বরিশালের গৌরনদীর পালরদী মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্র সাকির গোমস্তা হত্যা মামলার এক আসামিকে ঘুষ নিয়ে ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় গৌরনদী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এদিকে সাকির হত্যাকাণ্ডে জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে গতকাল রোববার কলেজ মিলনায়তনে সমাবেশ এবং আশোকাঠি বাসস্ট্যান্ড এলাকায় ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক প্রায় আধা ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রাখা হয়।
সাকিরের মা আলেয়া বেগম গণমাধ্যমকে বলেন, তাঁর ছেলে সাকির ছাত্রলীগের কর্মী ছিল। গত মঙ্গলবার কলেজের অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) তপন কুমার রায়কে লাঞ্ছিত করার প্রতিবাদ করে সাকির। এ কারণে একই এলাকার যুবলীগ কর্মী সোহেল গোমস্তা, ইমরান মীর, সুমন হাওলাদার, রিয়াজ খান, স্কুলছাত্র ফাহিমসহ কয়েকজন সাকিরকে পিটিয়ে গুরুতর জখম করে। পরে ঘটনার দিন রাতে সাকির মারা যায়। এ ঘটনায় তিনি বাদী হয়ে গৌরনদী মডেল থানায় মামলা করেন।
গত শুক্রবার সাকিরের বাড়িতে আসেন বরিশাল-১ আসনের সাংসদ ও বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ। এ সময় সাকিরের মা আলেয়া বেগম গৌরনদী মডেল থানার ওসির বিরুদ্ধে উৎকোচ নিয়ে ফাহিমকে ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগ করেন। অভিযোগ পাওয়ার পর ঘটনাস্থলেই সাংসদ সাকির হত্যা মামলার সব আসামিকে গ্রেপ্তারে পুলিশকে নির্দেশ দেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন পুলিশ কর্মকর্তা বলেছেন, মামলা দায়েরের পর বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী এজাহারভুক্ত আসামি ফাহিমকে মারধর করে গৌরনদী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. শামছুদ্দিনের কাছে সোপর্দ করেন। কিন্তু ফাহিমের পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে দুই লাখ টাকা ঘুষ নেন ওসি মনিরুল ইসলাম। এ কারণে তিনি ফাহিমকে ছেড়ে দিতে বলেন। কিন্তু এসআই শামছুদ্দিন আসামিকে ছেড়ে না দিয়ে কর্তব্যরত কর্মকর্তার কাছে সোপর্দ করেন। পরে ওসির নির্দেশে আসামি ফাহিমকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে ওসি মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘আমার সামনেই সাংসদের কাছে আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন। ফাহিম একই বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্র। তার পরনে স্কুলের পোশাক ছিল। এ কারণে তাকে হাজতে রাখা হয়নি। থানায় রাখা হয়েছিল। কৌশলে সে পালিয়ে যায়। তবে তাকেসহ অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারের জন্য জোর চেষ্টা চলছে।’
পুলিশ সুপার (এসপি) মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, এ বিষয়ে অভিযোগ পাওয়ার পরে বাকেরগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এএসপি) মো. মফিজুল ইসলামকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে আগামী পাঁচ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে গতকাল কলেজ পরিচালনা কমিটির সভাপতি মো. মনির হোসেন মিয়ার সভাপতিত্বে প্রতিবাদ সমাবেশে আসামিদের শিগগিরই গ্রেপ্তারের দাবি জানানো হয়। এ ছাড়া শিক্ষার্থী ও স্বজনেরা ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক অবরোধ করেন।
জেলা প্রতিনিধি/ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকম