যুদ্ধাপরাধীদের মদদ দেওয়া ও ভুয়া জন্মদিন পালনের পৃথক দুই মামলায় বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জামিন শুনানির আগামী ২৫ এপ্রিল অনুষ্ঠিত হবে। ঢাকার পৃথক দুই মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এ শুনানি অনুষ্ঠিত হবে।
আজ রোববার (১৫ এপ্রিল) খালেদা জিয়ার পক্ষে জামিনের দরখাস্তকারী অ্যাডভোকেট মাসুদ আহমেদ তালুকদার বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করে বলেন, ম্যাজিস্ট্রেট আহসান হাবিব ও খুরশিদ আলমদের আদালতে ওইদিন মামলা দু’টির শুনানি হবে। দু’টি মামলায় ঢাকার আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে অনুষ্ঠিত হবে।
২০১৭ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর তেজগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি-তদন্ত) এবিএম মশিউর রহমান যুদ্ধাপরাধীদের মদদ দেওয়া সংক্রান্ত মামলায় প্রতিবেদন দাখিল করেন।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘২০০১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি জয়লাভ করলে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া মন্ত্রিপরিষদ গঠন করেন। ওই মন্ত্রিপরিষদে ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের যারা প্রকাশ্য ও আত্মস্বীকৃত পাকিস্তানের দোসর হিসেবে নিজেদের পরিচয় প্রতিষ্ঠা করেছিলেন- সেই জামায়াত, ছাত্রশিবির, আলবদর ও আলশামস সদস্যদের মন্ত্রী ও এমপি বানান। পরবর্তীতে ওই ব্যক্তিদের মধ্যে অনেকেই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে যুদ্ধাপরাধী হিসেবে মৃত্যুদণ্ডসহ বিভিন্ন দণ্ডে দণ্ডিত হয়েছেন’।
‘তাদের মধ্যে খালেদা জিয়ার সরকারের মন্ত্রিত্বপ্রাপ্ত মতিউর রহমান নিজামী ও আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছে। কিন্তু তারা ক্ষমতায় থাকাকালে মন্ত্রিত্বের সুবিধা নিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা তাদের বাড়ি-গাড়িতে ব্যবহার করেছেন’।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া স্বাধীনতাবিরোধী ব্যক্তিদের তার মন্ত্রিসভায় মন্ত্রিত্ব দিয়ে ৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত পতাকাকে ওই স্বাধীনতাবিরোধীদের গাড়িতে তুলে দিয়ে সত্যিকারের দেশপ্রেমিক জনগণের মর্যাদা ভুলুণ্ঠিত করেছেন। তাই তার বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৫০০ ধারার মানহানির অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে।
অন্যদিকে প্রচলিত আইনে মৃত ব্যক্তির বিচারের সুযোগ না থাকায় সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে অব্যাহতির দেওয়ার সুপারিশ করা হলো’।
২০১৬ সালের ০৩ নভেম্বর এবি সিদ্দিকী ‘স্বীকৃত স্বাধীনতাবিরোধীদের গাড়িতে জাতীয় পতাকা তুলে দিয়ে দেশের মানচিত্র ও জাতীয় পতাকার মানহানি ঘটানোর অভিযোগে ঢাকার সিএমএম আদালতে মানহানির মামলাটি দায়ের করেছিলেন।
মামলায় অভিযোগ করা হয়, ‘১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্ব-পরিবারে হত্যার পর মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান ০৭নভেম্বর সিপাহী বিপ্লবের মাধ্যমে সামরিক সরকারের দায়িত্ব দখল করে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে কলঙ্কিত করেছেন। ১৯৮১ সালের ১৭ মে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে ফিরে এলে তাকে হুমকি দিয়ে তার বাবার বাড়িতে প্রবেশ করতে দেননি। এছাড়া খালেদা জিয়া ২০০১ সালে ক্ষমতা গ্রহণ করে স্বাধীনতাবিরোধী আলবদর-রাজাকারদের হাতে মন্ত্রিত্ব তুলে দেন। যার মাধ্যমে স্বীকৃত স্বাধীনতাবিরোধীদের গাড়িতে জাতীয় পতাকা লাগিয়ে দেশের মানচিত্র ও জাতীয় পতাকার মানহানি ঘটিয়েছেন’।
আগস্ট ভুয়া জন্মদিন পালনের অভিযোগে ২০১৬ সালের ৩০ ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গাজী জহিরুল ইসলাম বাদী হয়ে ঢাকার সিএমএম আদালতে অপর মামলাটি দায়ের করেছিলেন।
বাদী মামলায় অভিযোগ করেন, খালেদা জিয়ার জন্মদিন নিয়ে ১৯৯৭ সালে ১৯ ও ২২ আগস্ট দুটি জাতীয় দৈনিকে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ওই প্রতিবেদনে মেট্রিক পরীক্ষার মার্কশিট অনুযায়ী খালেদা জিয়ার জন্ম তারিখ ৫ সেপ্টেম্বর ১৯৪৬ সাল, ১৯৯১ সালে প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে একটি দৈনিকে তার জীবনী নিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে ১৯ আগস্ট ১৯৪৫ সাল, বিয়ের কাবিননামায় ৪ আগস্ট ১৯৪৪ সাল ও ২০০১ সালে মেশিন রিডেবল পার্সপোর্ট অনুযায়ী তার জন্মদিন ৫ আগস্ট ১৯৪৬ সাল বলে উল্লেখ করা হয়।
মামলায় আরও বলা হয়, বিভিন্ন মাধ্যমে তার চারটি জন্মদিন পাওয়া গেলেও ১৫ আগস্ট খালেদা জিয়ার জন্মদিন মর্মে কোনো তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি। তিনি চারটি জন্মদিনের একটিও পালন না করে ১৯৯৬ সাল থেকে ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর শাহাদাত বার্ষিকী তথা জাতীয় শোক দিবসে ঘটা করে জন্মদিন পালন করছেন।