এক বিচারককের ওএসডির দিনে অন্য বিচারকের আবেগঘন স্ট্যাটাস
বিচারক (প্রতীকী ছবি)

জামিন আদেশের কারণে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট বদলি

ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জিয়া উদ্দিন আহমেদকে মাত্র ছয় মাসের মাথায় গাজীপুরে সিনিয়র সহকারী জজ পদে বদলি করা হয়েছে। এ বদলি ঘিরে নানা প্রশ্ন উঠেছে। এর আগে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের এক রহস্যজনক অভিযানের পর আদালতের জামিন আদেশকে কেন্দ্র করে গণমাধ্যমে বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচারিত হয়।

গত ১৮ আগস্ট রাজধানীর কলাবাগান থানাধীন একটি ওষুধ আমদানি–রপ্তানি প্রতিষ্ঠানে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর অভিযান চালায়। এ সময় প্রতিষ্ঠানটির মালিক তরিকুল ইসলামসহ দুইজনকে আটক করা হয় এবং বিপুল পরিমাণ ওষুধ জব্দ করা হয়। পরে তাদের বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০১৮ এর অধীনে মামলা দায়ের করা হয়।

অভিযোগ ও পাল্টা অভিযোগ

মামলার অভিযোগে বলা হয়, আটক ব্যক্তিরা বিদেশ থেকে মাদকজাত দ্রব্য আমদানি করে অন্য দেশে রপ্তানি করছিলেন। জব্দ তালিকায় দেখা যায়, অভিযানে মোট ১১ প্রকার ওষুধ জব্দ করা হয়, যার মধ্যে ৫ প্রকার ভারত থেকে আমদানিকৃত।

অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়, এই ৫ প্রকার ভারতীয় ওষুধ মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন-এর শিডিউলে অন্তর্ভুক্ত। তবে আইনে স্পষ্ট বলা আছে— যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদিত লাইসেন্স থাকলে এ ধরনের ওষুধের ব্যবসা বৈধ।

আসামিপক্ষের দাবি, তাদের সব ধরনের বৈধ লাইসেন্স রয়েছে এবং তারা দীর্ঘদিন ধরে সরকারকে কর প্রদান করে বৈধভাবে ব্যবসা পরিচালনা করছেন।

তাদের অভিযোগ, প্রতিদ্বন্দ্বী ব্যবসায়ীদের প্ররোচনায় এবং মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কিছু কর্মকর্তার যোগসাজশে এ অভিযান চালানো হয়েছে।

আরও অভিযোগ করা হয়, অভিযানের সময় কর্মকর্তারা দোকানের কর্মচারীদের মারধর করেন এবং আইন অনুযায়ী শিডিউলভুক্ত নয় এমন ওষুধও জব্দ করে নিয়ে যান।

আদালতের অবস্থান

আদালতের নথিপত্র পর্যালোচনায় দেখা যায়, ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট উভয় পক্ষের বক্তব্য শুনে জামিন মঞ্জুর করেন। কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়— আসামিপক্ষের বৈধ ড্রাগ লাইসেন্স ও অন্যান্য কাগজপত্র আদালতে উপস্থাপিত হয়, পাশাপাশি জব্দ করা ওষুধগুলো আসলে মাদক কি না, সে বিষয়ে পরীক্ষার ফলাফল আদালতের কাছে ছিল না। এ কারণে আদালত পরবর্তী ধার্য তারিখ পর্যন্ত আসামিদের জামিনে মুক্তির আদেশ দেন।

তবে ২১ আগস্ট ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালত আসামিদের জামিন বাতিল করে তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন।

বিতর্কিত ওষুধ ও সাজা

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জব্দকৃত ওষুধগুলোর মধ্যে ট্রামাডল (Tramadol) রয়েছে, যা কিছু দেশে অপব্যবহারের কারণে নিয়ন্ত্রিত। তবে এটি আদৌ মাদকদ্রব্য হিসেবে গণ্য হবে কিনা, তা নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে মতভেদ আছে। ট্রামাডল অবৈধভাবে ব্যবহার করলে এর সর্বোচ্চ শাস্তি হতে পারে ১০ বছর। কিন্তু আদালতের নথি অনুযায়ী, অভিযানে মোট ৩১ হাজার পিস ট্রামাডল জব্দ করা হয়, যার ওজন ৭.৯ কেজি। এ অপরাধ প্রমাণিত হলে সর্বোচ্চ ৭ বছরের সাজা হতে পারে। কিন্তু বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে এ সংখ্যা বাড়িয়ে দেড় লাখ পিস বলে প্রচার করা হয়।

গণমাধ্যমের বিভ্রান্তিকর প্রচার

অভিযানের পর কয়েকটি গণমাধ্যমে আসামিদের ‘মাদক চোরাচালানকারী’ হিসেবে তুলে ধরা হয় এবং আদালতের জামিন আদেশ নিয়ে বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচারিত হয়। এতে আদালতের আদেশ নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়।

আদালত সংশ্লিষ্টরা জানান, ম্যাজিস্ট্রেট আদালত যেকোনো মামলায় নথিপত্র দেখে সন্তুষ্ট হলে জামিন বিবেচনা করতে পারেন। এই মামলাতেও জামিন মঞ্জুরের ক্ষেত্রে কোনো ত্রুটি ছিল না। বরং কিছু গণমাধ্যম একপাক্ষিক সংবাদ প্রকাশ করে আদালতকে বিতর্কিত করার চেষ্টা করেছে।

অধিদপ্তরের মন্তব্য

এ বিষয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “অভিযানে কোনো ত্রুটি থাকলে সেটি আদালত বিবেচনা করবেন।”