৬৫ বছরের পুরনো মামলার রায় দিয়ে বিচারপতি বললেন, ‘তখন জন্মই হয়নি আমার’!
কলকাতা হাইকোর্ট

আইনজীবীদের লাগাতার কর্মবিরতিতে কলকাতা হাইকোর্টে অচলাবস্থা

কর্মবিরতি, ধর্মঘট করে অচলাবস্থা তৈরি করা যাবে না বলে একাধিক বার বিভিন্ন মামলায় রায় দিয়েছে আদালত৷অথচ সেই আদালতই এখন অচল হয়ে রয়েছে! একাধিক অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এবং আইনজীবী হাইকোর্ট, সুপ্রিম কোর্টের নানা সময়ের নির্দেশ মনে করিয়ে দিয়ে বলছেন, ‘আদালত কিন্তু বিচারপতি বা আইনজীবীদের জন্য নয়৷বিচারপ্রার্থীদের জন্য৷কর্মবিরতি করে তাঁদেরই সমস্যা আরও বাড়িয়ে তোলা হচ্ছে৷ এতে সাধারণ মানুষের আইনের উপর আস্থা আরও কমবে৷’

যদিও এ সব যুক্তির ধারকাছ দিয়ে না গিয়ে গত তিন সপ্তাহ ধরে কলকাতা হাইকোর্টে কর্মবিরতি চালিয়ে যাচ্ছেন আইনজীবীরা৷ এই মুহূর্তে সারা দেশে প্রায় ৩০ লক্ষ মামলা ঝুলে রয়েছে৷কলকাতা হাইকোর্টে মামলা জমে আছে প্রায় আড়াই লক্ষ৷এই অবস্থায় আইনজীবীদের লাগাতার কর্মবিরতিতে প্রবল সমস্যায় পড়েছেন সাধারণ মানুষ৷বিচারপতিরা রোজ আদালতে এসে বসে থাকলেও শুনানি হচ্ছে না৷ ফলে মামলা জমছে আরও৷

আইনজ্ঞরা বলছেন, আইনি পথেই বিচারপতি নিয়োগ সংক্রান্ত সমস্যার সমাধান সম্ভব৷তাঁদের মতে, সুপ্রিম কোর্ট বা হাইকোর্ট স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে দ্রুত বিচারপতি নিয়োগের নির্দেশ দেওয়ার পাশাপাশি আইন মেনে কেউ জনস্বার্থ মামলাও করতে পারতেন৷ আদালতের নির্দেশ না মানলে ফৌজদারি ধারায় আদালত অবমাননা ধরে ব্যবস্থা নিতে পারত উচ্চ আদালত৷

ওডিশা হাইকোর্টের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি সুশান্ত চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘ন্যায়বিচারের জন্য ব্যবস্থা নেওয়ার বিশেষ ক্ষমতা রয়েছে সুপ্রিম কোর্টের৷’

আইনজীবী অরুণাভ ঘোষ বলেন, ‘আদালতের নির্দেশ না মানলে আদালত অবমাননায় ফৌজদারি ব্যবস্থা নিতে পারত আদালত৷ কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধেই তো দুর্নীতির অভিযোগ৷ তিনি ব্যবস্থা নেবেন কী করে?’

আইনজ্ঞ অমিত সেন বলেন, ‘কর্মবিরতি কোনও সমাধান হতে পারে না৷ বিচারব্যবস্থা ভেঙে পড়া মানে গণতন্ত্র ভেঙে পড়া৷ আরও বেশি জনমত গড়ে তোলা উচিত৷’

সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি অশোককুমার গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘আইনজীবীরা তো জুটমিলের শ্রমিক নন যে লাগাতার ধর্মঘট করতে হবে৷ আন্তঃরাজ্য সেমিনার করে জনমত গড়ে তোলা যেত৷ তা ছাড়া সুপ্রিম কোর্ট বা হাইকোর্টের হাতে নির্দেশ দেওয়ার ক্ষমতা আছে৷ ইচ্ছে থাকলে সেটা করতে পারতেন বিচারপতিরা৷’

কয়েক বছর আগে সুপ্রিম কোর্টের তদানীন্তন প্রধান বিচারপতি টি এস ঠাকুর বিচারপতি নিয়োগ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর গড়িমসি করলে পিএমও-র সচিবকে ডেকে পাঠাবেন বলেছিলেন৷ প্রকাশ্যে প্রধানমন্ত্রীকে আদালতের নির্দেশ মানছেন না বলে দোষারোপও করেছিলেন৷

আইনজীবী বরুণকুমার দাস বলেন, ‘আদালত বলেছে বন্ধ, কর্মবিরতি করা যাবে না৷ আর এখানে সামান্য কিছু হলেই জনস্বার্থ মামলা হয়৷ কর্মবিরতি না করে সুপ্রিম কোর্টে জনস্বার্থ মামলা করলে ভালো হত৷’ ওডিশা হাইকোর্টেও ৪০ দিন ধরে কর্মবিরতি চলছে আইনজীবীদের৷ আইনজীবী ইন্দ্রাণী চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘কোনও সভ্য দেশের মানুষ কাজ না করে বসে থাকেন না৷’

কলকাতা হাইকোর্টের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি চিত্ততোষ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘কর্মবিরতিতে লাভ নেই৷ সুপ্রিম কোর্ট চাইলে কেন্দ্রের উপর চাপ দিয়ে সমাধান করতে পারে৷কিন্তু বিচারপতিদের নিজেদের মধ্যে মতানৈক্য না মিটলে তা সম্ভব নয়৷সূত্র: এই সময়