কর্মবিরতি, ধর্মঘট করে অচলাবস্থা তৈরি করা যাবে না বলে একাধিক বার বিভিন্ন মামলায় রায় দিয়েছে আদালত৷অথচ সেই আদালতই এখন অচল হয়ে রয়েছে! একাধিক অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এবং আইনজীবী হাইকোর্ট, সুপ্রিম কোর্টের নানা সময়ের নির্দেশ মনে করিয়ে দিয়ে বলছেন, ‘আদালত কিন্তু বিচারপতি বা আইনজীবীদের জন্য নয়৷বিচারপ্রার্থীদের জন্য৷কর্মবিরতি করে তাঁদেরই সমস্যা আরও বাড়িয়ে তোলা হচ্ছে৷ এতে সাধারণ মানুষের আইনের উপর আস্থা আরও কমবে৷’
যদিও এ সব যুক্তির ধারকাছ দিয়ে না গিয়ে গত তিন সপ্তাহ ধরে কলকাতা হাইকোর্টে কর্মবিরতি চালিয়ে যাচ্ছেন আইনজীবীরা৷ এই মুহূর্তে সারা দেশে প্রায় ৩০ লক্ষ মামলা ঝুলে রয়েছে৷কলকাতা হাইকোর্টে মামলা জমে আছে প্রায় আড়াই লক্ষ৷এই অবস্থায় আইনজীবীদের লাগাতার কর্মবিরতিতে প্রবল সমস্যায় পড়েছেন সাধারণ মানুষ৷বিচারপতিরা রোজ আদালতে এসে বসে থাকলেও শুনানি হচ্ছে না৷ ফলে মামলা জমছে আরও৷
আইনজ্ঞরা বলছেন, আইনি পথেই বিচারপতি নিয়োগ সংক্রান্ত সমস্যার সমাধান সম্ভব৷তাঁদের মতে, সুপ্রিম কোর্ট বা হাইকোর্ট স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে দ্রুত বিচারপতি নিয়োগের নির্দেশ দেওয়ার পাশাপাশি আইন মেনে কেউ জনস্বার্থ মামলাও করতে পারতেন৷ আদালতের নির্দেশ না মানলে ফৌজদারি ধারায় আদালত অবমাননা ধরে ব্যবস্থা নিতে পারত উচ্চ আদালত৷
ওডিশা হাইকোর্টের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি সুশান্ত চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘ন্যায়বিচারের জন্য ব্যবস্থা নেওয়ার বিশেষ ক্ষমতা রয়েছে সুপ্রিম কোর্টের৷’
আইনজীবী অরুণাভ ঘোষ বলেন, ‘আদালতের নির্দেশ না মানলে আদালত অবমাননায় ফৌজদারি ব্যবস্থা নিতে পারত আদালত৷ কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধেই তো দুর্নীতির অভিযোগ৷ তিনি ব্যবস্থা নেবেন কী করে?’
আইনজ্ঞ অমিত সেন বলেন, ‘কর্মবিরতি কোনও সমাধান হতে পারে না৷ বিচারব্যবস্থা ভেঙে পড়া মানে গণতন্ত্র ভেঙে পড়া৷ আরও বেশি জনমত গড়ে তোলা উচিত৷’
সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি অশোককুমার গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘আইনজীবীরা তো জুটমিলের শ্রমিক নন যে লাগাতার ধর্মঘট করতে হবে৷ আন্তঃরাজ্য সেমিনার করে জনমত গড়ে তোলা যেত৷ তা ছাড়া সুপ্রিম কোর্ট বা হাইকোর্টের হাতে নির্দেশ দেওয়ার ক্ষমতা আছে৷ ইচ্ছে থাকলে সেটা করতে পারতেন বিচারপতিরা৷’
কয়েক বছর আগে সুপ্রিম কোর্টের তদানীন্তন প্রধান বিচারপতি টি এস ঠাকুর বিচারপতি নিয়োগ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর গড়িমসি করলে পিএমও-র সচিবকে ডেকে পাঠাবেন বলেছিলেন৷ প্রকাশ্যে প্রধানমন্ত্রীকে আদালতের নির্দেশ মানছেন না বলে দোষারোপও করেছিলেন৷
আইনজীবী বরুণকুমার দাস বলেন, ‘আদালত বলেছে বন্ধ, কর্মবিরতি করা যাবে না৷ আর এখানে সামান্য কিছু হলেই জনস্বার্থ মামলা হয়৷ কর্মবিরতি না করে সুপ্রিম কোর্টে জনস্বার্থ মামলা করলে ভালো হত৷’ ওডিশা হাইকোর্টেও ৪০ দিন ধরে কর্মবিরতি চলছে আইনজীবীদের৷ আইনজীবী ইন্দ্রাণী চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘কোনও সভ্য দেশের মানুষ কাজ না করে বসে থাকেন না৷’
কলকাতা হাইকোর্টের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি চিত্ততোষ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘কর্মবিরতিতে লাভ নেই৷ সুপ্রিম কোর্ট চাইলে কেন্দ্রের উপর চাপ দিয়ে সমাধান করতে পারে৷কিন্তু বিচারপতিদের নিজেদের মধ্যে মতানৈক্য না মিটলে তা সম্ভব নয়৷সূত্র: এই সময়