নিয়ম নীতি তোয়াক্কা না করে বেআইনিভাবে সদস্য পদ বাতিলের অভিযোগে চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম ১ম যুগ্ম জেলা জজ আদালতে মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) অ্যাডভোকেট মুহাম্মদ আরিফ উদ্দিন এবং বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ৪৪ জন শিক্ষক একটি দেওয়ানি মামলা দায়ের করেছেন।
মামলায় বাদীপক্ষ দেওয়ানি কার্যবিধির আদেশ ৩৯, বিধি ১ ও ২ এবং ধারা ১৫১ এর আওতায় একটি অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা প্রার্থনা করেছেন। এ নিষেধাজ্ঞা মূলত ৯ এপ্রিল ২০২৫ তারিখে অনুষ্ঠিত সমিতির সাধারণ সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষকবৃন্দ এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আইন কর্মকর্তাদের সদস্যপদ বেআইনিভাবে বাতিল করার উদ্দেশ্যে গৃহীত একটি বিতর্কিত সিদ্ধান্তের কার্যকারিতা রোধ চাওয়া হয়েছে।
চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির কারণ দর্শানোর নোটিশে অভিযোগ করা হয়েছিল যে, আইন শিক্ষকগণ আইনপেশা ব্যতিত অন্য পেশায় নিয়োজিত আছেন। বাদীপক্ষের মতে, বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে শিক্ষকতা করাকে ‘আইন পেশা ব্যতীত অন্য পেশা’ হিসেবে অভিহিত করা একটি ভুল ব্যাখ্যার ফল। আইন শিক্ষা আইন পেশারই একটি সম্প্রসারিত অংশ যা এই পেশার জ্ঞানভিত্তিক ভিত মজবুত করে। আইন শিক্ষকতা আইন পেশার মূল উদ্দেশ্য ও চেতনার সঙ্গে সাংঘর্ষিক নয়; বরং এ দুইটি পরস্পর-সম্পূরক সম্পর্ক বিচার বিভাগ ও আইনি কাঠামো কে বিকশিত ও শক্তিশালী করে থাকে। আইন শিক্ষকতা আইন পেশার অবিচ্ছেদ্য অংশ এবং বিশ্বব্যাপী বিচারব্যবস্থায় স্বীকৃত।
আরও পড়ুন : চট্টগ্রাম বারের ৮৬৭ আইনজীবীর সদস্যপদ বাতিল
বাদীপক্ষ অভিযোগ করেছেন, ওই সভা এবং পরবর্তীকালে সমিতির এডহক কমিটি কর্তৃক গৃহীত পদক্ষেপসমূহ আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত এবং বেআইনি। তারা দাবি করেন, এডহক কমিটি ৮৬৭ জন সদস্যকে “নন-প্র্যাকটিশনার” হিসেবে আখ্যায়িত করে সদস্যপদ বাতিলের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে, যার মধ্যে অ্যাডভোকেট মুহাম্মদ আরিফ উদ্দিনসহ ৪৪ জন বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন শিক্ষকও অন্তর্ভুক্ত। একইসাথে, ৮৪ জন সদস্যের চেম্বার বরাদ্দ বাতিলেরও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
বাদীপক্ষের মতে, এডহক কমিটি যেহেতু শুধুমাত্র নির্বাচন পরিচালনা এবং দৈনন্দিন প্রশাসনিক কাজ পরিচালনার উদ্দেশ্যে গঠিত, তাই তাদের পক্ষে সদস্যপদ বাতিল বা চেম্বার বরাদ্দ প্রত্যাহারের মতো গুরুতর সিদ্ধান্ত গ্রহণের কোনো আইনগত অধিকার নেই। তারা আরও উল্লেখ করেন, সমিতির গঠনতন্ত্রে “নন-প্র্যাকটিশনার” শব্দটির কোনো সংজ্ঞা নেই এবং এর ভিত্তিতে সদস্যদের অপসারণেরও কোনো সুস্পষ্ট বিধান নেই।
মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, ৯ এপ্রিলের সাধারণ সভাটি বিশৃঙ্খলাপূর্ণভাবে পরিচালিত হয়েছিল এবং সেখানে মত প্রকাশের স্বাধীনতা বাধাগ্রস্ত হয়। অভিযোগ অনুযায়ী, সভাটি মূলতবি হওয়ার পর এডহক কমিটি একতরফাভাবে ও গোপনে উক্ত সিদ্ধান্তগুলো গ্রহণ করে এবং পরে অসৎ উদ্দেশ্যে সদস্য ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানসমূহে আইনগত কর্তৃত্ব বহির্ভূতভাবে বিভ্রান্তিকর কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠায়। বাদীপক্ষের মতে, এসব পদক্ষেপ ন্যায়বিচার ও সদস্যদের মৌলিক অধিকার পরিপন্থী এবং কিছু স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর প্রভাবে গৃহীত হয়েছে।
এ প্রেক্ষিতে আদালতের কাছে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা চেয়ে বাদীপক্ষ আবেদন করেছে যেন বিবাদীরা ৮৬৭ জন সদস্যের সদস্যপদ বাতিল ও চেম্বার বরাদ্দ প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত কার্যকর থেকে বিরত থাকে। সেইসাথে, চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতিতে তাদের প্রবেশাধিকার, সদস্যপদ সংক্রান্ত অধিকার ও চেম্বার ব্যবহারে যেন কোনও ধরনের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি না করা হয়, সে মর্মে নির্দেশনার আবেদন করা হয়েছে।