দেশের সব সেক্টরের দুর্নীতি দমনে আপামোর জনগোষ্ঠী যদি সচেতন ও আন্তরিক না হন তাহলে, দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) একার পক্ষে দুর্নীতি বন্ধ করা সম্ভব নয়। এজন্য সবাইকে এ সামাজিকব্যাধির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ।
‘দুর্নীতি প্রতিরোধ সপ্তাহ-২০১৮’ উপলক্ষে আজ বুধবার (২৮ মার্চ) জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে এ মন্তব্য করেন তিনি। সাত দিনব্যাপী এ আয়োজনে বুধবার (আজ) তৃতীয় দিনে জনসচেতনতা বাড়াতে মানববন্ধন করে দুদক।
দুদক চেয়্যারম্যান বলেন, শিক্ষাখাতে যারা দুর্নীতি করবে তাদের কোনোরকম ছাড় দেওয়া হবে না। তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
দেশের দুর্নীতি কিছুটা কমলেও কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি বলেও মন্তব্য করেন ইকবাল মাহমুদ।
অর্থপাচারে যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার মতো বিশ্বাসযোগ্য তথ্য দুর্নীতি দমন কমিশনের কাছে রয়েছে বলে জানিয়েছেন সংস্থাটির চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ। দেশকে ‘উন্নয়নশীল দেশ’ হিসেবে গড়ে তুলতে হলে যেকোনো উপায়ে অর্থপাচার রোধ করতে হবে বলেও মনে করেন দুদক চেয়ারম্যান।
গত দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে বাংলাদেশ থেকে অর্থপাচার এক আলোচিত ঘটনা। কিন্তু এখন অবধি বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার প্রয়াত ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর পাচার করা ২১ কোটি টাকা ছাড়া কারও অর্থ ফিরিয়ে আনতে পারেনি বাংলাদেশ।
আবার সম্প্রতি বিশ্বজুড়ে তোলপাড় ফেলা পানামা এবং প্যারাডাইজ পেপারস কেলেঙ্কারিতেও নাম এসেছে বেশ কয়েকজন বাংলাদেশির। এদের মধ্যে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে বিএনপি নেতা আবদুল আউয়াল মিন্টু, তার ছেলে তাবিথ আউয়ালেরও নামও আছে। কিন্তু এই দুই কেলেঙ্কারিতে নাম আসা কারও বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি এখনও।
দুদক চেয়ারম্যান বলেন, ‘যারা দেশের টাকা বিদেশে পাচার করছেন, তাদের বিরুদ্ধে আমাদের শক্তিশালী অবস্থান থাকবে। যেকোনো উপায়ে থেকে অর্থপাচার রোধ করতে হবে আমাদের। চলতি বছর থেকেই অর্থ পাচারকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
‘তাদেরকে আমরা যে কোনোভাবে আইনের আওতায় এনে প্রতিরোধ করব।’
‘দুর্নীতি কমেছে’
দুদকের তৎপরতায় দেশে দুর্নীতির মাত্রা কিছুটা কমেছে বলেও দাবি করেন দুদক চেয়ারম্যান। তবে জনগণের সক্রিয়তা ছাড়া পুরোপুরি দুর্নীতি দমন করা সম্ভব নয় বলে মনে করছেন তিনি।
‘সকলের সমর্থন ছাড়া দুর্নীতি প্রতিরোধ সম্ভব না। তাই আমাদের সবাইকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ করতে হবে।’
দুর্নীতিবিরোধী আন্তর্জাতিক সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের সবশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী বিশ্বে সবচেয়ে বেশি দুর্নীতিগ্রস্থ দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান এখন ১৭। আগের বছর বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৫। সেই সঙ্গে এক বছরে বাংলাদেশের স্কোরও বেড়েছে দুই।
তবে বাংলাদেশে শিক্ষাসব নানা পরিষেবায় এখনও ব্যাপকমাত্রায় দুর্নীতি রয়েছে জানিয়ে এটি দূর করতে উদ্যোগ নেয়ার আশ্বাস দেন প্রধান। বলেন, ‘যে সকল শিক্ষকরা প্রশ্ন ফাঁসের সঙ্গে যুক্ত তাদের বিরুদ্ধে দুদক কঠোর অবস্থানে রয়েছে।’
‘প্রশ্ন ফাঁসের ব্যাপারে সরকার পদক্ষেপ নিচ্ছে। আমরা নজরদারিতে রেখেছি। ফাঁসকারীদের বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান অব্যাহত থাকবে। তাদেরকে বলে দেই, আপনাদের ক্ষমা নেই।’
যারা কোচিং বাণিজ্যে জড়িত তাদেরকে চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেয়ার হুঁশিয়ারিও দেন দুদক প্রধান।