‘উচ্চ আদালত অভিযুক্তকে অন্তর্বর্তীকালীন জামিন দিলেও তা নিয়মিত জামিনে রূপান্তরিত করার কোন সুযোগ নেই নিম্ন আদালতের। হাইকোর্ট যে যুক্তি বিবেচনায় নিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন জামিন দেয় সেই একই বিবেচনায় নিম্ন আদালত জামিন নিয়মিত করতে পারে না মর্মে পর্যবেক্ষণ দিয়েছে হাইকোর্ট।
বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি সহিদুল করিমের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ এই পর্যবেক্ষণ দেন।
দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) বনাম মো. হজরত আলী মামলায় দেয়া পর্যবেক্ষণে বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারক বিচারপতি ইনায়েতুর রহিম বলেন, অভিযুক্ত ব্যক্তিকে (হজরত আলী) জামিন অযোগ্য মামলায় নিয়মিত জামিন দিয়েছে ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ। এ ধরনের মামলায় জামিন মঞ্জুরের পূর্বে ফৌজদারি কার্যবিধির (সিআরপিসি) ৪৯৭ ও ৪৯৮ ধারায় জামিন দেওয়ার ক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনাসূমহ মেনে চলা উচিত ছিল। কারণ যে নীতি মেনে একজন অভিযুক্তকে অন্তর্বর্তীকালীন জামিন মঞ্জুর করা হয় নিয়মিত জামিন দেওয়ার ক্ষেত্রে তা সম্পূর্ণরূপে আলাদা।
পর্যবেক্ষণে আরো বলা হয়, এজাহারে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে। কিন্তু স্পেশাল জজ তার আদেশে উল্লেখ করেছেন যে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে এজাহারে কোন অভিযোগ নেই। জামিন মঞ্জুরের আদেশে বিচারকের এ ধরনের পর্যবেক্ষণে আমরা (হাইকোর্ট) কেবল বিস্মিতই হয়নি বরং তার বোঝার ক্ষমতা নিয়েও নানা প্রশ্ন উত্থাপিত হয়েছে। কারণ জামিন দেয়ার ক্ষেত্রে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে এজাহারে আনীত অভিযোগ পুরোপুরি প্রত্যাখান করা হয়েছে। এ ধরনের জামিন আদেশ নীতি পরিপন্থী ও স্বেচ্ছাচারী আচরণের শামিল। ফলে জামিন দেওয়ার ক্ষেত্রে একজন বিচারককে সবসময় সুবিবেচনাপূর্ণ মনোভাব ও বিচার বিভাগীয় রীতিনীতি মেনে চলতে হবে।
কৃষি ব্যাংকের কাওরানবাজার শাখা থেকে ঋণ জালিয়াতির মাধ্যমে ২৬০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে গত বছরের ৪ আগস্ট রাজধানীর তেজগাঁও থানায় মামলা করে দুদক। এই মামলায় ফেয়ার ইয়ার্ন প্রসেসিং লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) জসিম উদ্দিন, রোজবার্জ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের এমডি মো. হজরত আলীসহ ৭ জনকে আসামি করা হয়। আসামি হজরত আলী ওই বছরের ৭ আগস্ট আত্মসমর্পণ করে উচ্চ আদালত থেকে ছয় সপ্তাহের অন্তর্বর্তীকালীন জামিন নেন। এরপর গত ২৬ অক্টোবর ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। ওইদিনই আদালত তাকে নিয়মিত জামিন দেয়। এই আদেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিভিশন মামলা করে দুদক।
বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিমের নেতৃত্বাধীন ডিভিশন বেঞ্চ হজরত আলীর জামিন কেন বাতিল করা হবে না এই মর্মে রুল জারি করেন। ওই রুলের চূড়ান্ত শুনানি শেষে গত ৮ মার্চ হাইকোর্ট জামিন বাতিল করে হজরত আলীকে চার সপ্তাহের মধ্যে নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেয়। একইসঙ্গে অভিযুক্ত ব্যক্তি হাইকোর্টের আদেশ পালনে ব্যর্থ হলে তাকে গ্রেপ্তারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে সংশ্লিষ্ট আদালতকে বলা হয়েছে।
হাইকোর্ট বলেন, কৃষি ব্যাংক একটি জাতীয় ব্যাংক। এজাহারে যাদের নাম আছে তারা বিভিন্ন প্রতারণামূলক লেনদেনের মাধ্যমে এই ব্যাংক থেকে জনগণের অর্থ আত্মসাত করেছেন। আর জাল কাগজপত্র তৈরি করে এ ধরনের লেনদেন সম্পন্ন করা হয়েছে বলে এজাহারে অভিযোগ করা হয়েছে। ইত্তেফাক