আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক সচিব আবু সালেহ শেখ মোঃ জহিরুল হক বলেছেন, গণতন্ত্র ও আইনের শাসন ব্যতীত উন্নয়ন সম্ভব না। আইনের শাসন ও গণতন্ত্রকে সমন্বিত করে একটি দেশ একটু একটু করে এগিয়ে যায়।
আজ বৃহস্পতিবার (২৯ মার্চ) বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির আইন বিভাগ এবং ‘নেটওয়ার্ক ফর দ্যা ইন্টারন্যাশনাল ল’ স্টুডেন্টস্ (নিল্স)’ বাংলাদেশ যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত ‘আন্তর্জাতিক আইন বিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলন’- এ তিনি এ মন্তব্য করেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে আবু সালেহ শেখ মোঃ জহিরুল হক বলেন, আইনের শাসন, গণতন্ত্র ও উন্নয়ন এই তিনটি বিষয় একে অপরের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। আইনের শাসন না থাকলে গণতন্ত্র থাকবে না। আবার গণতন্ত্র ও আইনের শাসন ব্যতীত উন্নয়ন সম্ভব না। আর এই তিনটি বিষয়কে সমন্বিত করে একটি দেশ একটু একটু করে এগিয়ে যায়।
পৃথিবীতে মিলেমিশে থাকতে আন্তর্জাতিক আইনের গুরুত্ব তুলে ধরতে গিয়ে জহিরুল হক বলেন, পৃথিবী হচ্ছে গ্লোবাল ভিলেজ। এখানে প্রত্যেক দেশ অন্যদেশের আইনকে সম্মান দেখাতে হবে একইসঙ্গে তা মেনে চলতে হবে। দুই দেশের চুক্তির ক্ষেত্রে তার প্রতিফলন থাকতে হবে। উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, নদীতে বাঁধ দিয়ে পাশের দেশের ভাটি অঞ্চলে ক্ষরা সৃষ্টি করলে তো হবে না। এর মানে তো আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করলাম। জাতিসংঘে সদস্য হবার জন্যে তো অনেকগুলো বিষয়ে একমত হয়ে চুক্তি স্বাক্ষর করেছি সেগুলো মানা না হলে তো তা দুঃখজনক।
মানবাধিকার বিষয়ে বক্তব্য দিতে গিয়ে আন্তর্জাতিক বিবেকের সমালোচনা করে তিনি বলেন, রোহিঙ্গা নির্যাতন নিয়ে আন্তর্জাতিক মহল নিন্দা জানানো ব্যতীত কিছুই করছে না। তারা শুধু বলছে মিয়ানমার অন্যায় করছে, এটা করা ঠিক হয়নি। কিন্তু মিয়ানমারের এই অন্যায় বন্ধে চোখে পরার মত কোন পদক্ষেপ কেউ নেয়নি।
আত্মগোপনে থাকা বঙ্গবন্ধুর খুনিদের কানাডা ফিরিয়ে না দেওয়ায় দুঃখ করে আইন সচিব বলেন, দেশের সর্বোচ্চ আদালতে সকল প্রকার আইনি সুবিধা দিয়ে বিচার সম্পন্নের পরও বঙ্গবন্ধুর পলাতক খুনিদের ফাঁসি কার্যকর করা সম্ভব হয়নি। কারণ কানাডা সরকার তাদের ফিরিয়ে দিচ্ছে না। সে দেশ ফাঁসি সমর্থন করে না। অথচ ওরা আমাদের দেশের নাগরিক। বিচারকালীন সময়েও ওরা বাংলাদেশেই ছিল। কিন্তু কানাডা এখন নানা অজুহাতে জাতির পিতার এসব খুনিদের আশ্রয় দিয়ে রেখেছে।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে ভারতের সহযোগিতার কথা উল্লেখ করতে গিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা উড়ে আসেনি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের নেতৃত্বে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের বিনিময়ে আমাদের এই স্বাধীনতা এসেছে। এক্ষেত্রে ভারতের সহযোগিতা অনস্বীকার্য। বিশেষ করে ইন্দিরা গান্ধীর ভূমিকা ছিল মায়ের সমতুল্য। আমার মতে মুক্তিযুদ্ধের সময় ইন্দিরা গান্ধী বাংলাদেশকে যেভাবে সহযোগিতা করেছেন এজন্য তাকে মায়ের মত শ্রদ্ধা করা উচিৎ।
ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের নওশের আলী লেকচার গ্যালারীতে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে দেশ-বিদেশের ২৭টি বিশ্ববিদ্যালয়ের অংশগ্রহণে তিনদিন ব্যাপী এ সম্মেলন চলবে ৩১ মার্চ পর্যন্ত। বাংলাদেশ ছাড়া অংশগ্রহণকারী অন্যান্য দেশগুলো হচ্ছে- জার্মানি, ভারত, শ্রীলংকা ও নেপাল।
প্রতি বছরই ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগ আন্তর্জাতিক সম্মেলন আয়োজন করে থাকে। গত বছর এ সম্মেলনের বিষয় ছিল লিগ্যাল এডুকেশন। এরই ধারাবাহিকতায় এবারো আয়োজন করা হয়েছে। তবে এবারের বিষয় আন্তর্জাতিক আইন নির্ধারন করা হয়েছে।
মূলত জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, গবেষক এবং আইনজীবীদের আইন্তর্জাতিক আইনের বিভিন্ন দিক সম্পর্কে অভিজ্ঞতা ও গবেষণার ফলাফল নিয়ে মতবিনিময়ের উদ্দেশ্যে এ সম্মেলন আয়োজন করা হচ্ছে। সম্মেলনে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, গবেষক এবং আইনজীবীরা আন্তর্জাতিক আইনের ওপর সমসাময়িক বিষয়, প্রবণতা এবং চ্যালেঞ্জসমূহ উপস্থাপন করবেন এবং এসব সমস্যার সমাধান নিয়ে আলোচনা করবেন।
সম্মেলনের আহ্বায়ক ও ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের চেয়ারপার্সন অধ্যাপক তুরিন আফরোজ বলেন, আন্তর্জাতিক আইন বলতে শুধু আইন নয় এখানে আলোচনায় উঠে আসবে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, রাজনীতিসহ সংশ্লিষ্ট বৈশ্বিক নানা বিষয়াদি।
এবারের আয়োজনে মূল ৬টি বিষয়ের ওপর আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে জানিয়ে ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ আরও বলেন, আন্তর্জাতিক মানবিক আইন, উদ্বাস্তু, অভিবাসী ও স্বদেশহীন বিষয়ক আইন নিয়ে আলোচনা হবে। আলোচনায় উঠে আসবে রোহিঙ্গা ইস্যুও।
তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনসহ পরিবেশ আইন এবং ল’ অব দ্য সী নিয়েও আলোচনা হবে। এক্ষেত্রে আলোচনায় বাংলাদেশের সমুদ্র বিজয়ের বিষয় উঠে আসবে। এছাড়াও ইন্টারন্যাশনাল কর্মাশিয়াল ল’ নিয়ে আলোচনা হবে। যেখানে প্রাধান্য পাবে ট্রেড, ইন্টেলেকচ্যুয়াল প্রপার্টি রাইট, আর্বিট্রেশন ইত্যাদি।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান অনুষদের ডীন ড. ফৌজিয়া মান্নান। এদিন মুখ্য আলোচক হিসেবে বক্তব্য দেন ভারতের নয়া দিল্লীর জিজিএস ইন্দ্রপ্রসাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক অমর পাল সিং।
এছাড়া, সমাপনী অনুষ্ঠানে ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর ড. এম এম শহিদুল হাসানের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আব্দুল মান্নান এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন জার্মানির ওল্ডেনবার্গ ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ড. ক্যাথরিনা হফম্যান।
উল্লেখ্য, সম্মেলনে রেজিস্ট্রেশন সাপেক্ষে দেশের আইন শিক্ষার্থী ও আইনজীবীরাও অংশ নিতে পারবেন। এক্ষেত্রে কোনো রেজিস্ট্রেশন ফি লাগবে না।
সম্মেলনের মিডিয়া পার্টনার- সম্পূর্ণ আইন বিষয়ক দেশের প্রথম অনলাইন নিউজ পোর্টাল ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডট কম ও রেডিও ঢোল।