আফগানিস্তানে নারী ও কিশোরীদের অধিকার হরণের অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) তালেবানের শীর্ষ দুই নেতার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে।
গতকাল মঙ্গলবার আইসিসি এক বিবৃতিতে জানায়, তালেবান ক্ষমতা গ্রহণের পর দেশটিতে নারীদের ওপর ধারাবাহিক নিপীড়নের ঘটনায় তালেবানের সর্বোচ্চ নেতা হাইবাতুল্লাহ আখুন্দজাদা এবং প্রধান বিচারপতি আবদুল হাকিম হাক্কানির বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের যুক্তিসংগত ভিত্তি রয়েছে।
২০২১ সালে তালেবান আফগানিস্তানে পুনরায় ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে নারী ও কিশোরীদের শিক্ষার অধিকার, চাকরি, স্বাধীন চলাফেরা এবং জনসমক্ষে মত প্রকাশ– এসব ক্ষেত্রেই একের পর এক বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। ১২ বছরের বেশি বয়সী মেয়েদের বিদ্যালয়ে যাওয়া নিষিদ্ধ করা হয়েছে। একইসঙ্গে নারী কর্মীদের অনেক সরকারি ও বেসরকারি পেশা থেকেও সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
আইসিসির বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “তালেবান নারীদের উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বিচ্ছিন্ন করে তাদের মৌলিক অধিকার ও স্বাধীনতা হরণ করেছে।”
জাতিসংঘ এসব বিধিনিষেধকে “লিঙ্গবৈষম্য ও মানবাধিকারের মারাত্মক লঙ্ঘন” হিসেবে আখ্যায়িত করেছে।
আইসিসির এই পদক্ষেপে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে তালেবান সরকার। তারা জানিয়েছে, তালেবান আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতকে স্বীকৃতি দেয় না।
এ পরোয়ানাকে তারা “শত্রুতামূলক ও মুসলমানদের বিশ্বাসের প্রতি অপমান” হিসেবে উল্লেখ করেছে। তাদের দাবি, তারা ইসলামি আইন ও আফগান সংস্কৃতির আলোকে নারীদের অধিকারকে সম্মান করে।
গণহত্যা, মানবতাবিরোধী অপরাধ ও যুদ্ধাপরাধের ক্ষেত্রে যখন কোনো রাষ্ট্র যথাযথ বিচার করে না বা করতে অপারগ হয়, তখন আইসিসি আন্তর্জাতিক আইনের আওতায় অপরাধীদের বিচারের মুখোমুখি করার পদক্ষেপ নেয়।
আফগানিস্তানের বর্তমান পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে আইসিসি মনে করছে, নারীদের অধিকার হরণের ঘটনাগুলো মানবতাবিরোধী অপরাধের আওতায় পড়ে এবং আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে বিচারযোগ্য।
এই গ্রেপ্তারি পরোয়ানা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তালেবানের অবস্থান এবং নারীদের প্রতি তাদের নীতির বিরুদ্ধে একটি শক্ত বার্তা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। বিচারিক প্রক্রিয়ার অগ্রগতি নির্ভর করবে ভবিষ্যতে আফগানিস্তানের রাজনৈতিক অবস্থান এবং আন্তর্জাতিক সমর্থনের ওপর।