মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী : ৯০ লক্ষ টাকা মূল্যের ৩০ হাজার ইয়াবা টেবলেট পাচারের মামলায় এক রোহিঙ্গা নারীকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড, একইসাথে ১০ হাজার টাকা অর্থদন্ড, অর্থদন্ড অনাদায়ে আরো ২ বছর সশ্রম কারাদন্ড প্রদান করা হয়েছে।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ দ্বিতীয় আদালতের বিচারক মোহাম্মদ সাইফুল ইলাহী সোমবার (২৪ জুন) এ রায় প্রদান করেন।
একই আদালতের বেঞ্চ সহকারী মফিজুর রহমান এ তথ্য জানিয়েছেন।
দন্ডিত আসামী হলেন- কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার বালুখালী ১০ নম্বর রোহিঙ্গা শরনার্থী ক্যাম্পের ব্লক জি-২৬ এর মৃত কবির আহমদ ও মৃত কুলসুমা খাতুনের কন্যা রোহিঙ্গা মরিজান (২৪)। রায় ঘোষণার সময় দন্ডিত আসামী মরিজান আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
রাষ্ট্র পক্ষে অতিরিক্ত পিপি অ্যাডভোকেট সুলতানুল আলম এবং আসামী পক্ষে অ্যাডভোকেট জমির উদ্দিন মামলাটি পরিচালনা করেন।
মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণ
২০২২ সালের ১১ এপ্রিল রাত ১ টা ৩০ মিনিটের দিকে র্যাব-১৫ এর একটি টিম কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার বালুখালী পান বাজার মোহাম্মদ আলী ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপের সামনে টেকনাফ-কক্সবাজার সড়কের উপর এক অভিযান চালিয়ে রোহিঙ্গা শরনার্থী মরিজানকে আটক করে। পরে তার স্বীকারোক্তি মতে তার ডান হাতে থাকা একটি বালতি থেকে ৩০ হাজার পিচ ইয়াবা টেবলেট উদ্ধার করা হয়। যার মূল্য ৯০ লক্ষ টাকা।
এ ঘটনায় র্যাব-১৫ এর সুবেদার মোঃ আবুল কালাম ঢালী বাদী হয়ে রোহিঙ্গা নারী মরিজানকে আসামী করে উখিয়া থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে একটি মামলা দায়ের করেন। যার উখিয়া থানা মামলা নম্বর : ১৪, তারিখ : ১১/০৪/২০২২ ইংরেজি, জিআর মামলা নম্বর : ১৩৭৯/২০২২ ইংরেজি (উখিয়া) এবং এসটি নম্বর : ১২৮০/২০২৩ ইংরেজি।
বিচার ও রায়
২০২৩ সালের ১২ এপ্রিল কক্সজবাজারের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ দ্বিতীয় আদালতে মামলাটির চার্জ (অভিযোগ) গঠন করে বিচার কাজ শুরু করা হয়। মামলায় ১০ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ, আসামী পক্ষে তাদের জেরা, আলামত প্রদর্শন, রাসায়নিক পরীক্ষার ফলাফল পর্যালোচনা, আসামীকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ, যুক্তিতর্ক সহ মামলার সকল বিচারিক কার্যক্রম সম্পন্ন করে মামলাটি বিচারের জন্য সোমবার দিন ধার্য্য করা হয়।
ধার্য্য দিনে কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ দ্বিতীয় আদালতের বিজ্ঞ বিচারক মোহাম্মদ সাইফুল ইলাহী ২০১৮ সালের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের ৩৬ (১) সারণির ১০ (গ) ধারায় আসামী রোহিঙ্গা শরনার্থী মরিজানকে দোষী সাব্যস্থ করে যাবজ্জীবন কারাদন্ড, একইসাথে ১০ হাজার টাকা অর্থদন্ড, অর্থদন্ড অনাদায়ে আরো ২ বছর সশ্রম কারাদন্ড প্রদান করেন।
একই আদালতের বেঞ্চ সহকারী মফিজুর রহমান জানান, মামলাটি চার্জ (অভিযোগ) গঠন করার মাত্র এক বছর ২ মাস ১২ দিনের মধ্যে রায় ঘোষণা করা হয়েছে।
এ রায় সম্পর্কে রাষ্ট্র পক্ষে মামলা পরিচালনাকারী অতিরিক্ত পিপি অ্যাডভোকেট সুলতানুল আলম বলেন, আদালতে মামলাটি যথেষ্ট সাক্ষ্য প্রমাণ উত্থাপন করে আসামীর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ রাষ্ট্র পক্ষ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছে। আদালতের এ রায়ে রাষ্ট্র পক্ষ সন্তুষ্ট। এ রায় একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। এ রায় মাদক কারবারী ও অপরাধ কর্মে জড়িত রোহিঙ্গাদের কাছে একটা ম্যাসেজ যাবে।
তিনি আরো বলেন, কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ দ্বিতীয় আদালতে বিচারাধীন মাদকের মামলা গুলো দ্রুত নিষ্পত্তিতে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।