দিল্লিতে দফায় দফায় আলোচনা, কলকাতায় আইনজীবীদের মধ্যে কয়েক প্রস্ত বৈঠকেও কলকাতা হাইকোর্টের অচলাবস্থা কাটল না। বরং তা দীর্ঘায়িত হচ্ছে। ফলে সমস্যা কাটল না। সাধারণ প্রচুর বিচারপ্রার্থী আদালতে এসে ফিরে গেলেন হতাশ হয়ে।
বিচারপতি নিয়োগের দাবি না-মেটায় হাইকোর্টের আইনজীবী সংগঠন সোমবার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, আপাতত ২ এপ্রিল পর্যন্ত কর্মবিরতি চালিয়ে যাওয়া হবে।
হাইকোর্টে বিচারপতি-পদ পূরণের দাবিতে আইনজীবীরা ১৯ ফেব্রুয়ারি থেকে কাজ বন্ধ রেখেছেন। দিল্লিতে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি এবং কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনার পরে রবিবার কৌঁসুলিদের একাংশ আশা করছিলেন, সোমবার কর্মবিরতি তুলে নেওয়া হবে। কিন্তু এ দিন তিন আন্দোলনকারী সংগঠনের বৈঠকে সমস্যার সুরাহা হয়নি।
বার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক অমলকুমার মুখোপাধ্যায় জানান, তাঁদের সংগঠনের অধিকাংশ সদস্য সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, ২ এপ্রিল পর্যন্ত কাজ বন্ধ রাখা হবে। তারও পরে কর্মবিরতি চালানো হবে কি না, সেই বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে ৩ এপ্রিল।
কৌঁসুলি শিবিরের খবর, সুপ্রিম কোর্ট এবং কেন্দ্রীয় আইন মন্ত্রকের কাছ থেকে পর্যাপ্ত সংখ্যক বিচারপতি নিয়োগের আশ্বাস মেলেনি। বার অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য অরুণাভ ঘোষ এ দিনের বৈঠকে বলেন, ক’দিনের মধ্যে ক’টি পদে বিচারপতি নিয়োগ করা হবে, এই ন্যূনতম আশ্বাসটুকু পাওয়া জরুরি। সেই আশ্বাস পেলে কর্মবিরতি প্রত্যাহার করে নেওয়া হবে। অনেক সদস্যই তাঁকে সমর্থন করেন।
বিচারপতি নিয়োগ নিয়ে এ দিনই রাজ্যসভায় কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদের সঙ্গে আলোচনা করেন কংগ্রেস সাংসদ প্রদীপ ভট্টাচার্য, তৃণমূলের সুখেন্দুশেখর রায় এবং তৃণমূল থেকে ‘সাসপেন্ড’ হওয়া সাংসদ কুণাল ঘোষ ও আইনজীবী অয়ন চক্রবর্তী। রবিশঙ্কর তাঁদের বলেন, বিচারপতি নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে, কলেজিয়াম বিষয়টি দেখছে। কুণালবাবু পরে জানান, আইনমন্ত্রী বলেছেন, আরও চার বিচারপতি সম্পর্কে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা রিপোর্ট তৈরি করছেন। সেই রিপোর্টের উপরে তাঁদের নিযুক্তি নির্ভর করছে।
আদালত সূত্রের খবর, শনিবার কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রীর সঙ্গে হাইকোর্টের আইনজীবীদের আলোচনা হয়। রবিশঙ্কর জানান, কেন্দ্র চায়, বিচারপতি নিয়োগে কিছু বিশেষ বিবেচনা থাকুক। পারিবারিক যোগাযোগ ছাড়াই যাঁরা নতুন আইনজগতে আসছেন, সুযোগ বাড়ুক তাঁদের। সংখ্যালঘু, দলিত, অনগ্রসর সমাজ থেকে উঠে আসা আইনজীবীরা আরও বেশি সুযোগ পান।
বিচারপতিদের দাবি, কলকাতা হাই কোর্টে ৭২ জন বিচারপতি থাকার কথা। সেখানে ছিল মাত্র ২৭ জন। সম্প্রতি আরও তিনজন নিয়োগ করা হয়েছে। অর্থাৎ ৩০ জন। কিন্তু বাকি পদ এখনও শূন্য। তা পূরণের দাবি তুলেই এই কর্মবিরতি। তাঁদের আরও দাবি, কয়েক লক্ষ মামলা ঝুলে রয়েছে। হাতে গোনা কয়েকজন বিচারপতির পক্ষে তা সামাল দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। আদালতের অচলাবস্থা নিয়ে ইতিমধ্যেই দেশের প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্র এবং কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন হাইকোর্টের আইনজীবীদের প্রতিনিধিরা। তাতেও অবশ্য কমর্বিরতি ওঠেনি। আর এই কর্মবিরতির ফলে সমস্যায় পড়ছেন অসংখ্য সাধারণ মানুষ।
এদিকে আইনজীবীদের সিদ্ধান্ত সমস্যা বাড়াচ্ছে মামলাকারীদের। মামলার দিন পিছিয়েই যাচ্ছে। তাঁরা এসে ফিরে যাচ্ছেন। শহরতলি এবং গ্রাম থেকেও প্রচুর মানুষ আসেন রোজ। তাঁরা সমস্যায় পড়ছেন। হাই কোর্ট খুলতে পারে এই আশা নিয়ে এদিন অনেকেই এসেছিলেন আদালত চত্বরে। কিন্তু বেলায় খবর পেয়ে তাঁরা হতাশ হয়ে ফিরে যান।
বিচারপ্রার্থীদের দাবি, কাজ বন্ধ থাকায় তাঁদের যে-ভাবে নাকাল হতে হচ্ছে, তার অবসান ঘটুক। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্রের বক্তব্য, দীর্ঘদিন হাইকোর্ট বন্ধ থাকায় মানুষের বিচার পাওয়ার অধিকার এবং গণতান্ত্রিক কাঠামো সঙ্কটে পড়েছে। ‘‘শূন্য পদে বিচারপতি নিয়োগ প্রক্রিয়ায় ধারাবাহিকতা থাকলে এমন সমস্যা তৈরি হত না। অবিলম্বে নিয়োগের দাবি জানাচ্ছি,’’ বলেন সূর্যবাবু।