ভবন ভাঙতে বারবার সময় চাওয়ায় বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রফতানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) আইনজীবীর উদ্দেশে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বলেছেন, ‘ইউ আর প্লেয়িং উইথ কোর্ট অর্ডার (আপনারা আদালতের আদেশ নিয়ে খেলছেন)। এটা সো আনফরচুনেট (এটা খুবই অপ্রত্যাশিত)।’
বিজিএমইএ ভবন ভাঙতে এক বছর সময় চেয়ে করা আবেদনের ওপর আজ মঙ্গলবার (২৭ মার্চ) প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন আপিল বেঞ্চে এ বিষয়ে শুনানি হয়।
আদালতে বিজিএমইএ’র পক্ষে শুনানি করেন সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী কামরুল হক সিদ্দিকী। সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী ইমতিয়াজ মইনুল ইসলাম। এছাড়া রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) পক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।
শুনানির শুরুতেই বিজিএমইএ’র আইনজীবী কামরুল হক সিদ্দিকীর উদ্দেশে আদালত বলেন, ‘আপনারা তো বারবার আসেন। আপনার নিজেরও তো বিষয়টি নিয়ে আদালতে দাঁড়াতে দ্বিধা হওয়ার কথা। আমাদের লজ্জা লাগে। আদালতের প্রেসটিজ (সম্মান) চলে যাবে আর আপনি আপনার ক্লায়েন্টের (মক্কেলদের) জন্য আসবেন, এটা হতে পারে না। আদালতের আদেশ পালন করা কি দরকার ছিল না? সময় কতবার নিয়েছেন, এরপর আবার বলবেন (সময় চাইতে), আবার আসবেন। বারবার আসতেই থাকবেন। এ পর্যন্ত কতবার সময় চেয়েছেন?’
জবাবে আইনজীবী কামরুল হক সিদ্দিকী বলেন, ‘এ পর্যন্ত তিনবার সময় চাওয়া হয়েছে।’ তখন আদালত বলেন, ওই সময়ের মধ্যে ভবন ভাঙতে এ পর্যন্ত কি কি পদক্ষেপ নিয়েছেন?’
উত্তরে কামরুল হক বলেন, ‘আমরা তো স্পেস খুঁজছি। কি পদক্ষেপ নিয়েছি সেটা আবেদনে আমরা উল্লেখ করেছি।’
আদালত বলেন, ‘যে স্টেপ নিয়েছেন তাতে তো মনে হচ্ছে পাঁচ বছর সময় লেগে যাবে। আবারও সময় চাইতে আসবেন।’
এ সময় কামরুল হক বলেন, ‘সমস্যায় পড়লে তো আদালতে আসতে হয়। ক্লায়েন্টের জন্যই তো আমাকে সময়ের আবেদন করতে হয়। এটা তো আমার প্রফেশনাল ডিউটি (পেশাগত দায়িত্ব)।’
তখন আদালত বলেন, ‘প্রফেশনাল ডিউটি সেকেন্ডারি। প্রথম হচ্ছে আদালতের ডিউটি। আপনারা (বিজিএমইএ) খুব বুদ্ধিমান। কারণ, একসঙ্গে কোথাও এত বড় স্পেস পাবেন না। আর তখন কোর্টে আসবেন সময়ের জন্য। এই বুদ্ধি নিয়েই তো থাকেন। বিজিএমইএ অফিস কত স্কয়ার ফিট?’ কামরুল হক বলেন, ৬০ হাজার স্কয়ার ফিট। আদালত বলেন, ‘৬০ হাজার স্কয়ার ফিটের ভবন পাবেন কোথাও? কোর্ট কি অর্ডার বাস্তবায়নের কথা বলে দেবে? কোর্ট শুধু আদেশ দেবে। আর আদেশ পালন না হলে কনটেম্পট (আদালত অবমাননার) রুল দেবে। আপনারা শেষ এক বছরে কী স্টেপ নিয়েছেন?’
জবাবে কামরুল হক বলেন, ‘১১০ কাঠা জমি আমরা পারচেস (ক্রয়) করেছি।’ তখন আদালত বলেন, ‘এভাবে তো পাঁচ বছর লাগবে। কারণ, এখনও বলছেন পাইলিং হচ্ছে। কদিন পর বলবেন বেজমেন্ট হচ্ছে।’ কামরুল হক বলেন, ‘না, মাই লর্ড, বেশি সময় লাগবে না।’
তখন আদালত বলেন, ‘তাহলে আপনাদের আন্ডারটেকিং (মুচলেকা) দিতে হবে যে আর সময় চাইবেন না। এরপর আমরা বিবেচনা করতে পারি।’
তখন কামরুল হক বলেন, তাহলে সময় দেন। আদালত বলেন, ‘তাহলে নট টু ডে (আজ আদেশ নয়) রাখলাম।’
এরপর আদালত অ্যাটর্নি জেনারেলের উদ্দেশে বলেন, কেন রাজউক এখন পর্যন্ত কোনও পদক্ষেপ নেয়নি?
জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘আমি এ বিষয়ে সরকার থেকে কোনও নির্দেশনা পাইনি। আগে পেয়েছিলাম, তখন রাজউকের পক্ষে দাঁড়িয়েছিলাম।’
তখন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ আদালতকে বলেন, ‘রাজউক আদালতের আদেশ পালনে প্রস্তুত আছে।’
এ সময় আদালত বলেন, ‘অনেক ভবন রাতারাতি ভাঙা হয়েছে। তাদের তো সময় দেওয়া হয়নি। গোলাপ শাহ মাজারের ওখানে সড়ক করা হয়েছে। তখন কি তাদের সরতে সময় দেওয়া হয়েছিল? এখানে সময় দেওয়া আনফেয়ার (অসৌজন্যমূলক)। এভাবে সময় দিলে আদালতের আর কোনও অর্ডার এক্সিকিউট (আদেশ কার্যকর) হবে না।’
প্রসঙ্গত, গত বছরের ৫ মার্চ আপিল বিভাগ বিজিএমইএ’র ভবন ভাঙতে রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে (রিভিউ) করা আবেদন খারিজ করে দেন। তখন ভবন ভাঙতে কত দিন সময় লাগবে, তা জানিয়ে আবেদন করতে নির্দেশ দিয়েছিলেন আদালত। পরে বিজিএমইএ কর্তৃপক্ষ ভবন সরাতে তিন বছর সময় চেয়ে আবেদন করেন।
ওই আবেদনের শুনানি নিয়ে ২০১৭ সালের ৮ এপ্রিল বিজিএমইএ ভবনটি ভাঙতে কর্তৃপক্ষকে সাত মাস সময় দিয়েছিলেন আপিল বিভাগ।
এরপরও বিজিএমইএ ফের আবেদন করায় গত বছরের ৩ ডিসেম্বর পুনরায় ছয় মাস সময় দেন আপিল বিভাগ।