আপিল বিভাগ আমাদের কোনো কথা না শুনেই জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়াকে হাইকোর্টের দেয়া জামিন রোববার পর্যন্ত স্থগিত করেছেন মন্তব্য করে আইনজীবী জয়নুল আবেদীন বলেছেন, আমাদের কোনো বক্তব্য তিনি শুনলেন না। কোনো রকম আইনগতভাবে এই মামলাটি মোকাবেলা করার জন্য ন্যূনতম সুযোগ আমাদের দিলেন না। না দিয়ে স্টে অর্ডার পাস করলেন।
আজ বুধবার (১৪ মার্চ) সকালে দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদকের করা সময়ের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে খালেদা জিয়ার জামিন স্থগিত করা হয়।
প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের আপিল বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আদেশের পর সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও খালেদা জিয়ার আইনজীবী জয়নুল আবেদীন বলেন, খালেদা জিয়ার জামিন আদেশ আপিল বিভাগ স্থগিত করেছেন। এই আদেশে আমরা ব্যথিত, দেশের মানুষও ব্যথিত ও মর্মাহত। বিচার বিভাগের কাছ থেকে এটি আশা করিনি। এ ধরনের লঘুদণ্ডে দেশের সর্বোচ্চ আদালত কখনও ইন্টারফেয়ার করেননি। চেম্বার আদালতে স্থগিত করেননি। কিন্ত আপিল বিভাগ স্থগিত করলেন।
সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি বলেন, আমরা ধারণা করেছিলাম, চিরাচরিতভাবে আপিল বিভাগ যেটি করেন, উভয়পক্ষের বক্তব্য শুনেন, তার পর আদেশ দেন। আজকের বিষয়টি হল- আপিলটি দুদকের আইনজীবী প্রেস করার সঙ্গে সঙ্গে বললেন যে আগামী রোববার সিপি ফাইল করেন, জামিন আগামী রোববার পর্যন্ত স্থগিত থাকবে।
৬ আইনজীবী বলেন, আমরা প্রধান বিচারপতিকে বলেছি যে, মাননীয় আদালত আমাদের কথা না শুনে কোনো অর্ডার পাস ইতিপূর্বে আমরা কখনও দেখিনি। এতে করে পাবলিক পারসেপশন খারাপ প্রভাব ফেলবে। তিনি আমাদের কথা শুনলেন না। না শুনে বললেন- আগামী রোববার পর্যন্ত স্টে থাকবে। আগামী রোববার সিপি (লিভ টু আপিল) ফাইল করা হবে।
জয়নুল আবেদীন বলেন, আমি একটি কথা বলতে চেয়েছিলাম আদালতকে, আপনি যদি স্টে নাও দেন, তা হলেও খালেদা জিয়া কারাগার থেকে বের হতে পারছেন না। সরকার তাকে বের হতে দেবেন না। ইতিমধ্যে তারা বিভিন্ন মামলায় গ্রেফতারের পরিকল্পনা করে রেখেছে। এ অবস্থার মধ্যে যদি আপনারা স্টে দেন তা হলে পাবলিক পারসেপশনে বিরূপ প্রভাব ফেলবে। তার পরও আদালত আমাদের কথা শুনলেন না।
তিনি বলেন, আমরা আপনাদের মাধ্যমে দেশবাসীকে জানাতে চাই যে, বিচার বিভাগ আমাদের বক্তব্য না শুনে দেশের সর্বোচ্চ আদালত এ ধরনের আদেশ দিয়েছে। এই আদেশে আমরা ব্যথিত, এই আদালতের আদেশের বিষয়ে কি ভাষায় আপনাদের কাছে বর্ণনা করব। আমরা বর্ণনা করতে পারছি না।
এ সময় সিনিয়র আইনজীবী গিয়াস উদ্দীন বলেন, বিচারপতি মোরশেদের সময় থেকে আজ পর্যন্ত এ রকম কোনো নজির ছিল না। বিচারপতি মোরশেদের সময় থেকে আমি এই আদালতে আছি। তার সময় থেকে আমি শিখতে শিখতে এসেছি। কোনো বিচারপতির সময় এ ধরনের নজির নেই। এটি নজিরবিহীন আদেশ।
সোমবার জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় হাইকোর্ট খালেদা জিয়াকে চার মাসের জামিন মঞ্জুর করেন।
এর পর মঙ্গলবার এ জামিন আদেশ স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্র ও দুদক চেম্বার জজ আদালতে পৃথক দুটি আবেদন করেন।
শুনানি শেষে চেম্বার বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী কোনো আদেশ না দিয়ে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে পাঠিয়ে দেন।
গত ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়াসহ ছয় আসামিকে দোষী সাব্যস্ত করে ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫ রায় দেন।
আদালত খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেন। রায়ের দিন থেকে নাজিমউদ্দিন রোডের পুরাতন কারাগারে বন্দি রয়েছেন বিএনপি নেত্রী।