কক্সবাজার আদালতের অভ্যন্তরীণ সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধে জেলা ও দায়রা জজ, জেলা প্রশাসক ও চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট বরাবর আবেদন করেছেন কক্সবাজার জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য অ্যাডভোকেট ইউসুফ আরমান।
আবেদনে বলা হয়, কক্সবাজার আদালত ব্যস্ততম এলাকা। এই আদালত পাড়ায় রয়েছে কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালত, কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, কক্সবাজার জেলা নির্বাচন কমিশন কার্যালয়, চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালত ও সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতসহ সরকারি বিভিন্ন দপ্তর।
জেলা প্রশাসক কার্যালয় ও আইনজীবী সমিতি ভবনের মাঝখান দিয়ে প্রধান সড়কের বিপরীতে একটি রাস্তা চলে গেছে কক্সবাজার আইন কলেজ হয়ে কক্সবাজার সদর হাসপাতালের দিকে। মূল সড়কে জ্যাম থাকলে বিকল্প রাস্তা হিসাবে এই রাস্তা ব্যবহার করে গণপরিবহন। ফলে টমটম, অটোরিকশা, ইজিবাইক, ব্যাটারি চালিত যানবাহন, মোটর সাইকেল ও নোহা-মাইক্রোবাসের হর্ণে পরিবেশ দূষিত হয়।
এই আদালত প্রাঙ্গণ জুড়ে পথে পথে পসরা সাজিয়ে বাজার বসেছে। এর ফলে সৃষ্ট হয় বিশৃঙ্খলা ও ভোগান্তি। ফলে আদালতের অভ্যন্তরীণ পথটিতে ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়।
কক্সাবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালত পর্যন্ত বিস্তৃত এই রাস্তায় আইনজীবীদের কাছে একটি বিশেষ তাৎপর্য বহন করে। কারণ এই রাস্তা ধরে বিচারকের চলাচল, আইনজীবী চেম্বার থেকে জেলা ও দায়রা জজ আদালত, চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালত সহ যে কোন আদালতে অনায়েসে যাতায়াত করতে পারে না।
যেহেতু মূল সমস্যার সৃষ্টি হয় এই রাস্তা ঘিরে। প্রধান সড়কের বিকল্প রাস্তা কক্সবাজার পৌরসভা সম্মুখ হয়ে কক্সবাজার আইন কলেজ পর্যন্ত বিস্তৃত রাস্তায় প্রতিদিন সকালে বহিরাগত গাড়ী, মোটর সাইকেল, টমটম, অটোরিকশা, ব্যাটারি চালিত রিকশা এই পথে যাতায়ত করে যার ফলে আইনজীবীদের স্বাভাবিক চলাচল বিঘ্ন ঘটায়।
এছাড়াও পুলিশ সেল ঘর থেকে আসামী আদালতে নেওয়া-আসা করতে নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে এবং আসামী পালিয়ে যাওয়ার আশংকা রয়েছে।
আরও পড়ুন: গাড়ী ভাংচুরের মামলা থেকে অব্যাহতি পেলেন বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন
উল্লেখ্য যে, সকাল বেলা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত আদালত প্রাঙ্গণে আইনজীবীরা ব্যস্ততম সময় কাটায়।
সুতরাং এমন সময় আদালত প্রাঙ্গণে বিচাকদের, আইনজীবীদের, বিচার প্রার্থীর এবং অন্যান্য সরকারি কর্মচারী-কর্মকর্তাদের অবাধ বিচরণ নিশ্চিত করা জরুরী। প্রতিদিন এই যানজটের কারণে আইনজীবীদের চরম দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
প্রতিদিন সকালে বহিরাগত যাবাহন এই পথটি অবরুদ্ধ করার ফলে আদালত প্রাঙ্গণে সৃষ্টি হচ্ছে বিশৃঙ্খলা। মানুষের উপচে পড়া ভীড়ের আনাগোনা আর গাড়ীর যানজটে গাড়ীর ধাক্কায় আইনজীবী আহত হওয়ার মত ঘটনা, গাউন ছিঁড়ে যাওয়ার মত অপ্রতিকর ঘটনার প্রবাহ নিত্য দিনের। এই বিশৃঙ্খলার শিকার হয় প্রতিনিয়ত আদালতে আসা বিচার প্রার্থীরাও।
আদালতের প্রেক্ষাপটে সময় অতীব মূল্যবান। আদালত চলাকালীন সময়ে ২-৩ মিনিটের জন্য যে কেউ সুষ্ঠু বিচার থেকে বঞ্চিত হতে পারে। একজন আইনজীবী আদালতে প্রবেশ করতে বিলম্ব হলে তার মক্কেলের আস্থা হারিয়ে ফেলার সম্ভাবনা বিদ্যমান।
আদালত পাড়া হওয়া চাই গাড়ী হর্ণ ও যানজট মুক্ত। সুতরাং কক্সবাজার আদালত এলাকাতে অনতিবিলম্বে যান বাহন চলাচল বন্ধ করতে দ্রুত ব্যবস্থার জোর দাবী জানাচ্ছে আইনজীবী সমাজ।
আবেদনের বিষয়টি নিশ্চিত করে ইউসুফ আরমান জানান, কক্সবাজার আদালতের চার পাশে নিরাপত্তার বড্ড অভাব। আদালত চলাকালীন সময়ে নানা অজুহাতে জেলা প্রশাসক কার্যালয় ঘিরে সভা-সমাবেশ, স্লোগানে মুখরিত, মাইকের আওয়াজে সকল দাবী উত্থাপনের কেন্দ্র বিন্দু। এহেন কার্যকলাপে বিচার কার্যে বিঘ্নিত হয় এবং আইনজীবীদের গুরুত্বপূর্ণ মামলা শুনানীতে ব্যঘাত ঘটে। এছাড়াও অযাচিত যানবাহনের হর্ণে পরিবেশ বিনষ্টের উন্নতম কারণ। বিচারিক কাংক্ষিত কাজে অনাকাঙ্ক্ষিত আদেশ হওয়ার আশংকা থাকে।
আইনজীবীদের পক্ষে স্বারকলিপি প্রদানকালে উপস্থিত ছিলেন এডভোকেট ইউসুফ আরমান (কলামিষ্ট ও সাহিত্যিক), এডভোকেট শাওন তাহের, এডভোকেট ফাহিম ফয়সাল, এডভোকেট শহীদুল্লাহ কায়সার, এডভোকেট ফরিদুল আলম, এডভোকেট মঈন উদ্দিন, এডভোকেট শিপ্ত বড়ুয়া, এডভোকেট রবিউল হাসান, এডভোকেট জহির উদ্দিন, এডভোকেট শাহেদুল ইসলাম, এডভোকেট রেজাউল হোসাইন মামুন, এডভোকেট আরিফুল হাছান, এডভোকেট মোহাম্মদ সেলিমসহ প্রমুখ।
স্মারকলিপি প্রদানকালে আইনজীবীরা উল্লেখিত বিষয়ে বিচারক ও আইনজীবীদের স্বার্থে তড়িৎ প্রয়োজনীয় যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য জেলা ও দায়রা জজ, জেলা প্রশাসক ও চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেটের কাছে সহযোগিতা কামনা করেছেন।