মা-বাবার সদ্য বিচ্ছেদ হয়েছে। অবুঝ সন্তান তো আর তা বোঝে না। বায়না ধরেছে, বাবাকে দেখতে যাবে। উপেক্ষা করতে পারেননি মা মাহফুজা খাতুন। তাঁর সাবেক স্বামীর বাড়িতে যাওয়ামাত্র বাধে বিপত্তি। গাছে বেঁধে নির্মমভাবে পেটানো হয়েছে এই নারীকে।
সাতক্ষীরার কালীগঞ্জে গত শনিবার এ ঘটনা ঘটেছে। মাহফুজার সাবেক স্বামী অহিদুল্লাহ গাজীসহ (৪৭) সাতজনের নামে মামলা হয়েছে। অহিদুল্লাহর বোন মাসুমা ও ছোট ভাইয়ের স্ত্রী মর্জিনা গ্রেপ্তার হয়েছেন।
নির্যাতনের কথা সরাসরি অস্বীকার করেননি বর্তমানে পলাতক অহিদুল্লাহ। মামলার এই প্রধান আসামি মুঠোফোনে গণমাধ্যমকে বলেন, মাহফুজা শনিবার বেলা ১১টার দিকে হঠাৎ তাঁর বাড়িতে আসেন। একটি ঘরে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দিয়ে জিনিসপত্র ভাঙতে থাকেন। একপর্যায়ে দরজা ভেঙে তাঁকে বের করা হয়। বাড়ির উঠানে একটি সফেদাগাছের সঙ্গে বেঁধে রাখা হয়। এ সময় প্রতিবেশীরা মাহফুজাকে দুই-চারটা চড় মারতে পারে। ঘটনার সময় অহিদুল্লাহ বাড়িতে ছিলেন না বলে দাবি করেন।
ঘটনার শিকার মাহফুজার (৩০) বাবার বাড়ি শ্যামনগর উপজেলার হাজীপুর গ্রামে। আর অহিদুল্লাহ গাজীর বাড়ি কালীগঞ্জ উপজেলার আড়ংগাছা গ্রামে। এই গ্রামেই শনিবারের ঘটনাটি ঘটে।
পারিবারিক সূত্র বলছে, মাহফুজার সঙ্গে অহিদুল্লাহ গাজীর বিয়ে হয় এক যুগের বেশি সময় আগে। এ দম্পতির দুটি মেয়েসন্তান রয়েছে। বড় মেয়ে তাপশিয়ার বয়স ১২। আট বছরের তন্নী ছোট। তবে গত প্রায় দুই বছর মাহফুজা ও অহিদুল্লাহর সংসারে অশান্তি চলছিল। দুই মাস আগে তাঁদের বিচ্ছেদ হয়। কিন্তু একটি তালাকনামা দিয়েই দায় সারেন অহিদুল্লাহ। দেনমোহরের টাকা দেননি। ছোট মেয়ে তন্নী শনিবার বাবাকে দেখতে যাওয়ার বায়না ধরে। মাহফুজা ওই দিন সকালে দুই সন্তানকে নিয়ে অহিদুল্লাহর বাড়িতে যান। তাদের দেখে ক্ষুব্ধ হন অহিদুল্লাহসহ বাড়ির লোকজন। মারতে উদ্যত হন। মাহফুজা দুই সন্তানকে নিয়ে অহিদুল্লাহর ঘরে ঢুকে পড়েন। ভেতর থেকে দরজা আটকে দিয়ে নিজেকে রক্ষার চেষ্টা করেন। কিন্তু বাড়ির লোকজন দরজা ভেঙে মাহফুজাকে বের করে আনে। উঠানের একটি গাছে বেঁধে ফেলা হয়। একপর্যায়ে অহিদুল্লাহ গাজী, তাঁর বোন মাসুমা, তাঁর স্বামী জোমাত আলী, ছোট ভাই আবদুল মুজিদ, তাঁর স্ত্রী মর্জিনা এবং অপর ভাই মহিবুল্লাহ মিলে ব্যাপক মারধর করেন।
নির্যাতনের শিকার মাহফুজার ভাই বাবলুর রহমান বলেন, মাহফুজাকে লোহার রড ও তালগাছের ডগা দিয়ে বেধড়ক পেটানো হয়। স্থানীয় লোকজনের মাধ্যমে তাঁরা খবর পান। এরপর পুলিশের সহায়তা নিয়ে ঘটনাস্থলে যান। মুমূর্ষু অবস্থায় মাহফুজাকে উদ্ধার করা হয়। তাঁকে কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি করেন তাঁরা। বর্তমানে এই হাসপাতালেই চিকিৎসাধীন।
হাসপাতালের চিকিৎসক শারমিন আক্তার বলেন, শনিবার বেলা তিনটার দিকে মাহফুজাকে হাসপাতালে আনা হয়। তাঁর হাতে ও গলায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। বুকে ব্যথা অনুভব করছিলেন মাহফুজা।
এদিকে অভিযোগ উঠেছে, রতনপুর ইউনিয়নের স্থানীয় ইউপি সদস্য মাসুমবিল্লাহ এ ঘটনায় অহিদুল্লাহ গাজীকে মদদ দিচ্ছেন। তবে স্থানীয় প্রভাবশালী লোকজনের চাপে মামলায় তাঁর নাম দিতে পারেনি মাহফুজার পরিবার।
তবে ইউপি সদস্য মাসুমবিল্লাহ বলেন, অহিদুল্লাহর সংসারে দুই বছর ধরে অশান্তি চলছিল। এর আগে একবার তাঁদের ছাড়াছাড়ি হয়। স্থানীয় লোকজনের সালিসে তাঁরা আবার একত্রে সংসার শুরু করেন। কিন্তু সম্প্রতি অহিদুল্লাহ আবার স্ত্রীকে নির্যাতন শুরু করেন। বিষয়টি থানা-পুলিশ পর্যন্ত গড়িয়েছিল। অহিদুল্লাহকে থানায় উপস্থিত হতে বলা হয়। কিন্তু তিনি তা অগ্রাহ্য করেন। মাহফুজার ওপর যারা বর্বরতা চালিয়েছে, তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি হওয়া উচিত বলে মনে করেন মাসুমবিল্লাহ।
নির্যাতনের শিকার মাহফুজার আরেক ভাই লাভলু রহমান শনিবার রাতে কালীগঞ্জ থানায় মামলা করেন। এতে সাতজনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। অজ্ঞাতনামা আসামি আরও সাত-আটজন। তবে আসামিরা সবাই গা ঢাকা দিয়েছেন।
কালীগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) লিয়াকত আলী বলেন, অহিদুল্লাহসহ বাড়ির লোকজন পালিয়ে গেছেন। তবে আসামিরা পালিয়ে বাঁচতে পারবেন না। দ্রুত তাঁদের গ্রেপ্তার করা হবে।