বাংলাদেশ বার কাউন্সিল: আইন পেশার উন্নয়ন, চ্যালেঞ্জ, সংস্কার ও আইনজীবী সুরক্ষা আইনের প্রয়োজনীয়তা
মো. সরোয়ার হোসাইন লাভলু

বাংলাদেশ বার কাউন্সিল এমসিকিউ পরীক্ষার প্রস্তুতিমূলক গাইডলাইন

মোঃ সরোয়ার হোসাইন লাভলু : বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের এমসিকিউ (MCQ) পরীক্ষা একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ, যা একজন আইনজীবী হিসেবে নিবন্ধন লাভের পূর্বশর্ত। এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হলে পরীক্ষার্থীদের আইনের বিভিন্ন ধারাগুলোর উপর সুস্পষ্ট ধারণা এবং মেধার পরিচয় দিতে হয়। বর্তমানে, এমসিকিউ পরীক্ষা পদ্ধতির সঙ্গে নেগেটিভ মার্কিং সিস্টেম সংযুক্ত করা হয়েছে, যা পরীক্ষার্থীদের জন্য কিছুটা চ্যালেঞ্জিং। তবে সঠিক প্রস্তুতি এবং কৌশল অবলম্বন করলে এই পরীক্ষা সহজেই উত্তীর্ণ হওয়া সম্ভব।

বাংলাদেশ বার কাউন্সিল পরীক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ আইনের ধারা সমূহ

১. ফৌজদারি কার্যবিধি, ১৮৯৮ (Criminal Procedure Code, CrPC)

ফৌজদারি কার্যবিধির বিভিন্ন ধারার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ সেকশনগুলো হলো:

ধারা ৫৪: বিনা পরোয়ানায় গ্রেফতার

ধারা ১৬৪: ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে জবানবন্দি

ধারা ২৪৩: আসামির দোষ স্বীকার

ধারা ৩৭৫: জামিনযোগ্য অপরাধ

ধারা ৪০১: রাষ্ট্রপতির ক্ষমা ও দণ্ড মওকুফের ক্ষমতা

এই ধারাগুলো বাংলাদেশ বার কাউন্সিল পরীক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ করে জামিন, গ্রেফতার ও জবানবন্দির মতো প্রক্রিয়া সম্পর্কিত।

২. দণ্ডবিধি, ১৮৬০ (Penal Code, IPC)

দণ্ডবিধির ধারাগুলো অপরাধের সংজ্ঞা ও শাস্তির বিধান সরবরাহ করে, যেমন:

ধারা ৩০২: হত্যা

ধারা ৩৭৬: ধর্ষণ

ধারা ৩৭৯: চুরি

ধারা ৪২০: প্রতারণা

ধারা ৪৯৯-৫০০: মানহানি

এই ধারাগুলোর উপর গভীর মনোযোগী হতে হবে, কারণ সেগুলো আইনের মৌলিক দিকগুলোর সাথে সম্পর্কিত।

৩. সাক্ষ্য আইন, ১৮৭২ (Evidence Act, 1872)

সাক্ষ্য আইনে বিভিন্ন ধরনের প্রমাণ সংগ্রহ ও উপস্থাপনের বিধান রয়েছে। সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:

ধারা ২৪: স্বীকারোক্তি

ধারা ৩২: মৃতব্যক্তির উক্তি (Dying Declaration)

ধারা ৪৫: বিশেষজ্ঞ সাক্ষ্য

ধারা ৬১: প্রমাণের মৌলিক নীতি

এই আইনে সঠিক প্রমাণ সংগ্রহের গুরুত্ব রয়েছে, বিশেষত অপরাধ মামলার ক্ষেত্রে।

৪. দেওয়ানি কার্যবিধি, ১৯০৮ (Civil Procedure Code, CPC)

দেওয়ানি কার্যবিধির মধ্যে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ধারা রয়েছে, যেমন:

ধারা ৯: দেওয়ানি মামলা দায়েরের এখতিয়ার

ধারা ৩৪: সুদের বিধান

ধারা ১০০-১০৩: আপিলের বিধান

ধারা ১৪৪: প্রতিরোধমূলক আদেশ

এই ধারাগুলোর ওপর গভীরভাবে ফোকাস করা প্রয়োজন, বিশেষ করে মামলার প্রক্রিয়া ও আপিলের নিয়মাবলী সম্পর্কে।

৫. সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইন, ১৮৭৭ (Specific Relief Act, 1877)

এই আইনের মধ্যে দেওয়ানি ও ফৌজদারি মামলা মোকাবেলার জন্য সুনির্দিষ্ট প্রতিকার সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে:

ধারা ৯: অবৈধ দখল উচ্ছেদ

ধারা ৩৪: ঘোষণামূলক ডিক্রি

সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের ধারাগুলি আদালতের আদেশ ও মামলা সংক্রান্ত প্রক্রিয়ার অংশ।

৬. বার কাউন্সিল আদেশ, ১৯৭২ (Bangladesh Legal Practitioners and Bar Council Order)

বার কাউন্সিল আদেশের মধ্যে আইনজীবীদের নিবন্ধন, শৃঙ্খলা এবং কার্যক্রম পরিচালনা সম্পর্কিত ধারা রয়েছে:

ধারা ১৩: আইনজীবীর তালিকাভুক্তি

ধারা ২৭: আইনজীবীর শৃঙ্খলা

ধারা ৪১: বার কাউন্সিলের ক্ষমতা ও দায়দায়িত্ব

এই ধারাগুলোর মধ্যে আইনজীবী হিসেবে কার্যক্রম চালানোর নিয়মাবলী উল্লেখ করা হয়েছে।

বাংলাদেশ বার কাউন্সিল পরীক্ষার কাঠামো ও প্রস্তুতির কৌশল

পরীক্ষার কাঠামো

প্রশ্ন সংখ্যা: ১০০টি এমসিকিউ

প্রতিটি প্রশ্নের মান: ১ নম্বর

মোট সময়: ১ ঘণ্টা

পাশ নম্বর: ৫০%

নেগেটিভ মার্কিং: ০.২৫ নম্বর কাটা হবে ভুল উত্তরের জন্য

প্রস্তুতির জন্য পরামর্শ

পরীক্ষায় সঠিক প্রস্তুতির জন্য

প্রতিদিন নিয়মিত ৫০টি এমসিকিউ প্রশ্ন সমাধান করতে হবে।

আইনের গুরুত্বপূর্ণ ধারাগুলোর ওপর খুঁটিনাটি জানতে হবে।

সঠিক সময় ব্যবস্থাপনা শিখতে হবে।

নেগেটিভ মার্কিংয়ের বিষয়টি মাথায় রেখে শুধুমাত্র নিশ্চিত উত্তর দিন।

বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের এমসিকিউ পরীক্ষা উত্তীর্ণ হতে হলে আইনের বিভিন্ন ধারাগুলোর ওপর সুস্পষ্ট ধারণা থাকা প্রয়োজন। সঠিক প্রস্তুতি এবং কঠোর অধ্যাবসায়ই পরীক্ষায় সফলতার চাবিকাঠি। নিয়মিত অনুশীলন, সঠিক পরিকল্পনা এবং সময় ব্যবস্থাপনা এই পরীক্ষার প্রস্তুতিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

সব পরীক্ষার্থীদের জন্য শুভকামনা!

লেখক: অ্যাডভোকেট মোঃ সরোয়ার হোসাইন লাভলু, অতিরিক্ত জেলা পাবলিক প্রসিকিউটর, চট্টগ্রাম।