সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়ের পর সরকার প্রতিকার না চেয়ে অসহিষ্ণু আচরণ করেছে। এ রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে প্রধান বিচারপতির ছুটিতে যাওয়া এবং পরে পদত্যাগের ঘটনায় দেশের বিচার বিভাগ ও রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয়েছে। প্রধান বিচারপতির পদত্যাগের দুই সপ্তাহের বেশি অতিক্রান্ত হলেও নতুন বিচারপতি নিয়োগ দেয়া হয়নি। বাংলাদেশের বিচার বিভাগের ইতিহাসে এটি একটি নজিরবিহীন ঘটনা। সংবিধান লঙ্ঘন করে প্রতিনিয়ত নির্বাহী বিভাগ বিচার বিভাগের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করে আসছে। যে কোনো সময়ের তুলনায় বিচার বিভাগের স্বাধীনতা আজ চরম হুমকির সম্মুখীন।
সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতি মিলনায়তনে গতকাল রোববার ‘বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও বর্তমান প্রেক্ষিত’ শীর্ষক আলোচনা সভায় মূল বক্তব্যে এসব কথা ওঠে এসেছে।
সংবিধান দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক আইনজীবী সমিতি আলোচনা সভার আয়োজন করে। আলোচনা সভায় মূল বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মো. জাহিদুল বারি।
এতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, প্রজাতন্ত্রেও সব ক্ষমতার মালিক জনগণ। কিন্তু আমরা জনগণ মালিক হিসেবে কি সেই অধিকার ভোগ করতে পারছি? না, পারছি না। তবে মালিক হিসেবে মৌলিক অধিকার পাওয়া, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা ও ন্যায়বিচার চাওয়ার ক্ষেত্রে কারও দ্বিমত নেই।’
ঐক্য ন্যাপের সভাপতি পঙ্কজ ভট্টাচার্য বলেন, ‘দেশের বিচারহীনতার সংস্কৃতি দীর্ঘায়িত হচ্ছে। বিচার বিভাগকে তার স্থানে থাকতে দেয়া হচ্ছে না। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিয়ে ধস্তাধস্তি করা হচ্ছে। রামুর হামলার বিচার না হওয়ায় নাসিরনগর, গঙ্গাচরা, গোবিন্দগঞ্জের ঘটনা ঘটত না। সংখ্যালঘু ও ভিন্ন মতাবলম্বীরা আজ আতঙ্কে রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘দেশে জাতীয় নির্বাচন হবে- এমন নমুনা দেখছি না। কোথাও রাজনৈতিক মিটিং করলেও পুলিশ এসে হাজির। পুলিশের কাছে মিটিংয়ের জন্য কৈফিয়ত দিতে হচ্ছে। অথচ সাঁওতালে হামলার ঘটনায় আগুন দেয়া পুলিশ সদস্যদের বিচার করা হয়নি।’
বাসদ সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান বলেন, ‘এখন নিম্ন আদালত প্যারালাইজড ও উচ্চ আদালতের হার্টে ব্লক হয়ে গেছে। সংবিধান দেশের সর্বোচ্চ আইন, এ আইন লঙ্ঘন করে দেশে শাসনকার্য পরিচালনা করা হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘আমলাতন্ত্র সরকারি কর্মচারী, পুলিশ বাহিনী সরকারি দলের লাঠিয়ালে পরিণত হয়েছে। নির্বাচন চরদখল ও জবরদখলে রূপ নিয়েছে। জনগণের ভোটের প্রতিফলন ঘটছে না।’
সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি জয়নুল আবেদিন বলেন, ‘আজ বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নেই। ষোড়শ সংশোধনীর রায়ের পর বিচার বিভাগে যেসব ঘটনা ঘটেছে, প্রধান বিচারপতি যেভাবে বিদায় নিয়েছেন, তা সারা দেশের মানুষ দেখেছে। সবাই বুঝেছে, এসব ঘটনার মধ্য দিয়ে বিচার বিভাগকে অশনিসংকেত দেয়া হয়েছে। যাতে সরকারের বিরুদ্ধে যায়, এমন কোনো রায় দেয়া না হয়।’
সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরী বলেন, ‘বিচার বিভাগের স্বাধীনতা থাকলে সরকারি দলেরই বেশি লাভ। তাই বিচার বিভাগের স্বাধীনতা রক্ষা করা সবার দায়িত্ব।’
সভাপতির বক্তব্যে গণতান্ত্রিক আইনজীবী সমিতির সভাপতি সুব্রত চৌধুরী বলেন, ‘আইনমন্ত্রী ও অ্যাটর্নি জেনারেল যেভাবে বলছেন বিচার বিভাগ সেভাবে চলছে। বিচার বিভাগ নিয়ে গর্ব করার মতো কিছু নেই।’
সুপ্রিমকোর্ট প্রতিনিধি/ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকম