আদালতে ছেলের বিরুদ্ধে মামলা করলেন বয়োবৃদ্ধ বাবা
চট্টগ্রাম আদালত

বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ছয় বছর সংসার, সম্পর্ক অস্বীকার করায় যুবকের তিন বছরের কারাদণ্ড

চট্টগ্রামে ছয় বছর ধরে স্ত্রী পরিচয়ে এক নারীর সঙ্গে সংসার করে শেষমেশ বিয়ের সম্পর্ক অস্বীকার করার দায়ে এক যুবককে তিন বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একইসঙ্গে তাকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। অনাদায়ে আরও এক মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) চট্টগ্রামের চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কাজী সহিদুল ইসলাম এই রায় ঘোষণা করেন।

দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি হলেন হাটহাজারী উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়নের বরিশাল কলোনির রুকু মিয়ার ছেলে মো. মিজান (২৫)।

মামলার বাদী মিজানের স্ত্রী দাবি করা রুবি আকতার (২২) একই উপজেলার নুরুজ্জামান হাজীর বাড়ির মো. রফিকের মেয়ে।

কী ঘটেছিল?

২০১৮ সালের ৫ জুলাই পারিবারিকভাবে মিজান ও রুবি আকতারের বিয়ে হয়। তবে রুবির বয়স তখন ১৮ পূর্ণ না হওয়ায় নিয়মিত কাবিননামা রেজিস্ট্রি করা হয়নি। এ সময় ৩০০ টাকার নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে ৩ লাখ টাকা মোহরানার অঙ্গীকারনামা করা হয়। বয়স পূর্ণ হলে রেজিস্ট্রি করার শর্ত ছিল।

বিয়ের পর থেকে রুবি স্বামীর বাড়িতেই বসবাস করছিলেন। ২০১৯ সালের ১০ সেপ্টেম্বর তার বয়স ১৮ পূর্ণ হলে কাবিননামা রেজিস্ট্রির জন্য স্বামী মিজানকে চাপ দেন। কিন্তু তিনি নানা অজুহাতে তা এড়িয়ে যান।

২০২৩ সালের ১১ মার্চ রেজিস্ট্রি প্রসঙ্গে কথা বললে মিজান ৩ লক্ষ টাকা যৌতুক দাবি করেন। যৌতুক না দিলে প্রেমিকা শামসুন নাহারকে বিয়ে করার হুমকি দেন এবং রুবিকে মারধর করে বাড়ি থেকে বের করে দেন।

এরপর স্থানীয়ভাবে একাধিকবার আপসের চেষ্টা ব্যর্থ হয়। ২০২৩ সালের ২০ মে মিজানের বাড়িতে গিয়ে রুবি ও সাক্ষীরা মিজানকে অনুরোধ করলে তিনি বলেন, “তোকে আমি কখনো বিয়ে করিনি, তুই আমার বউ না।” এমনকি অঙ্গীকারনামা ও কাজিকে ‘ভুয়া’ আখ্যা দিয়ে রুবিকে শুধু ‘ব্যবহার’ করার কথা স্বীকার করেন। মামলা করলে হত্যার হুমকিও দেন।

আদালতের রায়

রুবি আকতার বাদী হয়ে চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ফৌজদারি মামলা করেন।

বাদীপক্ষের আইনজীবী মোহাম্মদ সাইফ উদ্দিন বলেন, “আদালত দণ্ডবিধি ১৮৬০-এর ৪৯৩ ধারায় আসামিকে দোষী সাব্যস্ত করে রায় দিয়েছেন। প্রতারণার মাধ্যমে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের আড়ালে ছয় বছর সংসার করেও তা অস্বীকার করায় আদালত এই যুগান্তকারী রায় দিয়েছেন। এতে ভুক্তভোগী ন্যায়বিচার পেয়েছেন।”

আদালতের এই রায় সমাজে প্রতারণার মাধ্যমে সম্পর্ক গড়ে তোলা এবং পরে তা অস্বীকারের প্রবণতা রোধে একটি দৃষ্টান্তমূলক উদাহরণ বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা।