চেকের মামলা দেওয়ানী মোকদ্দমার মতো সংশোধনী ও প্রাসঙ্গিক আইন
অ্যাডভোকেট সিরাজ প্রামাণিক

মামলা-মোকদ্দমা তুলে নেয়ার সহজ পদ্ধতি!

সিরাজ প্রামাণিক : আপনি থানা কিংবা কোর্টে মামলা করেছেন। পরবর্তীতে মামলা চলমান অবস্থায় আপনার দাবী বা ক্ষতিপূরণ বুঝে পেয়েছেন কিংবা প্রতিপক্ষের স্থানীয়ভাবে আপোষ মীমাংসা হয়ে গেছে কিংবা প্রতিপক্ষের ক্ষমা করে দিয়েছেন কিংবা কিংবা ভুলবশত বা চাপে পড়ে কারো বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। এখন চিন্তা করছেন মামলা কিভাবে তুলে নিবেন। নো টেনশন। আইন অনুযায়ী, মামলা প্রত্যাহার বা তুলে নেয়ার সুযোগ আছে।

মামলা সাধারণত দুই ধরনের হয়। একটি জি.আর অপরটি সি.আর মামলা। জি.আর মামলা থানায় হয়ে থাকে। আর সিআর মামলা হয় হয় কোর্টে। থানায় যে জি.আর মামলা হয়, সে মামলায় বাদীর পক্ষে রাষ্ট্র নিজেই আইনজীবী নিযুক্ত করেন, যাদের বলা হয় হয় পাবলিক প্রসিকিউটর বা রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি কিংবা সংক্ষেপে পি.পি। আর সিআর মামলা, যা কোর্টে করা হয়, সেই মামলায় নালিশকারী বা বাদীকে ব্যক্তিগতভাবে আইনজীবী নিযুক্ত করে মামলা পরিচালনা করতে হয়।

যেসব জি.আর মামলায় আপোষ হয়ে যায় কিংবা মামলাটি চলার জন্য যথেষ্ট সাক্ষ্য প্রমাণ না পওয়া যায়, সেক্ষেত্রে রাষ্ট্র নিজেই অর্থাৎ পি.পি’র পক্ষ থেকে ফৌজদারি কার্যবিধির ৪৯৪ ধারা মতে আদালতের অনুমতিক্রমে মামলা প্রত্যাহারের আবেদন করতে পারেন। সেটা সম্ভব না হলে আসামীর বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের পর আপনি এজাহারকারী হিসেবে নিজে ও অন্যান্য সাক্ষীদের মাধ্যমে আদালতে আপোষমূলে সাক্ষ্য প্রদান করে আসামীকে খালাসের ব্যবস্থা করতে পারেন। এমনকি হত্যা মামলার মতো অপরাধ সংগঠিত হলেও।

মামলার ভিকটিম বা এজাহারকারী যদি মনে করে রাষ্ট্রপক্ষ অহেতুক তাদের মামলাটি প্রত্যাহার করে নিয়েছে, সেক্ষেত্রে ক্ষেত্রবিশেষে দায়রা জজ আদালত কিংবা হাইকোর্ট বিভাগে রিভিশন দায়ের করে প্রতিকার পেতে পারেন।

আরও পড়ুন : মিথ্যা মামলাকারী বাদী ও সাক্ষীর বিরুদ্ধে কিভাবে মানহানি মামলা করবেন?

আর সি.আর মামলায় নালিশকারী বা তাঁর পক্ষ থেকে নিযুক্ত আইনজীবী ফৌজদারি কার্যবিধির ২৪৮ ধারা মতে মামলা প্রত্যাহারের আবেদন করতে পারেন। উল্লেখ্য যে, এই ধারাটি শুধু নিষ্পত্তি যোগ্য মামলার ক্ষেত্রে, যা ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৪৫ ধারায় বর্ণনা করা হয়েছে। এক্ষেত্রেও বিচারক যদি বাদীর মামলা প্রত্যাহারের দরখাস্ত গ্রহণ না করেন; সেক্ষেত্রে আসামীর বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের পর আপনি এজাহারকারী হিসেবে নিজে ও অন্যান্য সাক্ষীদের মাধ্যমে আদালতে আপোষমূলে সাক্ষ্য প্রদান করে আসামীকে খালাসের ব্যবস্থা করতে পারেন।

আর সিভিল কোর্টে দেওয়ানি মোকদ্দমা বা জমি জমার মোকদ্দমা প্রত্যাহার বিষয়ে বলা হয়েছে, যে কোনো সময়ে বাদী সব বা যে কোনো বিবাদীর বিরুদ্ধে মোকদ্দমা প্রত্যাহার করতে বা আংশিক দাবি পরিত্যাগ করতে পারেন। এ বিষয়ে দেওয়ানি কার্যবিধির ২৩ আদেশের ১ নিয়ম এ বিস্তারিত বলা আছে। তবে এক্ষেত্রেও আদালতকে আইনগতভাবে সন্তুষ্ট করতে হবে।

মনে রাখতে হবে যে, নির্ধারিত প্রক্রিয়া অনুসরণ করে মামলা প্রত্যাহার করা হলে একই বিষয়ে আবার নতুন করে মামলা করা যায় না। দেওয়ানি মামলার ‘রেস জুডিকাটা’ বা দোবারা নীতি এবং ফৌজদারি মামলার ‘ডাবল জিওপারডি’ বা দোবারা সাজা নীতির আলোকে এ ধরনের মামলাকে বাঁধা দেওয়া হয়।

তবে উচ্চতর আদালতে রিভিশন দায়ের করে আদালতকে যদি সন্তুষ্ট করা যায়, সেক্ষেত্রে পুনর্বিচার কিংবা পুনর্তদন্তের নির্দেশ ন্যায় বিচারের স্বার্থে আদালত দিতে পারেন। হাইকোর্ট বিভাগের সহজাত ক্ষমতার অধীনে এধরনের আদেশ দেয়ার সুযোগ আছে।

লেখক : বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী, আইনগ্রন্থ প্রণেতা ও পিএইচ. ডি ফেলো। ই-মেইল: seraj.pramanik@gmail.com