যে আদালতে খালেদা জিয়ার মামলার রায়

বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দায়ের করা দুর্নীতির যে মামলার রায়ের দিকে সবার দৃষ্টি, সেই মামলার রায় ঘোষণা করা হবে বিডিআর বিদ্রোহ মামলা পরিচালনাকারী আদালতেই। আদালতটি হলো পুরান ঢাকার বকশীবাজারের আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে অস্থায়ীভাবে স্থাপিত বিশেষ আদালত। বিডিআর বিদ্রোহ মামলাটি পরিচালনার সময় স্থান সংকুলান না হওয়ায় এখানেই স্থাপিত হয়েছিল এই আদালত। একই কারণ দেখিয়ে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দায়ের করা জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলা দুটিও এই আদালতে স্থানান্তর করে সরকার। খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দায়ের করা আরও ১৪টি মামলাও সম্প্রতি এই আদালতে নেওয়া হয়েছে।

দুদকের করা জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার আদালত দায়রা জজ আদালত ভবন থেকে সরকারি আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে স্থানান্তর করা হয় ২০১৪ সালের ৭ মার্চ। একই সময় জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলাটিও এই অস্থায়ী বিশেষ আদালতে নেওয়া হয়। মামলা দুটি চলছে ৫ নম্বর বিশেষ জজ অস্থায়ী আদালতের বিচারক মো. আখতারুজ্জামাদের আদালতে। যুক্তিতর্ক শেষে আদালত বৃহস্পতিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) রায় ঘোষণার তারিখ নির্ধারণ করেন।

আদালত ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘ এই বিচার প্রক্রিয়ায় মামলা থেকে রেহাই পেতে খালেদা জিয়া উচ্চ আদালতে গেছেন বার বার। তার অনাস্থার কারণে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে তিন বার এ মামলার বিচারক বদল হয়েছে। শুনানিতে হাজির না হওয়ায় তিন বার তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানাও জারি হয়। ২০১৪ সালের ২২ সেপ্টেম্বর এ মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়। একই বছরের ৭ মে ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ আদালত থেকে এ দুটি মামলা বকশীবাজার আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে স্থাপিত বিশেষ আদালতে স্থানান্তর করা হয়।

আইন মন্ত্রণালয় থেকে এ সংক্রান্ত জারি করা আদেশে বলা হয়, ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালত ভবনে অবস্থিত মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের টাকা আত্মসাৎ সংক্রান্ত মামলা বিচারাধীন। ওই ভবনে বহু সংখ্যক আদালতের বিচার কার্যক্রম পরিচালিত হওয়ায় ভবন এবং এলাকাটি আদালত চলাকালীন জনাকীর্ণ থাকে। তাই নিরাপত্তার কারণে বিচার কাজ পরিচালনা করার জন্য ঢাকা মহানগরের বকশীবাজার এলাকার সরকারি আলিয়া মাদ্রাসা ও সাবেক ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার সংলগ্ন মাঠে নির্মিত ভবনটিকে (বিডিআর হত্যাকাণ্ড মামলার অস্থায়ী আদালত ছিল) অস্থায়ী আদালত হিসেবে ঘোষণা করা হলো।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ‘ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-২ এ বিচারাধীন শাহবাগ থানার ৫৩ (২) ০৮ মামলাটি ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিশেষ এজলাসে স্থানান্তর করা হয়েছে। মামলাটি ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতে পরিচালিত হলেও ভবনটিতে আরও অসংখ্য মামলার কাজ চলে। ফলে জনাকীর্ণ এই ভবনে নিরাপত্তাজনিত কারণে খালেদা জিয়ার মামলাটি সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে।’

একই কারণ দেখিয়ে তেজগাঁও থানার ২০ (১২) ০৭ নম্বর, ৫ (৯) ০৭ নম্বর, ১৫ (০৮) ১১ নম্বর এবং দুর্নীতি দমন কমিশনের দায়ের করা রমনা থানার ৮ (৭) ০৮ নম্বর মামলার কার্যক্রম স্থানান্তর করা হয়।

এছাড়া, বিশেষ ক্ষমতা আইনে দায়ের করা দারুস সালাম থানার ৬২ (১) ১৫ নম্বর, ৩ (৩) ১৫ নম্বর, ৮ (২) ১৫ নম্বর, ৫ (২) ১৫, ৬ (২) ১৫, (২) ১৫, ১২ (২) ১৫, ২৯ (২) ১৫ এবং যাত্রাবাড়ী থানায় দায়ের করা বিশেষ মামলা ৫৯ (১) ১৫ বকশীবাজার আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে স্থাপিত ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিশেষ এজলাসে স্থানান্তর করা হয়েছে।

এর আগে বিডিআর বিদ্রোহ মামলাটি বকশীবাজার আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে স্থাপিত আদালতে নিয়ে আসা হয়। ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি পিলখানায় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিডিআরের সদর দফতরে বিদ্রোহের ঘটনায় ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন প্রাণ হারান। ঢাকার অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ মো. আখতারুজ্জামান ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর এই হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করেন। এতে ১৫২ আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। বাংলাট্রিবিউন