ন্যায়বিচারের অঙ্গিকার আপিল বিভাগে নবনিযুক্ত ৪ বিচারপতির

ন্যায়বিচারের অঙ্গিকার আপিল বিভাগে নবনিযুক্ত ৪ বিচারপতির

আপিল বিভাগে নবনিযুক্ত চার বিচারপতি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শহীদদের স্মরণ, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা, বৈষম্যহীন সমাজ বিনির্মাণের অঙ্গিকার করেছেন।

আপিল বিভাগের ১ নম্বর বিচারকক্ষে মঙ্গলবার (১৩ আগস্ট) অনুষ্ঠিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠান তারা এ অঙ্গিকার করেন। সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রথমে অ্যাটর্নি জেনারেল মো: আসাদুজ্জামান ও পরে সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি সিনিয়র আইনজীবী এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন বক্তব্য রাখেন।

এ সময় প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ ও হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতিরা উপস্থিত ছিলেন।

আপিল বিভাগে নিয়োগ পাওয়া চার বিচারপতি হলেন- বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী, বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ জিয়াউল করিম, বিচারপতি মো: রেজাউল হক ও বিচারপতি এস এম এমদাদুল হক।

আরও পড়ুন: বিচার বিভাগের পুনর্গঠন ও সংস্কারে সাবেক বিচারকদের ১২ দফা প্রস্তাবনা

আপিল বিভাগের বিচারপতি জুবায়ের রহমান বলেন, ‘গণঅভ্যুত্থানের উদ্দেশ্যই হলো গণতান্ত্র প্রতিষ্ঠা। আমরা যেন জনগণের হয়ে কাজ করতে পারি, আইনঙ্গনের সবার প্রতি এই আহ্বান রইল।’

সম্মান হানী হয় এমন কাজ না করতে আইনজীবীদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ জিয়াউল করিম বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শহীদদের স্মরণ, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করব। বৈষম্যহীন সমাজ বিনির্মাণের চেষ্টা করব।’

আরেক বিচারপতি রেজাউল হক বলেন, ‘বহুপ্রাণের বিনিময়ে দ্বিতীয় স্বাধীনতা, শহীদদের রুহের মাগফেরাত কামনা, আহতদের আরোজ্ঞ কামনা করি। ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় সর্বদা চেষ্টা করব, ন্যায়বিচারের জন্য প্রয়োজন তীক্ষ্ণ দৃষ্টি ও সত্যকে বুঝার সক্ষমতা।’

বিচারপতি এস এম এমদাদুল হক বলেন, ‘আজকে এই বৈষম্যের বিরুদ্ধে বিজয়ী ছাত্র জনতাদের যারা তাদের বুকের তাজা রক্ত ঢেলে একটি নতুন বাংলাদেশ গড়ার জন্য শপথ নিয়ে নতুনভাবে চলার পথ তৈরি করেছেন। যেখানে থাকবে না কোনো বৈষম্য, কোনো অন্যায়, কোনো অত্যাচার, কোনো অনাচার, কোনো নির্যাতন এবং থাকবে স্বাধীন। বৈষম্যহীন রাষ্ট্র যেখানে নাগরিকরা তাদের মতামত স্বাধীনভাবে প্রকাশ করতে পারবে এবং ন্যায়বিচার প্রাপ্ত হবেন।’

তিনি বলেন, ‘যে বোধদয় নিয়ে ও সাহস নিয়ে আবু সাঈদ পুলিশের সামনে দাঁড়িয়েছিলেন, হয়তো সে আশা করেছিলেন আমাদের দেশের পুলিশ বাহিনী তাকে কিছু বলবে না। কিন্তু না, তার ধারণা ভুল প্রমানিত হলো, তার বুকে একটি নয়, দু’টি নয়, তিনটি গুলি করে তাকে শহীদ করা হয়েছিল। যে স্মৃতি এখনো সকলের বুকে কম্পন সৃষ্টি করে আবার অনুপ্রেরণাও যোগায়। তখন স্মরণ হয় ১৯৭১ সালে আমার এক চাচার কথা, যিনি এভাবে অন্যায় ও অনাচারের বিরুদ্ধে বুক পেতে দিয়ে শহীদ হয়েছিলেন।’

শপথ

মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টায় সুপ্রিমকোর্টের জাজেস লাউঞ্জে চার বিচারপতিকে শপথ বাক্য পাঠ করান প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ। শপথ অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন সুপ্রিমকোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল আজিজ আহমদ ভূঞা।

এর আগে, ১২ আগস্ট হাইকোর্ট বিভাগের চার বিচারপতিকে আপিল বিভাগে নিয়োগ দেন রাষ্ট্রপতি। নিয়োগ পাওয়া এই চার বিচারপতির সংক্ষিপ্ত পরিচয় তুলে ধরা হলো।

বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী

মরহুম বিচারপতি এ এফ এম আব্দুর রহমান চৌধুরীর ছেলে জুবায়ের রহমান চৌধুরী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলবি ও এলএলম ডিগ্রি অর্জন করেন। পরে যুক্তরাজ্য থেকেও আন্তর্জাতিক আইনে এলএলএম ডিগ্রি নেন। ১৯৮৫ সালে তিনি জেলা আদালতে ও ১৯৮৭ সালে সুপ্রিমকোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে আইনজীবী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হন। ২০০৩ সালের ২৭ আগস্ট হাইকোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত বিচারপতি এবং দুই বছর পরে স্থায়ী বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান।

বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ জিয়াউল করিম

সৈয়দ মোহাম্মদ জিয়াউল করিম রসায়নে স্নাতক, আইনে এলএলবি ও এলএলএম ডিগ্রি এবং পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৮৬ সালে তিনি জেলা আদালতে, ১৯৮৮ সালে হাইকোর্ট বিভাগে এবং ১৯৯৬ সালে আপিল বিভাগের আইনজীবী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হন। ২০০৪ সালের ২৩ আগস্ট হাইকোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত বিচারপতি এবং দুই বছর পরে স্থায়ী বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান।

বিচারপতি মো: রেজাউল হক

মো: রেজাউল হক এমএ ও এলএলবি ডিগ্রি অর্জনের পর ১৯৮৮ সালে তিনি জেলা আদালতে ও ১৯৯০ সালে সুপ্রিমকোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে আইনজীবী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হন। ২০০৪ সালের ২৩ আগস্ট হাইকোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত বিচারপতি এবং দুই বছর পরে স্থায়ী বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান।

বিচারপতি এস এম এমদাদুল হক

এস এম এমদাদুল হক রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলবি ও এলএলএম ডিগ্রি অর্জন করেন। পরে ১৯৯০ সালে তিনি জেলা আদালতে ও ১৯৯২ সালে সুপ্রিমকোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে আইনজীবী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হন। ২০০৪ সালের ২৩ আগস্ট হাইকোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত বিচারপতি এবং দুই বছর পরে স্থায়ী বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান।

উল্লেখ্য, গত ১০ আগস্ট প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিক্ষোভের মুখে পদত্যাগ করেন। পদত্যাগ করেন আপিল বিভাগের আরো পাঁচ বিচারপতি। সেদিন হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদকে প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দেন রাষ্ট্রপতি। পর দিন দুপুরে তাকে শপথ পড়ান রাষ্ট্রপতি।