ছবি : মৃত্যুদন্ড হওয়া আসামী জাহাঙ্গীর আলম (ইনসেটে নিহত সহোদর হাসান ও হোসাইন)
ছবি : মৃত্যুদন্ড হওয়া আসামী জাহাঙ্গীর আলম (ইনসেটে নিহত সহোদর হাসান ও হোসাইন)

কক্সবাজারে জোড়া শিশু হত্যা মামলায় ৫ জনের মৃত্যুদণ্ড, ৪ জনের যাবজ্জীবন

মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী : কক্সবাজারের রামুতে দুই শিশুকে অপহরণের পর হত্যার মামলায় ৫ জনকে মৃত্যুদণ্ড ও ৪ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একইসঙ্গে প্রত্যেককে ২০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে, অনাদায়ে আরও এক বছর করে বিনাশ্রম কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে।

মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) কক্সবাজার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক মোহাম্মদ ওসমান গণি এই রায় ঘোষণা করেন।

রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন পিপি অ্যাডভোকেট মীর মোশাররফ হোসাইন টিটু এবং আসামিপক্ষে অ্যাডভোকেট ফরিদুল আলম।

জাহাঙ্গীর আলম (আবদুস শুক্কুরের পুত্র), আবদুস শুক্কুর (মৃত আবুল হোসেনের পুত্র), আলমগীর হোসেন ওরফে বুলু এবং মিজানুর রহমান (আমির হোসেনের পুত্র), ও শহীদুল্লাহ (আবদুল মাবুদ মধুর পুত্র)।

আবদুল মজিদ বদাইয়া (হাজী জাকের আহমদের পুত্র), ফাতেমা খাতুন (মো. নবীর স্ত্রী), রাশেদা (আমির হোসেনের স্ত্রী) ও লায়লা বেগম (আবদুস শুক্কুরের স্ত্রী)।

সব আসামির বাড়ি কক্সবাজারের রামু উপজেলার গর্জনিয়া ইউনিয়নের বড়বিল গ্রামে। রায় ঘোষণার সময় কেবল মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি জাহাঙ্গীর আলম আদালতে উপস্থিত ছিলেন, বাকিরা পলাতক।

আরও পড়ুনআন্তর্জাতিক অপরাধে অভিযুক্ত সেনা কর্মকর্তা: কে করবে গ্রেপ্তার—দেওয়ানি পুলিশ নাকি সেনা কর্তৃপক্ষ?

২০১৬ সালের ১৭ জানুয়ারি বড়বিল গ্রামের দোকানকর্মী মো. ফোরকান প্রকাশ মিন্টুর দুই ছেলে—হাসান (১১) ও হোসাইন (৮)—কে পাখির ছানা দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে অপহরণ করা হয়। মুক্তিপণ না পেয়ে অপহরণকারীরা তাদের হত্যা করে।

দুই দিন পর ভুক্তভোগী পিতা ফোরকান মিন্টু নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ও দণ্ডবিধি অনুযায়ী রামু থানায় মামলা করেন (মামলা নং ২০/২০১৬, জিআর নং ২০/২০১৬, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন মামলা নং ১৭৭/২০১৮)।

তদন্ত শেষে ১৫ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করা হয়। ১৮ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য, আলামত, ডাক্তারি ও ময়নাতদন্ত রিপোর্ট পর্যালোচনা শেষে আদালত মঙ্গলবার রায় ঘোষণা করেন।

আসামি জাহাঙ্গীর আলম ১৬৪ ধারায় আদালতে দোষ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছিলেন।

আদালত রায়ে ৫ জনকে মৃত্যুদণ্ড এবং ফৌজদারী দণ্ডবিধির ৩০২ ও ৩৪ ধারায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। অপর ৪ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড দেন। একজন আসামি মৃত্যুবরণ করায় মামলাটি তার বিরুদ্ধে নিষ্পত্তি হয়, আর ৬ জনকে খালাস দেওয়া হয়।

রায়ে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, সব অর্থদণ্ডের টাকা ভিকটিম পরিবারের কাছে পৌঁছে দিতে হবে। এজন্য কক্সবাজারের জেলা প্রশাসককে দণ্ডিত আসামিদের স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি ক্রোক করে বা নিলামে বিক্রি করে অর্থ আদায়ের নির্দেশ দেওয়া হয়।

পিপি অ্যাডভোকেট মীর মোশাররফ হোসাইন টিটু বলেন, “রাষ্ট্রপক্ষ অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছে। রায়ে আমরা সন্তুষ্ট।”