বাংলাদেশের উচ্চ আদালত

মুন সিনেমা হলের মালিককে ৯৯ কোটি টাকা দেওয়ার নির্দেশ

ঢাকার ওয়াইজঘাট এলাকার মুন সিনেমা হলের জমি ও স্থাপনার দাম ৯৯ কোটি টাকার ওপরে বলে এই অর্থ হলের মালিককে দিতে নির্দেশ দিয়েছেন আপিল বিভাগ। তিন কিস্তিতে এই অর্থ পরিশোধ করতে মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

আজ বৃহস্পতিবার (১৮ জানুয়ারি) ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞার নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যে আপিল বিভাগ এই আদেশ দেন। এসময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। ইতালিয়ান মার্বেল ওয়ার্ক লিমিটেডের মালিক মাকসুদুল আলমের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী তৌফিক নেওয়াজ।

পরে তিনি মাহবুবে আলম সাংবাদিকদের বলেন, ‘প্রথম দুই মাসের মধ্যে ২৫ কোটি টাকা, দ্বিতীয় দুই মাসের মধ্যে আরও ২৫ কোটি টাকা এবং এ বছরের ৩০ জুলাইয়ের মধ্যে বাকি টাকা পরিশোধ করতে বলেছেন আদালত।’

প্রসঙ্গত, পুরান ঢাকার ওয়াইজ ঘাট এলাকার মুন সিনেমা হলের মালিক ছিল ইতালিয়ান মার্বেল ওয়ার্কস লিমিটেড নামে একটি কোম্পানি। মুক্তিযুদ্ধের সময় ওই সম্পত্তি পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়। পরে ওই সম্পত্তি মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের অধীনে ন্যস্ত করা হয়। তবে ইতালিয়ান মার্বেলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাকসুদুল আলম এই সম্পত্তির মালিকানা দাবি করেন।

জিয়াউর রহমানের শাসনামলে ঘোষিত এক সামরিক আদেশে সরকার কোনও সম্পত্তি পরিত্যক্ত ঘোষণা করলে তা আদালতে চ্যালেঞ্জ করা যাবে না বলে উল্লেখ করা হয়। ইতালিয়ান মার্বেল ২০০০ সালে হাইকোর্টে ওই ফরমানসহ সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী চ্যালেঞ্জ করেন।

২০০৫ সালের ২৯ আগস্ট হাইকোর্ট পঞ্চম সংশোধনী বিষয়ে রায় দেন। রায়ে মোশতাক, সায়েম ও জিয়ার ক্ষমতাগ্রহণকে সংবিধান পরিপন্থী ঘোষণা করা হয়। এই রায়ের বিরুদ্ধে ২০১০ সালের ২ ফেব্রুয়ারি আপিল করা হয়। আপিল বিভাগ হাইকোর্টের রায় বহাল রাখেন। পাশাপাশি ৯০ দিনের মধ্যে ইতালিয়ান মার্বেলের কাছে মুন সিনেমা হল ফেরত দিতে মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টকে নির্দেশ দেওয়া হয়। এ অবস্থায় সম্পত্তি ফিরে পেতে ২০১২ সালের ১০ জানুয়ারি ইতালিয়ান মার্বেল ওয়ার্কস মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ ছয় জনের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার আবেদন করেন। এর ধারাবাহিকতায় ২০১৭ সালের ১৫ জানুয়ারি আপিল বিভাগ ওই সম্পত্তি অভিজ্ঞ ও নিরপেক্ষ এক প্রকৌশলীকে দিয়ে জমি ও স্থাপনার মূল্য নির্ধারণ করে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করতে নির্দেশ দেন।

অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরীকে দিয়ে এই মূল্য নির্ধারণ করতে বলা হয়। এর ধারাবাহিকতায় এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন আদালতে উপস্থাপন করে রাষ্ট্রপক্ষ। আজ বৃহস্পতিবার ওই আবেদনটি নিষ্পত্তি করে এই আদেশ দেন আদালত।

সুপ্রিমকোর্ট প্রতিনিধি/ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকম