রোহিঙ্গা নিপীড়ন নিয়ে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে মামলা পরিচালনার করা যায় কি না, সে বিষয়ে বাংলাদেশের মতামত চেয়ে চিঠি পাঠিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি)।
রোহিঙ্গাদের মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা (যেখানে সম্ভাব্য মানবতাবিরোধী অপরাধ রয়েছে) নিয়ে হেগভিত্তিক এই আদালতের আদেশ দেওয়ার সুযোগ আছে কি না তা জানতে চেয়ে প্রসিকিউটর ফাটু বিনসুদা ৯ এপ্রিল আবেদন করেন। তার প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ সরকারের কাছে ওই চিঠি লিখেছে আইসিসি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক সোমবার ওই চিঠি পাঠানোর কথা গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেন। এ বিষয়ে আর কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন তিনি।
চিঠিতে প্রি-ট্রায়াল চেম্বার ১ বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষকে প্রকাশ্যে বা গোপনে তিনটি বিষয়ে মতামত দিতে বলেছে। এগুলো হল-মিয়ানমারের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বাংলাদেশ সীমান্তে ভিড় করার সময়ের পরিবেশ, রোহিঙ্গাদের মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে পাঠানো নিয়ে কোর্টের কার্যক্রম পরিচালনা এবং প্রসিকিউটরের আবেদনে উল্লিখিত বিষয়গুলোর মধ্যে কোনোটির বিষয়ে দক্ষ বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষের মতামত, যা ওই আবেদন বিবেচনায় চেম্বারকে সহায়তা করবে।
ওই আবেদন বিচার প্রক্রিয়ায় যাবে কি না সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণে বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষের মতামত সহায়তা করবে বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
এদিকে আইসিসি প্রসিকিউটরের ওই আবেদনের খবরে ‘গুরুতর উদ্বেগ’ জানিয়েছে মিয়ানমার সরকার।
গত অগাস্টের শেষ দিকে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সেনাবাহিনীর দমন-পীড়নের মুখে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিয়েছে। মিয়ানমার বাহিনীর এ অভিযানকে জাতিগত নির্মূল অভিযান হিসেবে বিবেচনা করছে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো।
মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে নির্বিচারে হত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগসহ মানবতাবিরোধী নানা অপরাধের অভিযোগ করেছেন পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা।
তবে এসব অভিযোগ করে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ বলেছে, বিদ্রোহী দমনে রাখাইনে আইনসিদ্ধ অভিযান চালিয়েছে তারা। দুই ডজনের বেশি পুলিশ পোস্ট ও সেনা চৌকিতে বিদ্রোহীদের হামলার পর ওই অভিযান চালানো হয়।
এখন এ বিষয়ে সম্মতি জানিয়ে আইসিসি আদেশ দিলে রোহিঙ্গাদের দেশান্তরী হওয়া নিয়ে তদন্ত শুরু করতে পারবেন প্রসিকিউটর বিনসুদা।
“এটা বিমূর্ত নয়, স্পষ্ট প্রশ্ন যে, এ বিষয়ে তদন্ত এবং প্রয়োজনে মামলা পরিচালনার বিষয়ে আদালতের এখতিয়ার আছে কি না,” আবেদনে লিখেছেন তিনি।
আদালতের এখতিয়ার নিয়ে সংশয়ের কারণ হল বাংলাদেশ এই আদালতের সদস্য হলেও মিয়ানমার তা নয়।
এখানে যেভাবে সীমান্ত পার করা হয়েছে সে বিবেচনায় বিদ্যমান আইনি কাঠামোর মধ্যে থেকেই এ বিষয়ে আদালত আদেশ হতে পারে বলে মনে করছেন ফাটু বিনসুদা।