কোটা সংস্কারের দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয় অঙ্গনে আন্দোলনকারী ছাত্র-ছাত্রীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহার করা না হলে বিনা পয়সায় ভুক্তভুগিদের মামলা পরিচালনায় সহায়তা করবে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি।
একইসঙ্গে আন্দোলনকারীদের ওপর অমানবিক হিংস্রতা, নিপীড়ন ও গ্রেফতার বিষয়ে তদন্তের জন্য সুপ্রিম কোর্টের একজন বিচারপতির নেতৃত্বে তদন্ত কমিটি গঠনের দাবি জানিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশন।
আজ মঙ্গলবার (১০ এপ্রিল) দুপুরে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবনের শহীদ শফিউর রহমান মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন এ সব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘আন্দোলন করা ছাত্র-ছাত্রীদের বিরুদ্ধে দেয়া মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার না হলে বিনা পয়সায় ভুক্তভোগি ছাত্র-ছাত্রীদের মামলা পরিচালনায় সহায়তা করবে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি।
জয়নুল আবেদিন বলেন, ‘শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রার্থীদের চলমান আন্দোলনকে আমরা যৌক্তিক মনে করি। কোটা সংস্কার দরকার।’
এ সময় কোটা সংস্কার দাবিতে আন্দোলনরত ছাত্র-ছাত্রী ও চাকরিপ্রার্থীদের উপর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও মদদপুষ্ট ছাত্র সংঠনের হামলার ঘটনায় সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি উদ্বেগ প্রকাশ করে ও নিন্দা জানায়।
জয়নুল আবেদীন বলেন, ‘দেশে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারীদের ওপর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও মদদপুষ্ট ছাত্র সংগঠনের হামলার ঘটনায় সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির উদ্বেগ প্রকাশ করছে। চলমান কোটা সংস্কারের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন ও আন্দোলনকারীদের ওপর পুলিশের লাঠিচার্জ, টিয়ার শেল, রাবার বুলেট নিক্ষেপ করা হয়। পুলিশি এই হামলার সঙ্গে সশস্ত্র ক্যাডাররা যোগ দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে।’
তিনি বলেন, ‘সরকার এই আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে প্রভাবিত করে আন্দোলনের মূল উদ্দেশ্য ব্যাহত করতে চায়। আলোচনার নামে সময় ক্ষেপন করতে চায়। আমরা মনে করি, এই মুহূর্তে শিক্ষার্থীদের ন্যায্য দাবি মেনে নেওয়া উচিত। এই দাবির প্রতি আমরা সমর্থন ব্যক্ত করছি। গ্রেফতার ছাত্রদের মুক্তি এবং আহত ছাত্রদের সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করারও জোর দাবি জানাচ্ছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিনা উসকানিতে আন্দোলনকারীদের ওপর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বর্বরোচিত হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। যারা আহত হয়েছেন তাদের সুস্থতা কামনা করি এবং আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে, তাদের নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করছি।’
কোটা সংস্কার নিয়ে আন্দোলনের সময় শত শত ছাত্র-ছাত্রী ও চাকরিজীবী আহত ও গ্রেফতার হওয়ার ঘটনাকে মানবাধিকার লঙ্ঘন বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
জয়নুল আবেদীন বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি বিশ্ববিদ্যালয় অঙ্গনে ছাত্র-ছাত্রী ও চাকরি প্রার্থীদের ওপর অমানবিক হিংস্রতা, নিপীড়ন ও গ্রেফতারের ঘটনা তদন্তের জন্য সুপ্রিম কোর্টের একজন বিচারপতির নেতৃত্বে সুষ্ঠ তদন্তের এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জড়িত সদস্যদের শাস্তির ব্যবস্থা করার জোর দাবি জানাচ্ছি।’
আন্দোলনের যে কোটার বিষয়টি মূল প্রতিপাদ্য তার সঙ্গে দেশের চার কোটি শিক্ষিত যুবসমাজের জীবন-জীবিকার প্রশ্ন জড়িত বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক ব্যারিস্টার এএম মাহবুব উদ্দিন খোকন।