চার দশক ধরে পরিত্যক্ত থাকা ঠাকুরগাঁও বিমানবন্দর চালু করতে উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠনে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিষ্ক্রিয়তা কেন অবৈধ হবে না—এই মর্মে রুল জারি করেছে হাইকোর্ট।
রোববার (২০ জুলাই ২০২৫) বিচারপতি ফাহমিদা কাদের ও বিচারপতি সৈয়দ জাহেদ মনসুর এর হাইকোর্ট বেঞ্চ এই আদেশ দেন।
আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো. কামরুজ্জামান, আর রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল ইকরামুল কবির ও মহিউদ্দিন হানিফ।
আদালত মন্ত্রিপরিষদ সচিব, বেসামরিক বিমান ও পর্যটন সচিবসহ সংশ্লিষ্টদেরকে চার সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে নির্দেশ দিয়েছে।
এর আগে গত ২ জুন, ঠাকুরগাঁও বিমানবন্দর চালু করতে সরকারকে আইনি নোটিশ পাঠান অ্যাডভোকেট কামরুজ্জামান। কিন্তু নোটিশের কোনো সদুত্তর না আসায় তিনি হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন।
অ্যাড. কামরুজ্জামান জানান, অতীতে বিভিন্ন সময় সরকারের কর্তাব্যক্তিরা এই বিমাবন্দরটি চালুর কথা ফলাও করে প্রচার করলেও প্রকৃতপক্ষে কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করেনি, দৃশ্যমান বা বাস্তব কোনো পদক্ষেপও নেয়নি।
তিনি আরও বলেন,
ঠাকুরগাঁও বিমানবন্দরটি চালু না করার একটি গোপনীয় কৌশলগত কারণ রয়েছে। সেটি হলো—আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশের অদৃশ্য হস্তক্ষেপ। এই কারণে কোনো সরকারই বিমানবন্দরটি চালু করতে পারেনি। ঠাকুরগাঁও বিমানবন্দরটি ভারতের ‘চিকেননেক’ এর খুবই সন্নিকটে অবস্থিত এবং ভৌগলিক কৌশলগত দিক থেকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় অবস্থিত। ঠাকুরগাঁও বিমানবন্দরটি চালু হলে এই এলাকায় ভারতীয় আধিপত্যের অবসান হবে। এই বিমানবন্দরটি বেসামরিক ও সামরিক উভয় কাজে ব্যবহৃত হওয়ার কার্যকারণ রয়েছে। এই এলাকার মানুষের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য হলেও বিমানবন্দরটি চালু করা একান্ত প্রয়োজন। ১৯৪০ সালে ব্রিটিশরা যখন এই বিমানবন্দরটি প্রতিষ্ঠা করে তখন এটি বেসামরিক ও সামরিক উভয় কাজে ব্যবহৃত হয়েছিল। বর্তমানেও এই বিমানবন্দরটি প্রতিষ্ঠা করে তখন এটি বেসামরিক ও সামরিক উভয় কাজে ব্যবহার করার আবশ্যকতা রয়েছে।
অ্যাড. কামরুজ্জামান বলেন,
যাত্রীর অভাবে বিমানবন্দরটি বন্ধ আছে বলে বলা হলেও প্রকৃতপক্ষে এই যুক্তি সঠিক নয়। বর্তমানে ঠাকুরগাঁও ও পঞ্চগড়ে বিমানযাত্রীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। সৈয়দপুর বিমাবন্দরের অধিকাংশ যাত্রী ঠাকুরগাঁও ও পঞ্চগড়ের। প্রতিদিন ঠাকুরগাঁও ও পঞ্চগড় থেকে প্রায় ৯০-১০০ জন যাত্রী বিমানে যাতায়াত করেন। ঠাকুরগাঁও থেকে সৈয়দপুর বিমানবন্দর প্রায় ১০০ কিমি দূরে, যেতে প্রায় ৩/৪ ঘণ্টা সময় লাগে, সৈয়দপুর হয়ে বিমানে ঢাকায় যাওয়ার যেই সময়, খরচ ও কষ্ট হয় তাতে রেলওয়েতে যাওয়া অনেক সহজসাধ্য।
তিনি বলেন,
বর্তমানে হাজার হাজার ক্ষুদ্রশিল্প উদ্যোগ গড়ে উঠেছে। এই বিমানবন্দরটি ঠাকুরগাঁও সদর, রুহিয়া, শিবগঞ্জ, পীরগঞ্জ, রাণীশংকৈল, বালিয়াডাঙ্গি, হরিপুর, পঞ্চগড় সদর, দেবীগঞ্জ, বোদা, আটোয়ারী, তেঁতুলিয়া, দিনাজপুর ও নীলফামারীর কিছু এলাকার প্রায় ৪৫ লাখ মানুষের কেন্দ্রস্থলে রয়েছে। বিমানবন্দরটির অভাবে এই এলাকায় ভারী শিল্প, কল-কারখানা গড়ে উঠছে না, অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্ভব হচ্ছে না, ৪৫ লাখ মানুষের ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন হচ্ছে না।
লিগ্যাল নোটিশে যেসব বিষয়গুলো সরকারের পক্ষ থেকে প্রতিবেদন প্রকাশ করতে বলা হয়, তা হলো—ঠাকুরগাঁও বিমানবন্দর চালু করতে কী কী প্রয়োজন? বিমানবন্দরটি চালু না থাকার ফলে এই এলাকার ৪৫ লাখ মানুষ, ব্যবসা-বাণিজ্য ও উদ্যোক্তাদের ওপর কিরূপ প্রভাব পড়ছে। নেপাল-ভুটান-বাংলাদেশ ক্রসবর্ডার বাণিজ্য-পর্যটনের সম্ভাব্যতা এবং এই এলাকার ভৌগলিক কৌশলগত দিক বিবেচনায় এখানকার মানুষ ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় বিমানবন্দরের সম্ভাব্য ব্যবহার বিষয়ে প্রতিবেদন প্রস্তুত ও প্রকাশ করা।