ফরিদপুরের বাসিন্দা মনোয়ারা বেগম। বিয়ের পরপরই স্বামীর সঙ্গে ডিভোর্স হয়ে যায়। ঠাঁই হয় বাবার ঘরে। প্রতিবেশীর বাড়িতে, অন্যের জমিতে কাজ করে দু’মুঠো খাবার জোগাড় করেন। তবুও শান্তি নেই তার। প্রতিনিয়ত নানান কথা শুনতে হয় পরিবারের সদস্যদের। কিন্তু বাবার সম্পত্তিতে সমান অধিকার থাকলে হয়তো তাকে এ পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হতো না। অন্তত মাথা গোঁজার ঠাঁইটুকু তো পেতেন!
ক্ষোভ-আক্ষেপে কণ্ঠ জড়িয়ে আসে মনোয়ারা বেগমের। জড়ানো কণ্ঠে জানতে চান তার মতো নারীদের জন্য সরকারের যেসব প্রকল্প রয়েছে সেইসব প্রকল্পের সুবিধাও কেন তিনি পাবেন না?
গতকাল শনিবার (২৪ মার্চ) রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ‘উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় নারীর ভূমিকা : ভূমি অধিকার, কৃষিতে স্বীকৃতি ও করণীয়’ শীর্ষক এক গোলটেবিল আলোচনায় অংশ নেন মনোয়ারা বেগম। সেখানে মুক্ত আলোচনায় অংশ নিয়ে নিজের এ কষ্টের কথা তুলে ধরেন তিনি।
আন্তর্জাতিক নারী দিবস-২০১৮ উপলক্ষে এসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম অ্যান্ড ডেভলেপমেন্ট (এএলআরডি) আয়োজন করে এ গোলটেবিলের।
এএলআরডির চেয়ারপারসন ও বেসরকারী সংস্থা নিজেরা করি’র সমন্বয়ক খুশী কবিরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্যানেল আলোচক হিসেবে অংশ নেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সদস্য অধ্যাপক বাঞ্ছিতা চাকমা, পার্বত্য চট্টগ্রামের রাঙামাটির চাকমা সার্কেলের রাণী য়েন য়েন, সমকালের উপ-সম্পাদক আবু সাঈদ খান, বাংলাদেশ নারী সাংবাদিক কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক পারভীন সুলতানা ঝুমা এবং এএলআরডি’র নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন এএলআরডির উপ-নির্বাহী পরিচালক রওশন জাহান মনি।
বৈঠকে অধ্যাপক বাঞ্ছিতা চাকমা বলেন, ‘উত্তরাধিকার সম্পত্তি থেকে নারীরা বঞ্চিত হচ্ছেন। কৃষি ও কৃষি পণ্য উৎপাদনে নারীদের অবদান অনেক বেশী। কিন্তু সেখানেও নারীদেরকে সেই পরিমানে মূল্য বা স্বীকৃতি দেওয়া হয় না।’
আবু সাঈদ খান বলেন, ‘কৃষি, শিল্প, গার্মেন্টস ও প্রবাসি শ্রমিক হিসেবে নারীর অবদান উল্লেখযোগ্য। অথচ সমাজে রাষ্ট্রে নারীর অবদানের মূল্যায়নের ক্ষেত্রে সংকীর্ণতা রয়েছে। নারী প্রতিনিয়ত তার ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। নারীর অধিকার নিশ্চিত করার জন্য শুধু আলোচনা- বৈঠক যথেষ্ট নয়; এর জন্য সংগ্রাম করতে হবে। তবে এই সংগ্রাম শুধু নারীর না। এটা নারী-পুরুষ সবার সংগ্রাম।’
চাকমা রাণী য়েন য়েন বলেন, ‘আদিবাসীদের বাদ দিয়ে স্থায়ীত্বশীল উন্নয়ন সম্ভব নয়। সমতল ও পাহাড়ের নারীদের কৃষিতে অবদানের স্বীকৃতি দিতে হবে। পাশাপাশি ব্যক্তিগত মালিকানা ও সমষ্টিগত সম্পত্তির অধিকার নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি।’
নারীর সম্পত্তির অধিকার বিষয়ে আরো বেশী বেশী করে আলোচনায় আনার পক্ষে মত প্রকাশ করেন পারভীন সুলতানা ঝুমা।
শামসুল হুদা বলেন, ‘সম্পদে অধিকার নারীর মানবাধিকার। এ অধিকার নিশ্চিত করণে যেসব প্রতিবন্ধকতা রয়েছে তা চিহ্নিত করে দূর করতে হবে। একই সঙ্গে নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য রাষ্ট্রকে দায়িত্ব নিতে হবে।’
মূল প্রবন্ধে রওশন জাহান মনি বাংলাদেশের অর্থনীতির মূলধারার কর্মক্ষেত্রগুলোতে নারীর অবদান তুলে ধরেন। এসময় তিনি প্রস্তাবিত সার্বজনীন পারিবারিক আইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে। খাসজমি নীতিমালায় বৈষম্যের জায়গাটি তুলে দিয়ে এটিকে আইনে পরিণত করা এবং ন্যায্যতার ভিত্তিতে তার বণ্টন নিশ্চিত করা; কৃষিনীতিমালা সংশোধন করে নারী কৃষকের সুস্পষ্ট সংজ্ঞায়নের মাধ্যমে স্বীকৃতি প্রদান এবং সরকারি সেবাসমূহে নারীর অর্ন্তভূক্তি এবং প্রাপ্তি নিশ্চিত করাসহ কয়েকটি প্রস্তাব তুলে ধরে তা বাস্তবায়নের দাবি জানান। সমকাল