রোহিঙ্গা শরণার্থীরা তাদের নাগরিক অধিকার প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমার ফেরত যাবে না জানানো হয়েছে এক গবেষণা প্রতিবেদনে। আন্তর্জাতিক গবেষণা সংস্থা অক্সফাম এই গবেষণা পরিচালনা করে।
আজ মঙ্গলবার (১৯ ডিসেম্বর) বিকেলে রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে এই গবেষণা প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়।
কক্সবাজারে অস্থায়ী ক্যাম্পে বসবাসরত ২০০ রোহিঙ্গা শরণার্থীর সঙ্গে কথা বলে অক্সফাম এই প্রতিবেদন তৈরি করেছে। এই প্রসঙ্গে অক্সফামের রিজিওনাল ক্যাম্পেইন ম্যানেজার সুলতানা বেগম বলেন, ‘অক্সফাম রোহিঙ্গাদের সঙ্গে গ্রুপ আলোচনাসহ বিশদভাবে সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে এই প্রতিবেদন তৈরি করেছে।’
গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ভাষ্য, তাদের কাজ করা ও অবাধে ভ্রমণ করার নিশ্চয়তা না দেওয়া পর্যন্ত তারা মিয়ানমার ফেরত যাবে না। শরণার্থীদের মধ্যে বিশেষ করে নারীরা সবচেয়ে বেশি মানসিক আঘাতপ্রাপ্ত। কারণ তাদের ধর্ষণ ও প্রিয়জনের মৃত্যুর মতো দুর্বিষহ যন্ত্রণার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে।
অক্সফামের এই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, মানবাধিকারের শর্ত পূরণ হওয়ার আগে জোরপূর্বক প্রত্যাবর্তন করানো হলে রোহিঙ্গারা আত্মহত্যা করবে। রোহিঙ্গারা যেখানে অস্থায়ীভাবে বসবাস করছে, সেখানেও তারা যৌন হয়রানিসহ অপহরণের শিকার হচ্ছে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
এর আগে মিয়ানমার জানুয়ারির শেষের দিকে রোহিঙ্গাদের ফেরত নেওয়ার জন্য সম্মত হলেও অক্সফামের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তাদের স্বদেশে প্রত্যাবর্তনের নিরাপদ পরিবেশ এখনও নিশ্চিত করা হয়নি। এই ক্ষেত্রে জাতিসংঘ প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। শরণার্থীদের মধ্যে যে মানবিক সাহায্যের প্রয়োজন, সে ব্যাপারে জাতিসংঘ সাহায্য করতে পারে।
এছাড়া প্রতিবেদনে অক্সফামের পক্ষ থেকে কয়েকটি প্রস্তাবনার কথাও উল্লেখ করা রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে, মিয়ানমার কর্তৃপক্ষকে সহিংসতার অবসান ঘটিয়ে কফি আনান কমিশনের প্রতিবেদনের সুপারিশ বাস্তবায়ন করা। যার মধ্যে মিয়ানমারের সব নাগরিকের সমঅধিকারের কথা বলা হয়েছে, রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবর্তন স্বেচ্ছাপূর্বক ও নিরাপদ হতে হবে। তারা যেন স্বাধীনভাবে চলাচল করতে পারে, তা নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়া যারা মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে, তাদের বিরুদ্ধে স্বাধীন তদন্ত করে অভিযুক্তদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে যারা জমি হারিয়েছে, তাদের প্রয়োজনীয় ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন অক্সফামের ডিরেক্টর জেনারেল ড. ত্রিনি লি, এশিয়া রিজিওনাল ডিরেক্টর লিলিয়ান মার্কডো ক্যারন ও অক্সফামের ইন্ডিয়ার প্রতিনিধি মৃদুলা বাজাজ প্রমুখ।
নিজস্ব প্রতিনিধি/ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকম