চব্বিশের জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালসহ তিনজনের রায়ের দিন নির্ধারণ ঘিরে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এলাকায় নেওয়া হয়েছে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) সকাল থেকেই ট্রাইব্যুনাল চত্বর ও আশপাশের এলাকায় মোতায়েন করা হয়েছে সেনাবাহিনী, র্যাব, পুলিশ, বিজিবি এবং সাদা পোশাকের গোয়েন্দা সদস্যদের। আদালতের চারপাশে স্থাপন করা হয়েছে একাধিক নিরাপত্তা বলয়। সাংবাদিক ও জনসাধারণকে প্রবেশের আগে কঠোর তল্লাশি করা হচ্ছে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা জানান, রায়ের দিনকে ঘিরে কেউ যেন উসকানিমূলক কার্যকলাপ বা বিশৃঙ্খলা ঘটাতে না পারে, সেজন্য সর্বাত্মক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। আদালতের কার্যক্রম যাতে নির্বিঘ্নে সম্পন্ন হয়, সেই লক্ষ্যে নিরাপত্তা ব্যবস্থা সর্বোচ্চ পর্যায়ে রাখা হয়েছে।
আজ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল রায়ের তারিখ ঘোষণা করবেন। ট্রাইব্যুনালের অন্য দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারপতি মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
গত ২৩ অক্টোবর এ মামলার যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে রায়ের জন্য আজকের দিন ধার্য করা হয়। অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান তার সমাপনী বক্তব্যে শেখ হাসিনা ও কামালের সর্বোচ্চ সাজা দাবি করেন। চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম ও স্টেট ডিফেন্স আইনজীবী আমির হোসেনও এ সময় পাল্টা যুক্তি উপস্থাপন করেন।
এই মামলায় সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনও আসামি ছিলেন। তিনি রাজসাক্ষী হয়ে ট্রাইব্যুনালে জবানবন্দি দিয়েছেন। তার বিষয়ে সিদ্ধান্ত ট্রাইব্যুনালের ওপর ছেড়ে দিয়েছে প্রসিকিউশন। মামলার আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ তার খালাসের আবেদন জানিয়েছেন।
মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ পাঁচটি— উসকানি, মারণাস্ত্র ব্যবহার, আবু সাঈদ হত্যা, চানখারপুলে হত্যাকাণ্ড এবং আশুলিয়ায় লাশ পোড়ানো। অভিযোগের নথি ৮,৭৪৭ পৃষ্ঠার; যার মধ্যে সাক্ষ্যপ্রমাণ, দালিলিক উপাদান ও শহীদ তালিকা যুক্ত রয়েছে।
এদিকে, রায়ের দিন ঘিরে কার্যক্রম নিষিদ্ধ হওয়া আওয়ামী লীগ লকডাউন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। ফলে দেশজুড়ে সহিংসতা ও অরাজকতার আশঙ্কায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। প্রসিকিউশন জানিয়েছে, নিরাপত্তা ব্যবস্থা এতটাই কঠোর যে ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রমে কোনো বিঘ্ন ঘটবে না।

