১৯৯৮ সালের এসএসসি পরীক্ষার সনদ জালিয়াতির ঘটনা ঘটে। তবে কাকতালীয়ভাবে বাবা ও ছেলের নামে মিল থাকায় তৎকালীন দুর্নীতি দমন ব্যুরো অভিযুক্ত করেছে ২০০৬ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থী নোয়াখালী সদরের পশ্চিম রাজারামপুর গ্রামের কামরুলকে।
এরপর বিষয়টি সুরাহা করতে উচ্চ আদালতে আসলে দেখা যায়, সেই সনদ জালিয়াতির ঘটনায় অভিযোগপত্র দেয়া হয় পশ্চিম রাজারামপুরের পাশের পূর্ব রাজারামপুর গ্রামের কামরুল ইসলামের বিরুদ্ধে।
এ ঘটনায় হাইকোর্ট রুল জারি করেছিলেন। সেই রুলের শুনানিতে ২৬ জানুয়ারি দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পক্ষ থেকে ভুল স্বীকার করা হয়েছে।
রুলের জবাবে দুদক বলছে- ‘সরল বিশ্বাসে ভুল (বোনাফাইড মিসটেক)’। রুলের ওপর শুনানি শেষে আদালত রায়ের জন্য বৃহস্পতিবার (২৮ জানুয়ারি) দিন দার্য করেছেন। হাইকোর্টের বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আদালতে রিট আবেদনকারীর পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী মিনহাজুল হক চৌধুরী। দুদকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী খুরশীদ আলম খান এবং রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার মো. সারোয়ার হোসেন বাপ্পী।
মামলার সূত্র দিয়ে আইনজীবীরা জানান, ১৯৯৮ সালের এসএসসির সনদ জালিয়াতি করে এইচএসসিতে ভর্তি হয়েছেন এক যুবক। এমন অভিযোগ এনে ২০০৩ সালের মামলা করে তৎকালীন দুর্নীতি দমন ব্যুরো।
তদন্ত শেষে দশ বছর পরে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। এরপর ২০১৪ সালে মামলার বিচার শেষে আসামিকে পলাতক দেখিয়ে তিনটি ধারায় ৫ বছর করে ১৫ বছরের সাজা দেন বিচারিক আদালত। পাশাপাশি ১০ হাজার টাকা করে ৩০ হাজার টাকা অর্থদণ্ডও দেন আদালত।
এ ঘটনায় যাকে দণ্ড দেয়া হয় সেই দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিকে গ্রেফতার করার জন্যে পুলিশি তৎপরতা দেখে নিরাপরাধ যুবক হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন।
রিট আবেদনে তিনি বলেন, ‘আমার জন্ম ১৯৯০ সালে। এমনকি সংশ্লিষ্ট কলেজে কোনোদিন ভর্তিও হইনি।’ এরপর ওই রিটের শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট রুল জারি করেন।
রিটের নথি থেকে আরো জানা যায়, ২০০৩ সালের সালের জানুয়ারিতে দুর্নীতি দমন ব্যুরোর কুমিল্লা অঞ্চলের প্রসিকিউটিং পরিদর্শক মো.শহীদুল আলম একটি এজাহার (এফআইআর) দায়ের করেন।
মামলায় বলা হয়, নোয়াখালী সদর থানার পূর্ব রাজারামপুর গ্রামের আবুল খায়েরের ছেলে কামরুল ইসলাম নোয়াখালী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ৫৭৬ নম্বর পেয়ে দ্বিতীয় বিভাগে এসএসসি পাশের ভুয়া মার্কশিট ও প্রশংসাপত্র সৃজন বা সংগ্রহ করে ১৯৮৯-৯০ সেশনে মাইজদী পাবলিক কলেজে ভর্তি হন।
পরে ২০১৩ সালের ২৮ নভেম্বর চার্জশিট জমা দিলে ২০১৪ সালের ২৬ নভেম্বর রায় দেন আদালত। রায়ে কামরুল ইসলামকে পেনাল কোডের ৪৬৭ ধারায় ৫ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড এবং ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড, ৪৬৮ ধারায় ধারায় ৫ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড এবং ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড, ৪৭১ ধারায় ৫ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড এবং ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড দেন।
রায়ে বলা হয়, সকল কারাদণ্ড একত্রে চলবে, কিন্তু অর্থদণ্ড পৃথক-পৃথকভাবে দিতে হবে। অনাদায়ে ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে।
এ রায়ের পরে পুলিশি তৎপরতা দেখে নোয়াখালী সদরের পূর্ব রাজারামপুরের মো.আবুল খায়েরের ছেলে রিটকারী মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়ে রিট করেন।
এ রিট আবেদনে হাইকোর্ট ২০২০ সালের ৫ নভেম্বর রুল জারি করেন এবং দুদকের কাছে এ ঘটনার ব্যাখ্যা চান। আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী রুলের জবাব দিয়ে দুদক ভুল স্বীকার করে।
দুদকের আইনজীবী মো.খুরশীদ আলম খান সাংবাদিকদের বলেন, গ্রামের নামে ভুলের যে বিষয়টা এসেছে এটা আমাদের ‘বোনাফাইড মিসটেক’। আমরা তার রিটের সাথে একমত।
দুদকের আইনজীবী বলেন, এখানে একটা বিষয় যে, কামরুল কিন্তু একদিনও জেল খাটেনি। আমরা চাইনা কোনো নিরপরাধ ব্যক্তি জেল খাটুক। আদালত শুনানি শেষে বৃহস্পতিবার রায়ের জন্য দিন ধার্য করেছেন।’