চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য অ্যাড ওমর ফারুক বাপ্পী খুনের ঘটনায় আটক তাঁর কথিত স্ত্রী রাশেদাসহ চারজনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। একইসঙ্গে আগামী দশদিনের মধ্যে আদালতে রিপোর্ট দাখিলের নির্দেশ দেন।
আজ মঙ্গলবার (২৮ নভেম্বর) চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ষষ্ঠ আদালত আসামীদের চারদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
আজ সকালে পুলিশের এসি প্রসিকিউশন সাহাবুদ্দিন অ্যাডভোকেট বাপ্পী খুনের ঘটনায় আটক ছয় আসামীকে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মেজনাজ শারমিন এর আদালতে হাজির করে ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করলে আদালত রাশেদা, হুমায়ূন, পারভেজ প্রকাশ, জাকির প্রকাশের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এছাড়া বাকি দুইজন আল-আমিন এবং রুবেল স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিতে রাজি হওয়ায় রিমান্ড হয়নি।
পুলিশের এসি প্রসিকিউশন সাহাবুদ্দিন আহমেদ রাষ্ট্রপক্ষে আদালতে বলেন, নিহত বিজ্ঞ আইনজীবী ওমর ফারুক বাপ্পী চারদিন আগে সহকর্মীদের সাথে এই আদালতে পেশাগত দায়িত্ব করেছিলে ন। কিন্তু দু:খের বিষয় তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে অত্যন্ত সুপরিকল্পিত ভাবে ঘর ভাড়া নিয়ে কৌশলে সেখানে ডেকে নিয়ে গিয়ে হত্যা করা হয়। ঘটনার মূল রহস্য উদঘাটন এবং মোটিভ জানার জন্য আসামীদের রিমান্ড প্রয়োজন।
সাহাবুদ্দিন আদালতে শুনানীতে আরো বলেন, “এই হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত চুরি এখনো উদ্বার হয়নি। নিহতের মোবাইল ফোন উদ্বার হয়নি। এছাড়া ঘটনার ইন্ধনদাতা কারা সেটা জানা যায়নি। ছয়জন আসামী আদালতে উপস্থিত আছেন। দুইজন ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী দিবেন। বাকী চারজনের ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করছি।”
আসামীদের পক্ষে কোন আইনজীবী ছিলেন না। উপস্থিত সকল আইনজীবী প্রসিকিউটশনের পক্ষে ছিলেন এবং একাত্বতা পোষণ করেন।
এই মামলায় দণ্ডবিধি ৩০২ ও ৩৪ ধারায় পুলিশ এজাহার দাখিল করেছেন।
এদিকে, আদালত প্রাঙ্গণে আইনজীবীরা আসামীদের দেখে বিক্ষোভে ফেটে পড়েন। পুলিশ বেষ্টিত আসামীদের ঘিরে ধরে ফাঁসির দাবিতে স্লোগান দিতে থাকেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে এসময় সিনিয়র আইনজীবীরা এসে সবাইকে শান্ত থাকার আহব্বান জানান। আইনজীবীদের তোপের মুখে নিরাপত্তা বাহীনি আসামীদের সহকারী পুলিশ কমিশনার প্রসিকিউশন এর কক্ষে নিয়ে যান। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত আইনজীবীরা দরজার বাইরে বিক্ষোভ করছে।
এর আগে, গতকাল সোমবার (২৭ নভেম্বর) সকালে রাশেদা ও হুমায়ূনকে কুমিল্লা থেকে আটক করা হয়। এরপর তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে দুপুরে নগরীর ইপিজেড এলাকায় অভিযান চালিয়ে বাকি চারজনকে আটক করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত শনিবার (২৫ নভেম্বর) সকালে নগরীর চকবাজার থানার কে বি আমান আলী রোডে বড় মিয়া মসজিদের সামনে একটি ভবনের নিচতলার বাসা থেকে বাপ্পীর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এসময় তার হাত-পা ও মুখ টেপ দিয়ে মোড়ানো এবং পুরুষাঙ্গ কাটা অবস্থায় পাওয়া যায়। বাপ্পী চট্টগ্রাম আদালতে আইন পেশায় ছিলেন। ২০১৩ সালে তিনি বারে অন্তর্ভুক্ত হন। তিনি কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার আলী আহমেদ এবং মনোয়ারা বেগমের ছেলে। এই ঘটনায় বাপ্পীর বাবা বাদি হয়ে নগরীর চকবাজার থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
সহকর্মীর নৃশংস খুনের বিচার চেয়ে গত দুইদিন ধরে উত্তাল চট্টগ্রামের আদালত প্রাঙ্গণ। আইনজীবী সমিতিও আসামীদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবীতে বিক্ষোভ-সমাবেশ-মিছিল করেন।
চট্টগ্রাম থেকে রায়হান ওয়াজেদ চৌধুরী/ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকম