বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি মো. আখতারুজ্জামান তার বিচারিক জীবনে সংঘটিত অনিয়মের বিষয়ে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের সামনে দুই ঘণ্টা ধরে ব্যাখ্যা দিয়েছেন। এই শুনানি অনুষ্ঠিত হয় গত মঙ্গলবার (১ জুলাই)।
এর আগে রাষ্ট্রপতির নির্দেশে বিচারপতি আখতারুজ্জামানের বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত শুরুর কথা জানায় সুপ্রিম কোর্ট। গত ২৩ মার্চ রাষ্ট্রপতির নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে এই তথ্য প্রকাশিত হয়।
২০২৪ সালের অক্টোবর মাসে প্রধান বিচারপতির নির্দেশে হাইকোর্ট বিভাগের ১২ জন বিচারপতিকে ছুটিতে পাঠানো হয়।
এদের মধ্যে একজন পদত্যাগ করেছেন, দুইজনকে স্থায়ী নিয়োগ দেওয়া হয়নি, দুজন অবসর নিয়েছেন। বাকি সাতজন বিচারপতির বিষয়ে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল অনুসন্ধান চালিয়ে যাচ্ছে।
এই সাতজনের মধ্যে চারজনের বিরুদ্ধে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত, বাকি তিনজনের বিরুদ্ধে প্রাথমিক অনুসন্ধান চলছে।
এ পর্যন্ত সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের তদন্ত শেষে বিচারপতি খিজির হায়াত এবং খোন্দকার দিলীরুজ্জামানকে রাষ্ট্রপতির আদেশে অপসারণ করা হয়েছে। এই সিদ্ধান্ত গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৯৬(৬) অনুযায়ী নেওয়া হয়।
গত বছরের ১৬ অক্টোবর হাইকোর্ট ঘেরাও করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং আইনজীবী সমাজ। তারা ‘দলবাজ ও দুর্নীতিবাজ বিচারপতিদের’ পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ করে। একইদিন জাতীয় নাগরিক কমিটির লিগ্যাল উইং-ও সুপ্রিম কোর্টের সামনে বিক্ষোভ করে।
এরপর সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল জানান, ১২ বিচারপতিকে বেঞ্চ দেওয়া বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে তখন তাদের নাম প্রকাশ করা হয়নি।
সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী
বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা জাতীয় সংসদের কাছে নিতে ২০১৪ সালে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী এনেছিল তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার। পরবর্তী সময়ে হাইকোর্ট ও আপিল বিভাগ ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেন।
২০১৭ সালে রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে আপিল বিভাগে আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ। এই আবেদন পর্যবেক্ষণসহ নিষ্পত্তি করে গত বছরের ২০ অক্টোবর রায় দেন আপিল বিভাগ। রায়ে সংবিধানের এ-সংক্রান্ত ৯৬ অনুচ্ছেদের ২, ৩, ৪, ৫, ৬, ৭ ও ৮ উপ-অনুচ্ছেদ পুনর্বহাল করা হয়।
এই রায়ের ফলে কোনো বিচারকের বিরুদ্ধে দায়িত্ব পালনে অসমর্থ বা গুরুতর অসদাচরণের অভিযোগ উঠলে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের মাধ্যমে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার বিষয়টি পুনর্বহাল হয়। সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠিত হয় প্রধান বিচারপতি ও পরবর্তী জ্যেষ্ঠ দুজন বিচারপতিকে নিয়ে।
বিচার বিভাগের অভ্যন্তরীণ জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের এ ধরনের কার্যক্রম বিচার বিভাগের স্বচ্ছতা ও আস্থার জায়গা পুনর্গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। বিচারপতি মো. আখতারুজ্জামানের বিরুদ্ধে চলমান তদন্তের ফলাফল ভবিষ্যতে আরও দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।