ঘুস মুক্ত হোক আমাদের পবিত্র বিচারালয়
মোঃ ফিরোজ মিয়া

ঘুস মুক্ত হোক আমাদের পবিত্র বিচারালয়

মোঃ ফিরোজ মিয়া : সম্প্রতি শরীয়তপুর জেলা আইনজীবী সমিতির একটি রেজুলেশন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। ঐ রেজুলেশনে পেশকার, পিয়নসহ অন্যান্য কোর্ট কর্মচারীদের জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা গ্রহণের হার নির্ধারণ করা হয়েছে। যা সরকারি আইন ও বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের বিধান পরিপন্থী। উক্ত রেজুলেশনে দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দিয়ে আইনজীবীদের নৈতিক অবস্থানকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।

প্রকৃত পক্ষে অধস্তন কোর্টের বাস্তব চিহ্ন ভিন্ন। কোর্টে যারা নিয়মিত আইন পেশা চালিয়ে যাচ্ছেন বা বিচারপ্রার্থী (বাদী/বিবাদী) তারা বলতে পারবে অধস্তন কোর্টের আসল চেহারা। বিচারক, আইনজীবী, কর্মচারী ও বিচারপ্রার্থী (বাদী/বিবাদী) সবাই সমান গুরত্বপূর্ণ৷ এর মধ্যে বিচারপ্রার্থী (বাদী/বিবাদী) দুধের গাভী বা টাকার উৎস, যে ভাবে পারে তার থেকে সবাই আদায় করে নেয়।

প্রবাদ আছে কোর্টের ইট ও বালু ঘুষ খায়। কি শুনতে অবাক লাগে? আসলেই সত‍্য কথা বলতে এটাই বাস্তবতা। জি.আর সেকশন, নকলখানা, পেশকার, পিয়ন কোর্ট কর্মচারীরা আরো বড় ঘুষখোর। আইনজীবীরা তাদের কাছে নিরুপায় ও অসহায়। আপনি সৎ হলে কি হবে! তাদের ঘুষ না দিলে আপনাকে হয়রানী করে আপনার বাপ-দাদার নাম ভুলিয়ে দিবে। আপনার মনে থাকবে না যে, আপনি কোন আইনজীবী সমিতির (জেলা বার) এর সদস‍্য।

আরও পড়ুন : ঘুষ-দুর্নীতি বন্ধে শরীয়তপুর আদালত চত্বরে অভিযোগ বাক্স স্থাপন

অধিকাংশ জি.আর সেকশন, নকলখানা, পেশকার ও পিয়ন সহ অন্যান্য কর্মচারীরা রোজা রেখে ঘুষ দাবী করে। ঘুষের টাকা দিতে একটু দেরী হলে ফোন করে বলে নামাজের সময় চলে যাচ্ছে আমি নামাজে যাবো, তাড়াতাড়ি এসে দিয়ে যান। আমি নারায়ণগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ কোর্টের অধীনস্ত সকল কোর্টের জি.আর সেকশন, নকলখানা, পেশকার ও পিয়ন সহ অন্যান্য কর্মচারীর মধ‍্যে এমন একজন সৎ লোক পাইলাম না যে সে ঘুষ ছাড়া কাজ করে। তবে বহু বিজ্ঞ বিচারক দেখেছি, তাঁরা কতো সৎ ব‍্যক্তি এবং তাদের বদলী বেলায় আমি নিজেই কান্না করেছি তাদের সততার জন‍্য।

বাল‍্যকাল থেকে সবার মুখে উপদেশ শুনতাম সৎ পথে চলবি। লেখাপড়া শেষ করে আইন পেশায় কোর্টে এসে দেখলাম ইবলিশের খালাতো ভাইগুলো আমার অপেক্ষায়। নারায়ণগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ কোর্টের অধীনস্ত জি.আর সেকশন, পেশকার ও পিয়ন সহ অন্যান্য সরকারি কর্মচারীগণের সারা অঙ্গে ব‍্যথা মলম দিব কোথায়? যেখানে যে কাজের জন‍্য যাই, সে খানে তাদের ঘুষ চাই। অন‍্যায় যে করে আর অন‍্যায় যে সহে দুজনেই সমান অপরাধী তাই নিজের চেহারায় মাঝে মধ‍্যে ইবলিশের খালাতো ভাইয়ের চেহারা খুঁজে পাই। জেলা আইনজীবী সমিতি তাদের বিরুদ্ধে শক্ত ও জোরালো কোন পদক্ষেপ নেয় না। ফলে সাধারণ আইনজীবীরা জি.আর সেকশন, পেশকার ও পিয়ন সহ অন্যান্য কোর্ট কর্মচারীদের কাছে ছাগলের তিন নম্বর বাচ্চা হইয়া যাই।

আরও পড়ুন : ঘুষের হার নির্ধারণ, শরীয়তপুর আইনজীবী সমিতির সভাপতিকে শোকজ

নারায়ণগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ কোর্টের অধিনস্ত আমলী কোর্টে দণ্ডবিধি-১৮৬০-এর ১৬১ ও ১৬২ ধারা অনুযায়ী ঘুষ গ্রহণের অভিযোগে এবং দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪-এর আওতায় জি.আর সেকশন, পেশকার ও পিয়ন সহ অন্যান্য সরকারি কর্মচারীগণের বিরুদ্ধে কোন মামলা হয়েছে কি না আমার জানা নেই অথচ দেশের মানুষের ন্যায়বিচারের সর্বশেষ ভরসার আশ্রয়স্থল হলো আদালত।আইনজীবীদের দুর্নীতি করার দরকার হয় না।

একজন আইনজীবী একটি মামলায় কত টাকা নিবেন এটার কোন নিয়মনীতি নাই এবং সততার সহিত তার পারিশ্রমিক হালাল হিসেবে বিবেচিত যাহা আসে বিচারপ্রার্থী (বাদী/বিবাদী) টাকা থেকে। শুধু শরীয়তপুর না, সারা বাংলাদেশের চিত্র আরো খারাপ। উকিল সাহেবরা ঘুষ দেন শুধুমাত্র বিচারপ্রার্থী (বাদী/বিবাদী) কাজের জন‍্য। সময় এসেছে প্রতিবাদ করার আর এ প্রতিবাদ আমার/ আপনার থেকে শুরু হোক। ঘুস মুক্ত হোক আমাদের পবিত্র বিচারালয়।

লেখক : অ্যাডভোকেট , জেলা ও দায়রা জজ কোর্ট, নারায়ণগঞ্জ এবং আইন বিষয়ক সম্পাদক-আইন সহায়তা কেন্দ্র আসক ও মানবাধিকার ফাউন্ডেশন।