অ্যাডভোকেট শাহ্ মঞ্জুরুল হক। বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের একজন আইনজীবী। পেশা জীবনের প্রথম দিকে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সুনামের সাথে আইন বিভাগে শিক্ষকতা করেছেন। দেশের প্রচলিত আইন শিক্ষা ব্যবস্থাসহ আইন শিক্ষার গুণগত পরিবর্তনে করণীয় সম্পর্কে খুঁটিনাটি বিষয় জানতে তাঁর মুখোমুখি হয়েছিল ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকমের সম্পাদক অ্যাডভোকেট বদরুল হাসান কচি। তিন পর্বের সাক্ষাৎকারের আজ দ্বিতীয় পর্ব ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকম পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হল।
ল’ইয়ার্স ক্লাব: আপনি আইনের শিক্ষক ছিলেন, আইন শিক্ষার্থীদের জন্য আপনার পরামর্শ কি?
শাহ্ মঞ্জুরুল হক: শিক্ষকতার বিষয়টি ছিল একদমই শখের বশে। আর বাবা স্কুল শিক্ষক থাকায় শিক্ষকতা আমার রক্তে আছে (হাসি)। তবে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক হবার ইচ্চা ছিল আমার। কিন্তু আইন পেশায় নিয়োজিত হওয়ায় আমার শিক্ষকরাই আমাকে শিক্ষকতায় যেতে বারণ করেছিলেন। যদিও পরবর্তীতে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও বিভিন্ন কলেজে আইন বিষয়ে শিক্ষকতা করেছিলাম।
আইন শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে সহজ পরামর্শ হচ্ছে, আইন বিষয়ে সংক্ষিপ্ত পথ নেই। এখানে পড়াশোনা, গবেষণা ও নিত্যনতুন বিষয়ে জ্ঞানার্জনের বিকল্প নেই। আরেকটা বিষয় হচ্ছে আইনে পড়াশোনার শুরু থেকে আইনজীবী হওয়ার ১০ বছর পর্যন্ত নানা নেতিবাচক কথা হজম করতে হয়। মনোবল হারিয়ে হতাশ হওয়া যাবে না। ধৈর্য্য ধরে মানসিক শক্তি অর্জন করে দৃঢ় সংকল্প করতে হবে, আজ যারা উকিল হয়েছি বলে টিপ্পনী দিচ্ছে তাদেরকে দেখিয়ে দিতে হবে যে আইনজীবীরা সমাজের প্রথম শ্রেণীর নাগরিক, এ পেশায়ও সর্বোচ্চ সুযোগ-সুবিধা উপভোগ করা যায়, প্রতিষ্ঠিত হওয়া যায়।
ল’ইয়ার্স ক্লাব: দেশের প্রচলিত আইন শিক্ষা নিয়ে আপনার কোন হতাশা আছে কি-না?
শাহ্ মঞ্জুরুল হক: প্রচলিত আইন শিক্ষা নিয়ে হতাশা নেই। তবে আমার এক শিক্ষক বলেছিলেন, আইন পেশা হচ্ছে বাসের মতো, বাসে একজন উঠে গেলে আরেকজনকে জায়গা নাই বলে উঠতে মানা করেন, আবার ও যখন উঠে তখন আরেকজনকে না করে, কিন্তু উঠে গেলে সবারই জায়গা হয়ে যায়। মূলত যে কোন পেশায় যুক্ত হলে জায়গা হয়েই যায়, আরও নির্দিষ্ট করে বললে যার যার জায়গা তাকেই করে নিতে হয়।
ল’ইয়ার্স ক্লাব: স্বতন্ত্র আইন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য সম্প্রতি প্রধান বিচারপতির প্রস্তাবে প্রধানমন্ত্রী সম্মতি দিয়েছেন, প্রশ্ন হচ্ছে স্বতন্ত্র আইন বিশ্ববিদ্যালয় আইন পেশার প্রত্যাশিত পরিবর্তন নিয়ে আসবে বলে মনে করেন কি-না?
শাহ্ মঞ্জুরুল হক: এ বিষয়ে বক্তব্য প্রদানে আমি যোগ্য ব্যক্তি নই তবু ছোট মুখে একটা বড় কথা বলতে চাই, শিক্ষকতা করতে গিয়ে যতটুকু বুঝেছি দেশের সরকারি-বেসরকারি ও অন্যান্য কলেজ থেকে পর্যাপ্ত দক্ষ আইনজীবী আমরা পাচ্ছি না। প্রতিবেশী দেশ ভারতের বেঙ্গালুরুতে অবস্থিত ন্যাশনাল ল’ স্কুল অব ইন্ডিয়া আইন শিক্ষার অন্যতম উত্তম প্রতিষ্ঠান। বাংলাদেশেও যদি এ ধরণের স্বতন্ত্র আইন বিশ্ববিদ্যালয় করা তা নিঃসন্দেহে আইন শিক্ষার গুণগত মানোন্নয়নে সহায়ক হবে। যে যে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে আসুক না কেন আইনের বিশেষ বিষয়গুলো স্বতন্ত্র আইন বিশ্ববিদ্যালয়েই পড়ানো হবে। আমি বলবো না যে মানসম্পন্ন আইনজীবী আমরা পাচ্ছি না, তবে মানসম্পন্ন ল’ইয়ার পর্যাপ্ত পরিমাণে নেই। শুধু ফৌজদারি মামলায় যে পরিমাণ আইনজীবী রয়েছে সে অনুপাতে অন্যান্য টেকনিক্যাল বিষয়ের আইনজীবী হাতে গোনা কয়েকজন মাত্র। যেমন- সিভিল, আরবিট্রেশন, কর্পোরেট কালচার, ফরেন ইনভেস্টমেন্ট, শিপিং, টেলিকমিউনিকেশন, এভিয়েশন, গ্যাস এবং মিনারেল রিসোর্সসহ এ ধরণের টেকনিক্যাল বিষয়ে বিশেষজ্ঞ আইনজীবীর ঘাটতি রয়েছে।
ল’ইয়ার্স ক্লাব: আপনার মূল্যবান সময় থেকে কিছু সময় ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকমকে দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ।
শাহ্ মঞ্জুরুল হক: আপনাকেও ধন্যবাদ, পাশাপাশি ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকমের অগণিত পাঠকদের জন্য শুভ কামনা।
(চলবে…)
আরও পড়ুন: ‘আইনজীবীদের পেশাগত ও বারের অবকাঠামোর গুণগত পরিবর্তনের স্বার্থেই নির্বাচনে আগ্রহী হয়েছি’