রাজশাহীতে মহানগর দায়রা জজ মোহাম্মদ আবদুর রহমানের বাসভবনে ঘাতকের আঘাতে তার পুত্র নিহত এবং স্ত্রী আহত হওয়ার ঘটনায় গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ।
আজ বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) রাতে প্রধান বিচারপতির নির্দেশনায় সুপ্রিম কোর্ট থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে—রাজশাহীতে ঘটে যাওয়া এই মর্মান্তিক ঘটনাটি নিন্দনীয়, অমানবিক ও গভীরভাবে বেদনাদায়ক। বিচার বিভাগের একজন সদস্যের পরিবারের ওপর এ নৃশংস আক্রমণ দেশের বিচারাঙ্গনের জন্য শোকের বিষয়।
প্রধান বিচারপতি বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্ট ও সমগ্র বিচার বিভাগের পক্ষ থেকে শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়েছেন এবং আহত ব্যক্তির দ্রুত আরোগ্য কামনা করেছেন।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়, প্রধান বিচারপতির নির্দেশনায় সুপ্রিম কোর্ট এ ঘটনার প্রতিটি অগ্রগতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। দ্রুত, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত সম্পন্নের মাধ্যমে প্রকৃত ঘটনা উদঘাটন এবং দোষীদের আইনের আওতায় এনে যথাযথ বিচার নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে।
প্রধান বিচারপতি তদন্তের সততা ও স্বচ্ছতা প্রতিটি ধাপে বজায় রাখার ওপর জোর দিয়েছেন এবং আশা প্রকাশ করেছেন যে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো সর্বোচ্চ পেশাদারিত্ব, স্বচ্ছতা ও দ্রুততার সঙ্গে কাজ করবে।
সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, আগামী দিনগুলোতে ঘটনাটির অগ্রগতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হবে, যাতে ন্যায়বিচার দ্রুত ও কার্যকরভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়। এই শোকের মুহূর্তে সুপ্রিম কোর্ট শোকাহত পরিবারের পাশে রয়েছে এবং তাদের প্রতি গভীর সংহতি প্রকাশ করছে।
উল্লেখ্য, দেশের আদালতসমূহ ও বিচারকদের বাসভবনের নিরাপত্তা জোরদারে গত ২৮ নভেম্বর ২০২৪ সালে প্রধান বিচারপতির নির্দেশে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল স্বাক্ষরিত একটি বিজ্ঞপ্তি সংশ্লিষ্ট দপ্তরসমূহে পাঠানো হয়েছিল।
সব আদালত-বিচারকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের নির্দেশ
দেশের প্রত্যেক আদালত, ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণ, এজলাস, বিচারকদের বাসভবন, বিচারক ও কর্মচারীসহ আদালত সংশ্লিষ্ট সবার সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অবিলম্বে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে সংশ্লিষ্ট সব কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ।
গত বছরের ২৮ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন থেকে জারি করা স্মারকে বলা হয়, সম্প্রতি বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে যে নজিরবিহীন ও অনভিপ্রেত ঘটনাবলি সংঘটিত হয়েছে এবং একইসঙ্গে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণসহ দেশের জেলা আদালতসমূহে সাম্প্রতিক সময়ে যেসব অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে, সে বিষয়ে বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।
এতে আরও বলা হয়, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট থেকে এর আগেও একাধিকবার স্থানীয় আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর সহায়তায় দেশের প্রত্যেক আদালত/ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণ, এজলাস, বিচারকদের বাসভবন, বিচারকদের গাড়ি, বিচারক ও কর্মচারীসহ আদালত সংশ্লিষ্ট সবার সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে সংশ্লিষ্ট সবাইকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।
রাষ্ট্রের প্রধান তিনটি অঙ্গের মধ্যে বিচার বিভাগ অন্যতম। আইনের শাসন ও ন্যায়বিচার নিশ্চিতকরণ এবং আদালতের ভাবমূর্তি বজায় রাখতে দেশের প্রত্যেক আদালত/ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণ, এজলাস, বিচারকদের বাসভবন, বিচারক ও কর্মচারীসহ আদালত সংশ্লিষ্ট সবার সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অবিলম্বে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি দেশের সংশ্লিষ্ট সব কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন।
এ বিষয়ে অবিলম্বে প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে নির্দেশক্রমে বিজ্ঞপ্তিতে অনুরোধ জানানো হয়। যার অনুলিপি মন্ত্রিপরিষদ সচিব, প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব, আইন সচিব, আইজিপি, র্যাবের ডিজি, আনসার বাহিনীর ডিজি, সব মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার বরাবর পাঠানো হয়।

