক (জেলা জজ) মোহাম্মদ মোসলেহ উদ্দিন এবং ট্রাইব্যুনাল -২ এর বিচারক (জেলা জজ) মো: নুরে আলম, চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আবদুল্লাহ আল মামুন, অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ-৩ আবদুল কাদের, অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ-৫ নিশাত সুলতানা, যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ-১ মাহমুদুল হাসান, সিনিয়র সহকারী জজ সুশান্ত প্রাসাদ চাকমা, চকরিয়া চৌকি আদালতের সিনিয়র সহকারী জজ জিয়া উদ্দিন আহমদ, সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আবুল মনসুর সিদ্দিকী, হামিমুন তানজীন, সাঈনীন নাঁহী, আখতার জাবেদ, মোহাম্মদ এহসানুল ইসলাম, সহকারী জজ (টেকনাফ) ওমর ফারুক, সহকারী জজ (কুতুবদিয়া) ফাহমিদা সাত্তার প্রমুখ “দেওয়ানী ও ফৌজদারী মোকদ্দমার বিচার নিষ্পত্তিতে উদ্ভূত সমস্যা ও বিলম্বের কারণ সমুহ চিহ্নিতকরণ এবং উল্লেখিত সমস্যা হতে উত্তরণের উপায়” সম্পর্কে উম্মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন।
এছাড়া অন্যান্যের মধ্যে, পিবিআই কক্সবাজার এর পুলিশ সুপার সরোয়ার আলম, সিআইডি’র পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সাহেদ মিয়া, কক্সবাজার জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এন্ড অপস) শাকিল আহমদ, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট সিরাজুল মোস্তফা, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো: আবু সুফিয়ান, সিভিল সার্জন এর প্রতিনিধি ডা: ইমরুল কায়েস, ৩৪ বিজিবি’র প্রতিনিধি হারুনর রশীদ, র্যাব-১৫ এর প্রতিনিধি এএসপি মো: জামিলুল হক, কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালের প্রতিনিধি ডা: মোহাম্মদুল হক, কক্সবাজার জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট সিরাজুল ইসলাম-৪, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ তারেক, জিপি অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ ইসহাক, পিপি অ্যাডভোকেট ফরিদুল আলম ফরিদ, বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (উত্তর) মোঃ মো: আনোয়ার হোসেন সরকার, বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (দক্ষিণ) সরওয়ার আলম, জেলা কারাগারের জেলার শওকত হোসেন মিয়া, শহর সমাজসেবা অফিসার মিজানুর রহমান, অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর, অ্যাডভোকেট নুরুল মোস্তফা মানিক, অ্যাডভোকেট শামীম আরা স্বপ্না, অ্যাডভোকেট নুরুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট আজম মঈন উদ্দিন, অ্যাডভোকেট শিবুলাল দেবদাস, অ্যাডভোকেট জিয়া উদ্দিন আহমদ, অ্যাডভোকেট সৈয়দ রেজাউর রহমান, অ্যাডভোকেট বদিউল আলম, অ্যাডভোকেট একরামুল হুদা, এজিপি অ্যাডভোকেট সৈয়দ রাশেদ উদ্দিন প্রমুখ আলোচনায় অংশ নেন।
কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের প্রশাসনিক কর্মকর্তা এস.এম আব্বাস উদ্দিন জানান, অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এ সম্মেলনের প্রথম পর্ব শনিবার সকাল সাড়ে ৯ টায় শুরু হয়ে সুপারিশমালা প্রণয়নের মাধ্যমে প্রথম পর্ব দুপুর ১ টায় সমাপ্ত হয়।
প্রশাসনিক কর্মকর্তা এস.এম আব্বাস উদ্দিন আরো জানান, মধ্যাহ্ন ভোজের বিরতির পর দ্বিতীয় পর্ব শুরু হয় শনিবার বেলা ২ টায়। এ পর্ব শুধুমাত্র বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে অনুষ্ঠিত হয়। একইদিন বিকেলে সম্মেলনের সভাপতি সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল এর সমাপনী ভাষনের মাধ্যমে দিনব্যাপী বিচার বিভাগীয় এ সম্মেলন শেষ হয়।