চট্টগ্রাম বন্দরে ১২ কন্টেইনার মদ, সিগারেট ও টিভি আটকের চাঞ্চল্যকর ঘটনায় ১০৫০ কোটি টাকার মানিলন্ডারিং সংক্রান্ত ফৌজদারি মামলা দায়ের করেছে শুল্ক গোয়েন্দা।
রাজধানীর পল্টন মডেল থানায় গতকাল সোমবার (২৭ নভেম্বর) মামলাটি দায়ের করেছেন শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা বিজয় কুমার রায়। মামলা নম্বর ৫০।
মামলার আসামিরা হলেন, ঢাকার খিলক্ষেত থানার আব্দুল মোতালেব, সিঅ্যান্ডএফ মেসার্স রাবেয়া অ্যান্ড সন্সের স্বত্বাধিকারী জালাল উদ্দিন, ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গার মো. আরিফুজ্জামান, নেত্রকোণা জেলার পূর্বধলার মোহাম্মদ রুকনুজ্জামান, বগুড়ার সারিয়াকান্দির মো. এনামুল হক, ফেনীর ফুলগাজী থানার ফররুখ আহাম্মদ, নড়াইল জেলার লোহাগড়া থানার মো. রওশন আলম।
শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মইনুল খান সন্ধ্যায় গণমাধ্যমকে এ খবর নিশ্চিত করেন। অস্তিত্বহীন দুটি প্রতিষ্ঠানের নামে বিপুল পরিমাণ আমদানি নিষিদ্ধ মদ, সিগারেট আটকের ঘটনায় মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ (সংশোধনী ২০১৫) অনুযায়ী মামলাটি দায়ের করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
এর আগে গত মার্চ মাসের ৫ ও ৬ তারিখে চট্টগ্রাম বন্দরে আমদানি নিষিদ্ধ সিগারেট, মদ এবং অবৈধভাবে আনা বিপুল পরিমাণ টেলিভিশন ভর্তি ১২টি কনটেইনার জব্দ করেছিল শুল্ক গোয়েন্দা। এসব কন্টেইনার ইনভেন্ট্রিকালে ১৬ হাজার ১৭০ বোতল মদ, ৩ কোটি ৮৪ লাখ শলাকা সিগারেট, ৪ হাজার ৭৪টি এলইডি টেলিভিশন ও ২৮১টি আমদানি নিষিদ্ধ পুরাতন ফটোকপি মেশিন পাওয়া যায়।
মইনুল খান আরও জানান, পোল্ট্রি ফিডের মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানির ঘোষণা দিয়ে এই বিপুল পরিমাণ পণ্য আমদানি করা হয়। কিন্তু কনটেইনার খুলে কোনোটিতেই ঘোষিত পোল্ট্রি পণ্য পাওয়া যায়নি। হিনান আনহুই অ্যাগ্রো এলসি ও অ্যাগ্রো বিডি অ্যান্ড জেপি নামের দুটি অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠানের নামে মিথ্যা ঘোষণায় পণ্য আনে আমদানিকারক খোরশেদ আলম। ক্যাপিটাল মেশিনারিজ ঘোষণায় চীন থেকে আনা চালান দুটি খালাসের দায়িত্বে ছিল সিঅ্যান্ডএফ প্রতিষ্ঠান রাবেয়া অ্যান্ড সন্স।
শুল্ক গোয়েন্দার অনুসন্ধান সূত্রে জানা যায়, যে প্রতিষ্ঠানের নামে পণ্যগুলো আনা হয়েছে তার কোনো অস্তিত্ব নেই। অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠানকে জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে ম্যানুফ্যাকচারার হিসেবে প্রদর্শন করে মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানির জন্য ঋণপত্র (এলসি) খুললেও প্রকৃতপক্ষে মূলধনী যন্ত্রপাতির পরিবর্তে বিপুল পরিমাণ মদ, সিগারেট ও টেলিভিশনসহ অন্যান্য বাণিজ্যিক পণ্য আমদানি করা হয়েছিল।
উল্লেখ্য, সিগারেটের আমদানি শুল্ক ৫০০ শতাংশ, মদের আমদানি শুল্ক প্রায় ৬০০ শতাংশ আর টিভির আমদানি শুল্ক ১৯০ শতাংশ।
অথচ ঘোষিত মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানির শুল্ক মাত্র ১ শতাংশ। ম্যানুফ্যাকচারার হিসেবে ভুয়া কাগজ দিয়ে পণ্য খালাসে গ্রিন চ্যানেলের অবৈধ সুবিধা নেয়ার চেষ্টা ছিলো। বিপুল পরিমাণ শুল্ক ফাঁকি দিতেই এভাবে মিথ্যা ঘোষণায় এই চালান আনা হয়েছিল। আসামিরা পরস্পর যোগসাজসে চোরাচালানের মাধ্যমে আমদানিকৃত ১২টি পণ্য চালানের বিপরীতে শুল্ককরাদি ফাঁকি দিয়ে মানিলন্ডারিংয়ের অপরাধ করেছেন।
শুল্ক গোয়েন্দার অনুসন্ধানে দেখা যায়, এই ১২ কন্টেইনার পণ্য আটকের আগেও একই আমদানিকারক একই ব্যাংকের মাধ্যমে আরও ৭৮টি কন্টেইনার একইরকম মূলধনী যন্ত্রপাতি ঘোষণায় আমদানি করে খালাস নিয়েছেন। ধারণা করা হচ্ছে, এগুলোতেও অবৈধ ও নিষিদ্ধ পণ্য আমদানি করা হয়েছে যার বাজারমূল্য প্রায় ১০৫০ কোটি টাকা। এত বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচারের মামলা উদঘাটন এই প্রথম।
নিজস্ব প্রতিনিধি/ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকম