আদালতে হত্যা মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ চলছে। সাক্ষ্য দিতে এসেছেন নুরুজ্জামান শুভ। নিয়মমতো বিচারক দেখে নিচ্ছেন সাক্ষীদের তালিকা। সেখানেই ঘটল বিপত্তি। সাক্ষী নুরুজ্জামান শুভ তো মৃত! তিনি যে মৃত এর পক্ষে কাগজপত্রও জমা আছে আদালতের কাছে।
মৃত ব্যক্তিই সাক্ষ্য দিতে আদালতে চলে এসেছেন? অন্তত কাগজপত্র তাই বলছে।
ঢাকার চার নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক আবদুর রহমান সরদারের আদালতে গতকাল বুধবার (২৯ নভেম্বর) এ ঘটনা ঘটেছে। ওই আদালতে জাতীয় অন্ধ সংস্থার মহাসচিব খলিলুর রহমান হত্যা মামলার বিচারকাজ চলছে।
২০১১ সালে নিহত হন জাতীয় অন্ধ সংস্থার মহাসচিব খলিলুর রহমান। পরে এ ঘটনায় মিরপুর থানায় একটি মামলা হয়।
ওই মামলায় ২০১৫ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি সাক্ষী নুরুজ্জামান শুভ মারা গেছেন বলে আদালতে সনদ দাখিল করেন ময়মনসিংহ কোতোয়ালি মডেল থানার সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) মোয়াজ্জেম হোসেন। এমনকি ওই প্রতিবেদন অগ্রগামী করার জন্য স্বাক্ষর করেন সংশ্লিষ্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি)।
এদিকে আজ সাক্ষী নুরুজ্জামান শুভ হঠাৎ আদালতে হাজির হয়ে ওই মামলায় সাক্ষ্য দিয়েছেন। পরে বিষয়টি নজরে আনা হলে ঢাকার চার নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক আবদুর রহমান সরদার সাতদিনের মধ্যে ময়মনসিংহের কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি ও এএসআই মো. মোয়াজ্জেম হোসেনকে স্বশরীরে ট্রাইব্যুনালে হাজির হয়ে কারণ দর্শানোর নির্দেশ দেন।
এএসআই মোয়াজ্জেম মৃত্যুর প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন, ‘সাক্ষী নুরুজ্জামান শুভর ঠিকানায় উপস্থিত হইয়া এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গকে জিজ্ঞাসাবাদ করিয়া জানা যায় যে, সাক্ষী মৃত্যুবরণ করিয়াছে। বিধায় তাহাকে আদালতে হাজির করা সম্ভব হয় নাই। একই সঙ্গে ময়মনসিংহ পৌরসভা থেকে সাক্ষী নুরুজ্জামান শুভর একটি মৃত্যু সনদ দাখিল করা হয়।’
আদালতের বেঞ্চ সহকারী আবুল কালাম এ বিষয়ে গণমাধ্যমকে বলেন, ‘জীবিত সাক্ষী নুরুজ্জামানই মামলার একমাত্র প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী এবং এই সাক্ষী যাতে আদালতে উপস্থিত হতে না পারে, সে জন্য ময়মনসিংহ কোতোয়ালি মডেল থানাকে আসামিপক্ষ ম্যানেজ করেছে বলে আদালতে বাদীপক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়।’
সাক্ষীর মৃত্যুর প্রতিবেদন ও জাল মৃত্যু সনদ সংশ্লিষ্ট সবার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে একটি লিখিত দরখাস্ত দাখিল করা হয়। পরে বিচারক সাতদিনের মধ্যে ময়মনসিংহের কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি ও এএসআই মো. মোয়াজ্জেম হোসেনকে স্বশরীরে ট্রাইব্যুনালে হাজির হয়ে কারণ দর্শানোর নির্দেশ দেন।
এ বিষয়ে ময়মনসিংহ কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, ‘বিচারক আমাকে সাক্ষীর বিষয়ে ফোন করলে আমি সাক্ষীকে আদালতে হাজির করি। সাক্ষী দীর্ঘদিন যাবৎ পলাতক ছিল বিধায় খুঁজে পাওয়া যায়নি।’
কারণ দর্শানোর নোটিশের ব্যাপারে ওসি কামরুল ইসলাম বলেন, ‘আদালত থেকে এখনো কোনো কাগজ পাইনি।’
জজকোর্ট প্রতিনিধি/ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকম