অ্যাডভোকেট ওমর ফারুক বাপ্পী (ফাইল ছবি)

তরুণ আইনজীবী বাপ্পী খুনের রহস্য জানতে এক নারীকে খুঁজছে পুলিশ

চট্টগ্রামে তরুণ আইনজীবী খুনের দুই দিনেও কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। তবে হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে রাশেদা বেগম নামে এক নারীকে খুঁজছে তারা। তাকে আটক করতে পারলে হত্যা রহস্যের সমাধান হবে বলে মনে করছেন পুলিশ কর্মকর্তারা।

ওই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামী করে মামলা করেছেন নিহত আইনজীবীর বাবা আলী আহমেদ। নিহত ফারুকের বাবা আলী আহমদ বলেন, তাঁর ছেলেকে যারা নৃশংসভাবে খুন করেছে, তাদের বিচার চান তিনি।

এদিকে সহকর্মী আইনজীবীর হাত-পা বাঁধা লাশ উদ্ধারের ঘটনায় জড়িত দুর্বৃত্তদের গ্রেপ্তারের দাবিতে গতকাল রোববার চট্টগ্রাম আদালতে দেড় ঘণ্টা কর্মবিরতি পালন করেছেন তাঁর সহকর্মীরা। তাঁরা নৃশংস এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে নিষ্পত্তি করার দাবি জানান। এতে এক হাজারের বেশি আইনজীবী অংশ নেন। এছাড়া আসামিদের গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবিতে আজ সোমবার পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালন করবেন চট্টগ্রাম আদালতের আইনজীবীরা।

ছবি – চট্টগ্রামে আইনজীবীদের মানববন্ধন ও সমাবেশ

চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি রতন কুমার রায় গণমাধ্যমকে বলেন, আইনজীবী ফারুকের হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার ও দ্রুত বিচারের দাবিতে সোমবার পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালন করা হবে। আসামিদের গ্রেপ্তার না করা পর্যন্ত তাঁদের আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।

গত শনিবার সকালে নগরের চকবাজার এলাকার কে বি আমান আলী সড়কের পাশের একটি বাসা থেকে মুখে স্কচটেপ লাগানো ও হাত-পা বাঁধা অবস্থায় আইনজীবী ওমর ফারুকের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। তাঁকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়। গত বুধবার এক নারী ওই বাসা ভাড়া নেন। তিনি বাড়ির মালিককে বলেছিলেন, তাঁর স্বামী আইনজীবী। শুক্রবার রাতে ফারুক ওই বাসায় যান। খুনের ঘটনায় তাঁর বাবা আলী আহমদ বাদী হয়ে গত শনিবার রাতে চকবাজার থানায় মামলা করেন। মামলার এজাহারে খুনের ঘটনায় অজ্ঞাতপরিচয় কয়েকজনকে আসামি করা হয়। তবে খুনের ঘটনায় রাশেদা আক্তার নামের এক নারী জড়িত থাকতে পারেন বলে উল্লেখ করা হয়।

 

এদিকে ফারুক হত্যা মামলায় গতকাল রোববার সন্ধ্যা পর্যন্ত পুলিশ কাউকে আটক করতে পারেনি। চকবাজার থানার ওসি মীর নুরুল হুদা বলেন, হত্যায় জড়িত থাকতে পারে সন্দেহে রাশেদা আক্তার নামের এক নারীকে খুঁজছেন তাঁরা। তাঁকে গ্রেপ্তার করা গেলে জানা যাবে আইনজীবী ফারুক কেন বাসায় গিয়েছিলেন।

আইনজীবীদের মনববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ

আইনজীবী ওমর ফারুক বাপ্পীর লাশ উদ্ধারের পরপরই রাশেদা বেগমের নগরের বাদুরতলা বড় গ্যারেজ এলাকার আলম ভিলার বাসায় অভিযান চালায় পুলিশ। কিন্তু তাকে পাওয়া যায়নি। ঘটনার পরপরই রাশেদা বেগম পালিয়ে গেছে বলে জানান নগর গোয়েন্দা পুলিশের এক কর্মকর্তা।

চকবাজার থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আরিফ হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আইনজীবী হত্যাকাণ্ডৈর সঙ্গে এক নারী জড়িত থাকতে পারে বলে ধারণা করছি আমরা। তাকে গ্রেফতার করা গেলে কিভাবে, কি কারণে এ হত্যাকাণ্ড সংগঠিত হয়েছে তা বেরিয়ে আসবে বলে আশা করছি। তাছাড়া হত্যাকাণ্ডে কতজন অংশ নিয়েছিল তারও খোঁজ পাওয়া যাবে। ওই নারীকে ধরতে পুলিশের অভিযান চলছে।’

পুলিশ সূত্র জানায়, কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার লক্ষ্যারচর ইউনিয়নের মণ্ডলপাড়া গ্রামের সাহেদের বর বাড়ির জাকির হোসেনের মেয়ে রাশেদা বেগম। এ বছরের ১৮ জানুয়ারি যৌতুকের দাবিতে মারধরের অভিযোগ এনে আইনজীবী ওমর ফারুক বাপ্পীর বিরুদ্ধে মামলা করেন তিনি।

রাশেদার স্বামী জেলে থাকাকালে মামলা পরিচালনার সূত্র ধরে তার সঙ্গে সখ্যতা হয় বাপ্পীর। একপর্যায়ে গোপনে বিয়ে করেন দুইজন। পরে বিচ্ছেদ হয়ে যায়। যে বাসা থেকে শনিবার বাপ্পীর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে সেটি তিনদিন আগে ভাড়া করেছিলেন এক নারী। বাসা ভাড়া নেওয়া ওই নারী রাশেদা বলে ধারণা করছে পুলিশ।

বাসা ভাড়া নেওয়ার সময় ওই নারীর সঙ্গে একজন পুরুষও ছিল। বাড়ির মালিকের কাছে যাকে ভাই পরিচয় দিয়েছিলেন ওই নারী। বাপ্পীকে খুন করার সময় ওই পুরুষও সহযোগিতা করেছে বলে ধারণা করছেন পুলিশ কর্মকর্তারা।

জেলা প্রতিনিধি/ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকম