মো. রুহুল কুদ্দুস (কাজল) : সুপ্রীম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে নতুন বিচারপতি নিয়োগের তোড়জোড় চলছে। সূত্র মতে, সদ্য প্রণীত বিচারক নিয়োগ অধ্যাদেশের আলোকে গঠিত কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে মঙ্গলবার (৮ জুলাই)।
বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পর হাইকোর্ট বিভাগে একদফা বিচারক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। নিয়োগকৃতদের কয়েকজনকে নিয়ে অনেকের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া আছে। আমারও আছে। যেটি আমি মাননীয় আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুলকে জানিয়েছি।
তিনিও জনসম্মুখে বলেছেন, জরুরী ভিত্তিতে বিচারপতি নিয়োগ দিতে গিয়ে তাঁরা প্রত্যেক বিচারপতির সবকিছু যাচাই বাছাই করতে পারেননি। এজন্য নতুন অধ্যাদেশ জারি করেছেন। আসন্ন নিয়োগ এই অধ্যাদেশের আলোকে হবে বলে সহজেই অনুমেয়।
ভবিষ্যৎ নিয়োগের ক্ষেত্রে যেন সুপ্রীম কোর্টের মর্যাদার সাথে যায় এমন ব্যক্তিদেরকে বিচারপতি নিয়োগ দিতে গত মাসে কয়েকজন সিনিয়র আইনজীবীর উপস্থিতিতে মাননীয় প্রধান বিচারপতির প্রতি আমি অনুরোধ জানিয়েছিলাম। ব্যক্তির সততা যেন প্রশ্নাতীত হয় সেটার দিকে বিশেষ নজর দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেছি। আজও বিজ্ঞ অ্যাটর্নি জেনারেলকে বলেছি, এমন ব্যক্তিকে যেন নিয়োগ দেওয়া হয় যে দু’কলম লিখতে পারেন!
প্রশ্নাতীত সততা আর দু’কলম লেখার যোগ্যতাটা আমার কাছে উচ্চ আদালতে বিচারপতি হওয়ার মাপকাঠি।প্রশ্ন উঠতে পারে, আমি কেন সততা আর দু’কলম লেখার যোগ্যতার উপর জোর দিচ্ছি? সহজ উত্তর, বিচারপতি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাঁর আদালতে গিয়ে তাঁকে My Lord বলে সম্ভাষণ করতে হবে। আমি তাকেই Lord এর জায়গায় দেখতে চাই, যিনি Lord হওয়ার যোগ্য। এছাড়া ক্রমেই আমাদের এই আইন পেশাটা মেধাহীন হয়ে পড়ছে। যে সব লোকের বিচারপতি হওয়ার কথা শুনি তরা নিয়োগ পেলে তো এ পেশা ছেড়ে পালাতে হবে!
আরও পড়ুন : তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বিলুপ্তির বিধান বাতিলের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ
একটা পুরনো ঘটনা না বলে পারছি না। সর্বশেষ বিএনপি আমলে হাইকোর্ট বিভাগে বিচারপতি নিয়োগের যে প্রাথমিক তালিকা হয়েছিল, আমার মরহুম সিনিয়র খন্দকার মাহবুব উদ্দিন আহমাদ দু’জন আইনজীবীর ব্যাপারে আপত্তি জানিয়েছিলেন। দু’জনই আমার ঘনিষ্ঠ ছিলেন।
আলাদা ভাবে আমাকে স্যারের আপত্তির বিষয়ে জানিয়ে বললেন, ‘আমার দোষটা কি? স্যার কেন আপত্তি দেন? তুমি একটু স্যারের কাছে জিজ্ঞাসা করো তো!’
তারা আমার এতটাই ঘনিষ্ঠ ছিল যে, আমি অনেকটা তাদের পক্ষে ওকালতির সুরে স্যারকে জিজ্ঞাসা করলাম, তারা তো দেখি ভালো। স্যার, আপনি কেন আপত্তি করেন?
স্যারের উত্তর ছিল, এরা দু’জনের কেউ সততা ধরে রাখতে পারবে না। ঘুষ খাবে, দুর্নীতি করবে। রেফারেন্স হিসাবে তিনি তখন কর্মরত মোটামুটি দুর্নীতিবাজ একজন বিচারকের কথা উল্লেখ করে বললেন, তাঁর নিয়োগেরও স্যার বিরোধিতা করেছিলেন সম্ভাব্য দুর্নীতিবাজ হয়ে উঠবেন এই আশঙ্কায়।
যাইহোক স্যারের আপত্তি সত্ত্বেও দুজন আইনজীবী বিচারপতি হিসাবে নিয়োগ পেলেন। অনেক বছর বিচারকাজ করলেন। আবার স্বীকৃতিও পেলেন মহা দুর্নীতিবাজ হিসেবে। আল্লাহর কি বিচার, অত্যন্ত অপমানজনকভাবে দু’জনকে তাদের মেয়াদের আগেই দুর্নীতির অভিযোগে বিদায় নিতে হয়েছে। বিগত ফ্যাসীবাদ আমলে নিয়োগকৃত এমন দুর্নীতিবাজের সংখ্যা নগণ্য না।
আমার ৩০ বছরের ওকালতি জীবন। আইনজীবীদের সঙ্গে আমার নিরন্তর উঠাবসা। আমার বিশ্বাস, যোগ্যতা ও সততার মাপকাঠিতে সুপ্রীম কোর্টের একজন আইনজীবীকে মূল্যায়ন করার যোগ্যতা কিছুটা হলেও অর্জন করতে পেরেছি। তেমনি পেরেছি, আমার মরহুম সিনিয়রের মতো ভবিষ্যৎ দুর্নীতিবাজ বিচারপতি সম্পর্কে আঁচ করতে!
সৎ ও মেধাবী প্রত্যেককে সুপ্রীম কোর্টের বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দিতে সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।
লেখক : ব্যারিস্টার মো. রুহুল কুদ্দুস (কাজল); সিনিয়র অ্যাডভোকেট, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট এবং এক্সিকিউটিভ কমিটি চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ বার কাউন্সিল।