বরিশাল জেলা ও দায়রা জজ আদালত প্রাঙ্গণে বিচার প্রার্থীদের বিশ্রামের জন্য নির্মিত আধুনিক বিশ্রামাগার ‘ন্যায়কুঞ্জ’ এখন রূপ নিয়েছে খাবারের হোটেলে। এতে প্রতিদিন আদালতে আসা বিচার প্রার্থীরা বঞ্চিত হচ্ছেন বিশ্রামের সুযোগ থেকে, যা নিয়ে দেখা দিয়েছে ক্ষোভ ও সমালোচনা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বিশ্রামাগারে সকাল থেকেই চলছে খাবার বিক্রি। পরোটা, ভাজি, সিঙ্গারা, সমুচা, চা—সবই এখন সেখানে সহজলভ্য। বসার জায়গাগুলো খাবার টেবিলে পরিণত হওয়ায় বিশ্রামের কোনো পরিবেশ নেই। ফলে দূর-দূরান্ত থেকে আসা বিচার প্রার্থীদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হচ্ছে কোনো বিশ্রামের সুযোগ ছাড়াই।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ৪৬ লাখ টাকা ব্যয়ে বরিশাল জেলা ও দায়রা জজ আদালত চত্বরে বিচারপ্রার্থীদের বিশ্রামের জন্য নির্মিত ‘ন্যায়কুঞ্জ’ গত বছরের ৭ মার্চ উদ্বোধন করেছেন বিচারপতি মো. আকরাম হোসেন চৌধুরী। প্রায় আটশ’ বর্গফুট জায়গাজুড়ে নির্মিত বিশ্রামাগারে ৪০ জনের বসার ব্যবস্থা, নারী-পুরুষের জন্য পৃথক ওয়াশরুম, একটি ব্রেস্টফিডিং জোন, বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা এবং একটি ছোট টি-স্টল ছিলো।
আরও পড়ুন : আইনজীবীর সঙ্গে সাক্ষাতের অধিকার লঙ্ঘন, গুলশান থানার ওসিকে শোকজ
কিন্তু বছর না যেতেই সেটি মূল উদ্দেশ্য থেকে সরে গিয়ে বাণিজ্যিক ব্যবহারে পরিণত হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বিচারপ্রার্থীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বিচারের জন্য দূর-দূরান্ত থেকে এসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়। বিশ্রামাগারে ঢুকলেই এখন খাবারের অর্ডার করতে হয়। নতুবা এখানে বসতে দেওয়া হয় না, এটি অন্যায়। তারা (বিচারপ্রার্থীরা) দ্রুত প্রশাসনের হস্তক্ষেপে ‘ন্যায়কুঞ্জ’ থেকে খাবার হোটেল অপসারণের দাবি জানিয়েছেন।
আইনজীবীরাও উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, ন্যায়কুঞ্জ নির্মাণের উদ্দেশ্য ছিল মানবিক সেবা নিশ্চিত করা, কিন্তু তা বাণিজ্যিক ব্যবহারে পরিণত হওয়ায় আদালতের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হচ্ছে। তাঁরা দ্রুত প্রশাসনের হস্তক্ষেপ এবং ন্যায়কুঞ্জ থেকে খাবার হোটেল অপসারণের দাবি জানিয়েছেন।
বিচারপ্রার্থীদের বিশ্রামাগারে খাবার হোটেল পরিচালনার বিষয়ে বরিশাল জেলা ও দায়রা জজ আদালতের নাজির সৈয়দ মাইনুল হাসান বলেন, কারা এ হোটেল পরিচালনা করছেন সে বিষয়ে কোনো লিখিত কাগজপত্র আমার কাছে নেই।
তবে আদালতের নাজির আওলাদ হোসেন জানিয়েছেন, আমি হোটেল পরিচালনার দায়িত্বে নিয়ে তা ইদ্রিস সরদারকে বুঝিয়ে দিয়েছি। এখন তিনি (ইদ্রিস) হোটেল পরিচালনা করছেন।
হোটেল পরিচালনাকারী ইদ্রিস সরদার বলেন, বিচার প্রার্থীরা কোথায় বসবেন, সেটা আমাদের দেখার বিষয় নয়। আমি কর্তৃপক্ষের নির্দেশে এখানে হোটেল চালাচ্ছি। তবে কার নির্দেশ নিয়ে হোটেল ব্যবসা চালাচ্ছেন সে বিষয়ে তিনি (ইদ্রিস) কোনো কথা বলতে রাজি হননি।
সূত্র : জনকণ্ঠ