ব্যস্ততায় ঠাসা জীবনে বই পড়ার ফুরসত কৈ? তথাপি কোনো কোনো বই তার পাঠককে বড্ড বেশী টানে, বড্ড বেশী আন্দোলিত করে। কর্মসূত্রে প্রতিদিনই বিভিন্ন আইন বিষয়ক পুস্তকের পাতা উল্টাতে উল্টাতে যখন রীতিমত হাঁপিয়ে উঠেছিলাম, তখন একরাশ নতুন চিন্তার ডালা খুলে দিয়ে “ন্যায়বিচারের অন্বেষণে” বইটি আমাকে রীতিমত চমকে দিয়েছে। যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ মোঃ সাইফুল ইসলামের লেখা “ন্যায়বিচারের অন্বেষণে” বইটি পড়া শেষ হলে মনে পড়লো বিখ্যাত উক্তি “বই মনের চোখ ফোটায়।”
লেখক নিজের পেশাগত জীবনের বাস্তব ও অনুপম অভিজ্ঞতাকে অসাধারণ শব্দের বুননে সাবলীলভাবে পাঠকদের জন্য তুলে ধরেছেন। অ্যারেস্ট মেমো বা গ্রেফতারের স্মারকলিপি প্রস্তুত ও প্রয়োগ পদ্ধতি, বিকৃত নামে আসামীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের কুফল, আদালতগামী বন্দীদের খাবার প্রাপ্তির অধিকার, ভুয়া ওয়ারেন্ট প্রতিরোধের উপায়, অপরাধী সংশোধন ও পুনর্বাসন সমিতির কাঠামোগত পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তা, অপরাধী সংশোধনে প্রবেশন ও প্যারোল ব্যবস্থা কার্যকরী করা, ভিকটিম ও জখমীদের হাসপাতালের ছাড়পত্রে ইনজুরি নোটের গুরুত্ব, আদালত ভবনে তথ্য ও সেবা কেন্দ্র স্থাপনের প্রয়োজনীয়তা, সাক্ষী ও ওয়ারেন্ট ব্যবস্থাপনা এবং অন্যান্য বিষয়ে লেখকের ক্ষুরধার ও সাদাসিধে লেখনী পাঠকদের জন্য নিঃসন্দেহে নতুন চিন্তার খোরাক জোগাবে।
বইটিতে একাধারে প্রবন্ধ, স্মৃতিকথা ও গল্পের অনন্য স্বাদ পাওয়া যাবে। একটি লেখা পড়তে না পড়তেই আরেকটি লেখার ভিন্নতা ও ধরণে পাঠকমাত্রই অনুরণিত হবেন।
চর্মচক্ষু দিয়ে না দেখে অন্তর্চক্ষু দিয়ে সমস্যার গভীরে প্রবেশ করে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করে কিভাবে সমাজের গভীর ক্ষতসমূহকে সারিয়ে তুলতে হয় তা লেখক সুনিপুণভাবে আমাদের বুঝিয়ে দিয়েছেন।
আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় নিয়োজিত রাজনীতিবিদ, বিচারক, আমলা, পুলিশ, কারা কর্তৃপক্ষ, প্রবেশন অফিসার, সিভিল সোসাইটি এবং অন্যান্য সকল পেশার মানুষের নবচিন্তার দুয়ার খুলে দেয়ার জন্য এই বইটি যথেষ্ট ভূমিকা রাখবে।
ঝকঝকে পৃষ্ঠা আর পরিস্কার মুদ্রণের বইটি পড়তে গিয়ে চোখের উপর কোনরূপ চাপ অনুভব করিনি বরং পেয়েছি নির্মল আনন্দ। বইটির প্রচ্ছদেও নান্দনিকতার ছাপ লক্ষণীয়। শখ করে হলেও যারা বই কিনতে চান বইটির প্রচ্ছদ তাদেরকে আকৃষ্ট করার জন্য যথেষ্ট। শখের বশে এই বইটি ক্রয় করার পরে উৎসুক হৃদয়ে চিন্তাশীল পাঠক যখন বইটি খুলবেন তিনি বইটির রসাস্বাদনে পুলকিত হতে বাধ্য হবেন।
এই অমূল্য বইটি প্রকাশ করেছে লেক্সিলেন্স প্রকাশনী। ১৭৬ পৃষ্ঠার বইটির প্রচ্ছদ মূল্য ধরা হয়েছে মাত্র ৪০০ টাকা। অনলাইনে বইটি অর্ডার করার জন্য Lexcelence এবং Mbb Online Marketing পেজে ব্রাউজ করে দেখতে পারেন।
পুনশ্চ:, বাংলাদেশের সকল বিচারালয়ের যেকোনো পাঠাগারে বইটি স্থান না পেলে পাঠাগারটি কিছুটা হলেও অপূর্ণ থেকে যাবে।
লেখক: মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মামুন, বিচারক (জেলা জজ), নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১, কুমিল্লা।