আইনজীবী ওমর ফারুক বাপ্পীর মরদেহ

স্ত্রীর স্বীকৃতি না পাওয়ায় আইনজীবী বাপ্পী খুন

স্ত্রী হিসাবে স্বীকৃতি না পাওয়ায় আইনজীবী বাপ্পী কে খুন করেন রাশেদা চট্রগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য অ্যাড ওমর ফারুক বাপ্পী খুনের ঘটনায় রাশেদা বেগমসহ (২৭) ছয়জনকে আটকের পর তাদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে খুনের কারণ সম্পর্কে বলেছেন পিবিআইয়ের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মেট্রো) মো.মঈন উদ্দিন।

দেলোয়ার হোসেন নামক এক মাদক মামলার আসামি আইনজীবী ওমর ফারুক বাপ্পীর মক্কেল ছিলেন।দেলোয়ার জেলে যাবার পর তার স্ত্রী রাশেদা জামিন নিতে গিয়ে যোগাযোগ করেন বাপ্পীর সঙ্গে। পরবর্তীতে সেই সম্পর্কের সূত্রে বাপ্পীর সঙ্গে গোপনে বিয়ে হয়। কিন্তু স্বীকৃতি দেননি।

অ্যাডভোকেট ওমর ফারুক বাপ্পী (ফাইল ছবি)

সম্প্রতি বাপ্পীকে বিয়ে দেওয়ার জন্য তার পরিবার মেয়ে খুঁজছিল। বিষয়টি শুনে রাশেদা সামাজিক ও পারিবারিক স্বীকৃতি পাওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেন। বারবার চেষ্টা করেও আইনজীবী বাপ্পীর কাছ থেকে স্ত্রী হিসাবে স্বীকৃতি আদায় করতে না পেরে প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে উঠেন রাশেদা। কাবিননামার টাকা বাড়িয়ে বাপ্পীকে বাধ্য করার কৌশল নেন। সেই কৌশল বাস্তবায়ন করতে গিয়ে বন্ধু হুমায়ূনকে নিয়ে বাপ্পীকে খুন করে ফেলেন রাশেদা, সঙ্গে ছিলেন আরো চারজন।

পিবিআই এই হত্যাকাণ্ডকে পূর্বপরিকল্পিত বলে জানালেও রাশেদা সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেছেন, বাপ্পীকে খুনের কোন পরিকল্পনা তার ছিল না। বন্ধু হুমায়ূনের সঙ্গে পরামর্শ করে তাকে ভয় দেখিয়ে কাবিননামার টাকা ২ লাখ থেকে বাড়িয়ে ৫ থেকে ১০ লাখ টাকা করার পরিকল্পনা তারা করেছিল। রাশেদা বলেন, ‘হুমায়ূন তিন বছর ধরে আমার বন্ধু। আমি তাকে বলেছি, বাপ্পীর জন্য তো মেয়ে খুঁজছে, আমি এখন কি করব ? তখন হুমায়ূন আমাকে পরামর্শ দিয়েছে কাবিননামার টাকা বাড়িয়ে নিতে ‍পারলে বাপ্পী আমাকে মেনে নেবে। তখন আমরা বাপ্পীকে ভয় দেখানোর পরিকল্পনা করি। ’

সংবাদ সম্মেলনে পিবিআই কর্মকর্তা মঈন উদ্দিন বলেন, বাপ্পী গোপনে বিয়ে করে রাশেদাকে স্বীকৃতি দেননি। তিনি রাশেদার সঙ্গে সংসার করতে চান না। অন্যদিকে রাশেদা তাকে ছাড়তে চান না। তারা পরস্পরের বিরুদ্ধে দুইটা মামলাও করেছেন। বাপ্পী ভূয়া তালাকনামা আদালতে দাখিল করে জামিন নেন। এসব বিষয় থেকেই মূলত দ্বন্দ্ব এবং হত্যাকাণ্ড।

পিবিআই পরিদর্শক এনায়েত কবির জানান, হুমায়ূনকে ভাই সাজিয়ে রাশেদা ২০ নভেম্বর বাকলিয়ায় কে বি আমান আলী রোডের বাসাটি ভাড়া নেয়। ওই বাসায় ঘটনার দিন (২৪ নভেম্বর) রাত ১০টার দিকে ‍বাপ্পী এবং রাশেদা ছিলেন। এসময় হুমায়ূন অন্য চারজনকে নিয়ে ওই বাসায় যান। বাসায় ঢুকে রাশেদার বুকে ছোরা ধরার নাটক করেন। তখন বাপ্পী চিৎকার দিলে তার মুখ চেপে ধরে হাত-পা, মুখে টেপ লাগিয়ে দেয়। অজ্ঞান হয়ে যাওয়া বাপ্পীর আর জ্ঞান ফেরেনি। পরে বাপ্পীর পুরুষাঙ্গ কেটে দেয়।

গ্রেফতার অভিযান পরিচালনাকারী টিমের সদস্য পিবিআইয়ের এএসআই (মেট্রো) তারেক হোসাইন জানান, রাত ১০টা থেকে ভোর রাতের মধ্যে হত্যাকাণ্ড সম্পন্ন করে সবাই বেরিয়ে যান। হুমায়ূনকে নিয়ে রাশেদা বহদ্দারহাটে বোনের বাসায় গিয়ে এক রাত থাকেন। পরদিন দুজনের কুমিল্লার মিয়াবাজার গিয়ে একটি বাসা ভাড়া নেন। সেখান থেকে রাত পৌনে ২টার দিকে সৌদিয়া বাসে করে ঢাকায় রওনা দেন। ভোরে সায়দাবাদ বাস টার্মিনালে পৌঁছেন। সেখান থেকে টঙ্গীতে যান। টঙ্গীতে গিয়ে কাঙ্খিত মানুষের দেখা না পেয়ে হুমায়ূন ও রাশেদা আবারো কুমিল্লার মিয়াবাজারে ফিরে আসেন বলে জানান এএসআই তারেক।

আটক হওয়া বাকি পাঁচজন হলেন, হুমায়ূন রশীদ (২৮), আল-আমিন (২৮), মো.পারভেজ প্রকাশ আলী (২৪), আকবর হোসেন প্রকাশ রুবেল (২৩) এবং জাকির হোসেন প্রকাশ মোল্লা জাকির (৩৫)। রাশেদা এবং হুমায়ূন ছাড়া বাকি চারজন সিইপিজেডে পোশাক কারখানায় চাকুরি করেন। বাপ্পীকে ভয় দেখানোর জন্য তাদের হুমায়ূন নিয়ে গিয়েছিল।

রাশেদা বেগম (ফাইল ছবি)

রাশেদা তাদের চিনতেন না বলে জানিয়েছেন পিবিআইয়ের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মঈন উদ্দিন। আটক ৬ জনকে মঙ্গলবার আদালতে হাজির করে সাতদিনের রিমান্ড চাওয়া হবে বলে জানিয়েছেন পিবিআই কর্মকর্তা মঈন।

গত শনিবার (২৫ নভেম্বর) সকালে নগরীর চকবাজার থানার কে বি আমান আলী রোডে বড় মিয়া মসজিদের সামনে একটি ভবনের নিচতলার বাসা থেকে বাপ্পীর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এসময় তার হাত-পা ও মুখ টেপ দিয়ে মোড়ানো এবং পুরুষাঙ্গ কাটা অবস্থায় পাওয়া যায়। বাপ্পী চট্টগ্রাম আদালতে আইন পেশায় ছিলেন। ২০১৩ সালে তিনি বারে অন্তর্ভুক্ত হন। তিনি কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার আলী আহমেদ এবং মনোয়ারা বেগমের ছেলে। এই ঘটনায় বাপ্পীর বাবা বাদি হয়ে নগরীর চকবাজার থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

চট্টগ্রাম প্রতিনিধি/ ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডট কম