দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী ও নিরীহ মানুষের বিরুদ্ধে পুলিশের পক্ষ থেকে মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলা হচ্ছে অভিযোগ করে পুলিশের গ্রেফতার ও নির্যাতন থেকে রক্ষার জন্য আগাম জামিনের ব্যাপারে হাইকোর্টকে ইতিবাচক মনোভাব দেখাতে প্রধান বিচারপতির বিশেষ দৃষ্টি আশা করেছেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও বিএনপি নেতা অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন।
এ সময় তিনি নতুন প্রধান বিচারপতি হাইকোর্ট বিভাগে স্থায়ী বিচারক হিসেবে নিয়োগের সময় বিএনপি সরকার ক্ষমতায় ছিল বলেও স্মরণ করিয়ে দেন বার সভাপতি। প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পাওয়ায় বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনকে অভিনন্দন জানাতে গিয়ে এমন আশা প্রকাশ করেন সমিতির সভাপতি ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান জয়নুল আবেদীন।
আজ রোববার (৪ ফেব্রুয়ারি) প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনকে অভিনন্দন জানান অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি। আপিল বিভাগের প্রধান বিচারপতির এজলাস কক্ষে এই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে উভয় বিভাগের বিচারপতি ও জ্যেষ্ঠ আইনজীবীরা উপস্থিত ছিলেন।
সমিতির সভাপতি জয়নুল আবেদীন লিখিত বক্তব্যে প্রধান বিচারপতির উদ্দেশে বলেন, রাজনৈতিক কারণে ঢালাওভাবে হাজার হাজার লোককে নির্বিচারে আসামি করে ক্ষমতাসীন দলের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের প্রচেষ্টা চলছে। সেক্ষেত্রে হাইকোর্ট বিভাগ অবশ্যই পুলিশের গ্রেফতার ও নির্যাতন থেকে রক্ষার জন্য আগাম জামিনের ব্যাপারে ইতিবাচক মনোভাব দেখাবেন বলে আমরা আশা করি। এ ব্যাপারে আপনার বিশেষ দৃষ্টি থাকবে বলে আইনজীবী সমাজ প্রত্যাশা করে।
তিনি বলেন, আজ এক বিশেষ সময় বিশেষ পরিস্থিতিতে দেশ ও জাতির এক ক্রান্তিলগ্নে নবনিযুক্ত প্রধান বিচারপতি অত্যন্ত বিজ্ঞ এবং দক্ষ বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনকে অভিনন্দন জানাতে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির পক্ষ থেকে আমরা এখানে উপস্থিত হয়েছি।
‘দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টে আজ আপনার বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি নিয়োগকে আমরা স্বাগত ও অভিনন্দন জানাচ্ছি। আপনি এক সময় এই বারের একজন সম্মানিত সদস্য ছিলেন। এটা আমাদের গর্ব এবং আপনি আমাদেরই একজন। আপনার জন্ম এক ঐতিহ্যবাহী আইনজীবী পরিবারে।’
জয়নুল আবেদীন বলেন, দেশে আজ এক চরম রাজনৈতিক অস্থিরতা বিরাজমান। এই সুযোগে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর কতিপয় সদস্য ক্ষমতাসীন দলের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করার জন্য ঢালাওভাবে রাজনৈতিক নেতাকর্মী ও নিরীহ মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা এবং হয়রানিমূলক মামলা করছে। একেকটি মামলায় শত থেকে হাজার জনকে আসামি দেখানো হচ্ছে। আর গ্রেফতারের ভয় দেখিয়ে অবাধে গ্রেফতার বাণিজ্য চলছে। এই মিথ্যা এবং হয়রানিমূলক মামলা থেকে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতিও রক্ষা পায়নি। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও সম্পাদকের বিরুদ্ধেও রাজনৈতিক মামলা দিয়ে মানসম্মান ক্ষুণ্ন করছে যা অতীতে আমরা কখনো দেখি নাই।
প্রধান বিচারপতিকে উদ্দেশ্য করে তিনি আরও বলেন, আপনার সামনে এখন চালেঞ্জ হচ্ছে দেশে আইনের শাসন, মানবাধিকার, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা এবং বিচার বিভাগে যে ক্ষত সৃষ্টি হয়েছে তা পূরণ করা এবং বিচার বিভাগের প্রতি মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনা। দেশের সর্বোচ্চ আদালতের প্রধান বিচারপতিকে যেভাবে বিদায় করা হয়েছে এবং এর ফলে যে শূন্যতার সৃষ্টি হয়েছিল তাতে করে বিচার বিভাগ আজ মহা সংকটের সম্মুখীন। একদিকে নিম্ন আদালতগুলোর ওপর ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের অবাধ হস্তক্ষেপ অপরদিকে অসংখ্য মামলার ভারে ভারাক্রান্ত নিম্ন আদালতগুলো হিমশিম খাচ্ছে।
জয়নুল আবেদীন বলেন, ১৯৯৭ সনে প্রণীত ম্যাপ এবং খসড়া প্ল্যান অনুযায়ী নির্ধারিত স্থানে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির বহুতল ভবন নির্মাণের জন্য জায়গা খালি করার ব্যবস্থা এবং নতুন বহুতল ভবন নির্মাণের ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আপনার নিকট জোর দাবি জানাচ্ছি।
সুপ্রিমকোর্ট প্রতিনিধি/ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকম