চট্টগ্রামে হাইকোর্টের সার্কিট বেঞ্চ স্থাপনের আহ্বান জানিয়েছে জেলা আইনজীবী সমিতি।
সংবাদ মাধ্যমে পাঠানো জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি শেখ ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী এবং সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন চৌধুরীর এক যুক্ত বিবৃতিতে উল্লেখ করেন- চট্টগ্রামের গুরুত্ব দিক বিবেচনা করে ইতিপূর্বে সংবিধানের অনুচ্ছেদের আলোকে মহামান্য সুপ্রীম কোর্টেও হাইকোর্ট বিভাগের বেঞ্চ চলামান ছিল। পরবর্তীতে সার্কিট বেঞ্চ ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হয়। দীর্ঘদিন থেকে চট্টগ্রামের বিচারপ্রার্থী জনগোষ্ঠী পুনরায় হাইকোর্ট বেঞ্চ স্থাপনের দাবী করে আসছে। তার আলোকে এই দাবির সাথে সাংবাদিক, শিক্ষক, বুদ্দিজীবী, প্রকোশলী, শ্রমজীবীসহ সর্বমহল ঐক্যবদ্ধ হয়ে সরকারের প্রতি আহবান জানিয়েছিলেন। এই দাবি এখনো অব্যাহত আছে। সার্কিট বেঞ্চ স্থাপনের দাবির প্রতি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সম্মতি আছে বলে আমরা জানি। মহামান্য সুপ্রীম কোর্টসহ সরকারের উচ্চ পর্যায়েও একমত থাকার পরও অজ্ঞাত কারণে আজ পর্যন্ত চট্টগ্রামে সার্কিট বেঞ্চ স্থাপন করা হয়নি।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, চট্টগ্রাম বাংলাদেশের ২য় বৃহত্তম নগরী। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এই চট্টগ্রামকে বাণিজ্যিক রাজধানী ঘোষণা করেছেন এবং সেই আলোকে চট্টগ্রামের বিভিন্ন উন্নয়নের দায়িত্ব মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এবং তাঁর সরকার নিয়েছেন এবং বাস্তবায়ন করেছেন। বৃহত্তর চট্টগ্রামের বিচারপ্রার্থী জনগোষ্ঠীর প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির প্রতিনিধি হিসেবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমাদের আকুল আবেদন অতিদ্রুত চট্টগ্রামে মহামান্য সুপ্রীম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের সার্কিট বেঞ্চ স্থাপন করার সকল প্রকার ব্যবস্থাপনা ও সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দিয়ে আমাদেরকে উপকৃত করবেন, সার্কিট বেঞ্চ বাস্তবায়ন হলে চট্টগ্রামের মানুষ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে চিরকৃতজ্ঞ থাকবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ভিশন ২০২০ বাস্তবায়নের পথ প্রশস্ত হবে। ইতিমধ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে দেশ উন্নয়নশীল রাষ্ট্র হিসেবে জাতিসংঘে স্বীকৃতি পেয়েছে। আমরা আশা করব মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তার পরীক্ষিত নেতৃত্বেও মধ্য দিয়ে দেশকে যেভাবে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন চট্টগ্রামে সার্কিট বেঞ্চ বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে তা আরও একধাপ এগিয়ে নিয়ে যাবে।
১৯৭২ সালে সংবিধান প্রনয়নের সময় আর্টিকেল ১০০ সংযোজন করার একটাই উদ্দেশ্য ছিল, যেন রাষ্ট্র বিচারকে যথাসম্ভব জনগণের দ্বোরগোড়ায় নিয়ে যায়। যুদ্ধবিধ্বস্থ একটি দেশে সার্কিট বেঞ্চের বিধান করার অর্থ ঠিক, জনগণের সুখ দু:খ ও ন্যায় বিচারে সঙ্গী হবে।
১৯৮২ সালে ৪ঠা জুন সাময়িক ফরমান বলে ঢাকা, কুমিল্লা, যশোর এবং রংপুরে হাইকোর্টের ৪টি স্থায়ীবেঞ্চ এবং তৎপরবর্তী আরো ৩টি নোটিফিকেশন বলে সিলেট, বরিশাল এবং চট্টগ্রামে হাইকোর্টের আরো ৩টি স্থায়ী বেঞ্চ চালু করা হয়। যেহেতু ৭২ এর সংবিধানে আর্টিকেল ১০০ অনুযায়ী ঢাকা ব্যতীত অন্যত্র স্থায়ী বেঞ্চ স্থাপনের সুযোগ ছিল না সেহেতু আইনী জটিলতা এড়ানোর জন্য ১৭জুন ১৯৮৬ইং তারিখে নতুনভাবে সাময়িক ফরমানে ৪অ সংযোজন করে ঢাকার বাইরের ৬টি স্থায়ী বেঞ্চকে সার্কিট বেঞ্চের মর্যাদা দেয়া হয়। এর প্রেক্ষাপটে ৪জুন ১৯৮৮ইং তারিখে সংবিধানের ৮ম সংশোধনীর মাধ্যমে আর্টিকেল ১০০ সংশোধন করে সার্কিট বেঞ্চগুলোকে স্থায়ী বেঞ্চের মর্যাদা দেয়া হয়। ১৯৭২ এর সংবিধানের ১০০ পুনরুজ্জীবীত করেন। ব্যাখার সংশ্লিষ্ট অংশ নিন্মরূপ “ The imagined amendment will go off the constitution and the old article 100 will stand received with its provision for holding of sessions- sessions means holding of court in full” 41DLR(AD) 177.
মহানগরী ঢাকায় এমনিতে চলাচল, থাকা, খাওয়া এক বিশাল সমস্যার বিষয়। সুদূর টেকনাফ বা বাঘাইছড়ি থেকে একজন ভুক্তভোগী বিচারপ্রার্থী ঢাকায় আসা যাওয়ার একটা ফলাফল দাঁড়ায় যে শেষতক লোকটি আখেরে সর্বশান্ত ও কপর্দকশূন্য হয়। এই ভয়াবহ মানবিক বিষয়টি থেকে চট্টগ্রামবাসীকে বাঁচাতে পারে চট্টগ্রামে হাইকোর্টের সার্কিট বেঞ্চ স্থাপন।
বর্হিবিশ্বে তাকালে দেখা যায়, অষ্টেলিয়ার জনসংখ্যা ২.৩০কোটি, সেখানে সার্কিট বেঞ্চ চালু আছে। ভারতে ২৪টি হাইকোর্ট থাকার পরও সার্কিট বেঞ্চ ৬টি, শ্রীলঙ্কায় সার্কিট বেঞ্চ চালু আছে। পাকিস্তানে ৪টি স্থায়ী হাইকোর্ট থাকার পরও দেরা একাটাবাদ ও বান্নুতে সার্কিট বেঞ্চ বসে। ৬টি স্থায়ী হাইকোর্ট থাকার পরও নিউজিল্যান্ডে ১৪টি সার্কিট বেঞ্চ আছে।
এককথায় আধুনিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় সার্কিট বেঞ্চ একটি জনপ্রিয় বিচারিক ধারনা। এটি ন্যায় বিচারেরও প্রতীক। সাংবিধানিকভাবে এই ন্যায় বিচারটির চুড়ান্ত অনুমোদনের মালিক মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। আমরা চট্টগ্রামবাসী এই মুর্হূত থেকে ক্ষণ গনণায় থাকবো তাঁরা কখন চট্টগ্রামে সার্কিট বেঞ্চ দেন। অত:পর র্দীঘ ২৮ বছরের বঞ্চনা ভুলে আমরা উল্লেসিত হবো, আত্মহারা হবো। সংবাদ বিজ্ঞপ্তি